Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছট পুজোর আনন্দে মাতল রেলশহর

নানা ভাষা নানা মতের মানুষের ভিড় রেলশহর খড়্গপুরে। তাই উৎসবেরও অন্ত নেই এই শহরে। তাই বাঙালিদের দুর্গাপুজো, কালীপুজো মিটতেই খড়্গপুর মাতল ছট পুজোর অনুষ্ঠানে। এই শহরে শুধু বিহারী নয়, অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও এই উৎসবের ধুম চলছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে। দিন যত এগিয়েছে জাঁক বেড়েছে পুজোর। তাই প্রতি বছরের মতোই বুধবার বিকেল খড়্গপুরের বাসিন্দারা বিহারী সম্প্রদায়ের বার্ষিক সূর্য-উপাসনার দিনটিতে শোভাযাত্রা দেখতে ভিড় জমাল পথে-ঘাটে।

বুধবার খড়্গপুরের মন্দিরপুকুরে ছটপুজোর ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

বুধবার খড়্গপুরের মন্দিরপুকুরে ছটপুজোর ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচি
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৪
Share: Save:

নানা ভাষা নানা মতের মানুষের ভিড় রেলশহর খড়্গপুরে। তাই উৎসবেরও অন্ত নেই এই শহরে। তাই বাঙালিদের দুর্গাপুজো, কালীপুজো মিটতেই খড়্গপুর মাতল ছট পুজোর অনুষ্ঠানে। এই শহরে শুধু বিহারী নয়, অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও এই উৎসবের ধুম চলছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে। দিন যত এগিয়েছে জাঁক বেড়েছে পুজোর। তাই প্রতি বছরের মতোই বুধবার বিকেল খড়্গপুরের বাসিন্দারা বিহারী সম্প্রদায়ের বার্ষিক সূর্য-উপাসনার দিনটিতে শোভাযাত্রা দেখতে ভিড় জমাল পথে-ঘাটে। শহরের খরিদা মন্দিরপুকুরে বাঙালী ও অবাঙালীর মিশে একাকার হয়ে গেল সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়।

১৮৯৮ সালে রেলকারখানার পত্তনের পর থেকেই ভিন রাজ্যের বাসিন্দাদের কাজের সন্ধানে আসা যাওয়া বেড়েছে এই শহরে। এর মধ্যে একটা বড় অংশই বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষ। এছাড়াও রয়েছেন তেলুগু, তামিল, গুজরাতি-সহ বহু জাতির মানুষ। আর তাই বিহারী সম্প্রদায়ের এই পুজো ঘিরে শহরের খরিদা, মালঞ্চ, সুভাষপল্লি, আয়মা, নিমপুরা, ঝাপেটাপুর, গোলবাজার, ইন্দায় মেতেছেন নাগরিকরা। বাঙালির দুর্গাপুজোর মতোই নতুন বস্ত্রের কেনাকাটায় নতুন উৎসবের গন্ধ বয়ে এনেছে ছট পুজো পুজো। বস্তুত, সূর্য দেবের আরাধনাই ছট পুজো বলে পরিচিত। শুধু বিহারী নয়, বাঙালী, তেলুগু সম্প্রদায়ের অনেকেই এই পুজোর ব্রত করেন। পুজোয় মানতেরও প্রচলন রয়েছেন। রাস্তার শোভাযাত্রায় দন্ডি কেটে মানত পালন করতেও দেখা যায়। শহরের মন্দিরতলার বাসিন্দা মলয় রায় কথায়, “দুর্গাপুজোর ঘোর কাটতে না কাটতেই এসে গেল ছটপুজো। এটা যেন আমাদেরই উৎসব হয়ে গিয়েছে।”

একই নিয়মে সূর্য দেবতার উপাসনার জাঁকে ভাঁটা পড়েনি। প্রতিটি বিহারী পরিবারই আচার পালনে ঠেকুয়া তৈরিতে ব্যস্ত। দেবতার কাছে উৎসর্গ করার সুপা(কুলো) সেজেছে কলা, নারকেল, ঠেকুয়া-সহযোগে। মঙ্গলবার রাতেই প্রথম দফার উপাসনা সেরেছেন বাড়ির সদস্যরা। নিয়ম মেনেই উপোস করে শব্দহীন ঘরে পুজোর পরে রাতে বিতরণ হয়েছে প্রসাদ। এ দিন দুপুরের পর থেকেই পাড়ার অলিগলিতে বাড়ির সামনের রাস্তায় জল দিয়ে পরিষ্কার করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। শহরের ছোট পুকুর থেকে অদূরে কাঁসাই নদীর পার সর্বত্রই পুজো দিয়েছেন মানুষ। চলেছে আতসবাজি প্রদর্শনীর লড়াই।

শহরের মন্দিরপুকুরের সামনে সূর্য দেবতার মূর্তি বসিয়ে ছট্ পুজো প্রবন্ধক কমিটির পুজো সাত বছরে। দীর্ঘবছর ধরে তাঁরাই এই রূপেশ্বর মন্দির পুকুর সংস্কার থেকে আলোর ব্যবস্থা করে থাকেন। অন্যদিকে শহরের মন্দির তলার যাওয়ার পথে খরিদা রেলগেটের কাছে ইয়ং বয়েজ ক্লাব ছট্ পুজো কমিটির পুজোর জাঁক এবার একটু বেশিই। বাজারের ব্যবসায়ীদের থেকে আসা চাঁদা দিয়ে প্রতি বছর এই পুজো করেন তাঁরা। কমিটির কোষাধ্যক্ষ আদিত্য সাহু বলেন, “আমাদের পুজোয় বিকেল থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত পুজো চলে। পুজোর পরের দিনই বিসর্জন দিই। তাই সল্প সময়ের এই পুজো বড় করেই করছি।” শহরের মন্দিরতলা ঘাটে এ দিন বিকেলে প্রায় হাজার কুড়ি মানুষের জনসমাগম হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার ভোরেও সূর্যোদয়ের আগে ফের হবে ঘাটের আরাধনা। মন্দিরতলা ঘাটে পুজো দিতে যাওয়া খরিদার সঞ্জু ভকতের কথায়, “এই শহরে সকলের সঙ্গে ছট পুজো করা একটা উপরে পাওনা। এমন উদ্দীপনা চোখে না দেখলে কিছুই বোঝা যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debmalya bagchi kharagpur chhath puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE