Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গলমহলে রেলপথ নিয়ে কাটল না হতাশা

আরও একটি রেল বাজেট চলে গেল। অথচ দিশা পেল না রেলপথে জঙ্গলমহলকে সংযুক্ত করার বিষয়টি। প্রায় দু’দশক ধরে জঙ্গলমহলে প্রস্তাবিত রেলপথ নিয়ে টালবাহানা চলছে। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল এলাকায় নতুন রেলপথের স্বপক্ষেই এক সময় মত দিয়েছিল রেলমন্ত্রক। ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়ার একাংশ ছুঁয়ে পুরুলিয়ার টামনা পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার নতুন এই রেলপথের জন্য ২০০৮ সালের মে মাসে ইউপিএ সরকারের আমলে সমীক্ষা করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০১:১৭
Share: Save:

আরও একটি রেল বাজেট চলে গেল। অথচ দিশা পেল না রেলপথে জঙ্গলমহলকে সংযুক্ত করার বিষয়টি।

প্রায় দু’দশক ধরে জঙ্গলমহলে প্রস্তাবিত রেলপথ নিয়ে টালবাহানা চলছে। অথচ পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল এলাকায় নতুন রেলপথের স্বপক্ষেই এক সময় মত দিয়েছিল রেলমন্ত্রক। ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়ার একাংশ ছুঁয়ে পুরুলিয়ার টামনা পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার নতুন এই রেলপথের জন্য ২০০৮ সালের মে মাসে ইউপিএ সরকারের আমলে সমীক্ষা করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। রিপোর্টে প্রস্তাবিত এই রেলপথকে দশ শতাংশ লাভজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে রিপোর্ট যোজনা কমিশনে জমা দেয় রেলমন্ত্রক। প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫১৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন বলে জানানো হয়।

ওই সময় কেন্দ্রীয় যোজনা কমিশনের টাস্কফোর্সের রিপোর্টেও মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য জঙ্গলমহলে রেলপথ সম্প্রসারণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ২০০৯-২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া রেলপথ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। উল্টে লালগড়কে রেল মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন মমতা। সেই মতো ভাদুতলা থেকে লালগড় হয়ে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলপথের প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ হয়েছিল। ইউপিএ সরকার থেকে তৃণমূল বেরিয়ে যাওয়ার পরে লালগড়ে প্রস্তাবিত রেলপথের বিষয়টি কার্যত ঠান্ডাঘরে চলে যায়।

এ বারের রেল বাজেটে অবশ্য ভাদুতলা-লালগড়-ঝাড়গ্রাম রেলপথের জন্য ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া-কোটশিলার মধ্যে একটি প্রস্তাবিত রেলপথের সমীক্ষার জন্য ৪ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু ভাদুতলা-লালগড়-ঝাড়গ্রাম রেলপথে গোটা প্রকল্পের ব্যয় যেখানে ২৮৮ কোটি টাকা, সেখানে মাত্র ২০ লক্ষ টাকায় কতটা কাজ এগোবে, প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের আক্ষেপ, কুমিরছানা দেখানোর মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জঙ্গলমহলে নতুন নতুন রেলপথের আশ্বাস দেয়। কিন্ত কোনওটারই বাস্তবায়ন হয় না।

জঙ্গলমহলবাসীর একাংশের অভিযোগ, ২০১৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করেই এ বার রেল বাজেটে ভাদুতলা-লালগড় রেলপথের উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র ভাদুতলার সঙ্গে লালগড় ও ঝাড়গ্রামকে রেলপথে যুক্ত করলে কোনও লাভ হবে না বলে মনে করছেন জঙ্গলমহলের আমজনতা থেকে বিভিন্ন রেল যাত্রী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সকলেরই বক্তব্য, তিন জেলার জঙ্গলমহলকে রেলপথে যুক্ত করা হলে তবেই উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

রেলসূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া প্রস্তাবিত রেলপথের সমীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন। অথচ ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া রেলপথের উল্লেথ এ বারও রেল বাজেটে নেই। স্বভাবতউ হতাশ রেল যাত্রী সংগঠনগুলি। ‘ঝাড়গ্রাম রেল পরিষেবা সংগ্রাম কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক তপন চক্রবর্তীর অনুযোগ, “জঙ্গলমহলের মানুষকে পরিকল্পিত ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। কেন্দ্রের ক্ষমতায় যে সরকারই এসেছে, তারা রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গলমহলে খুচরো কিছু প্রকল্পের ঘোষণা করেন। যার কোনওটারই বাস্তবায়ন হয় না।”

‘অ্যাসোসিয়েশন ফর মেদিনীপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জারস্’-এর সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু পালের মতে, “শুধু ভাদুতলা-লালগড়কে রেলপথে যুক্ত করলে কোনও লাভ হবে না। বরং ওই রেলপথকে যদি ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া-বান্দোয়ান-পুরুলিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়, তাহলেই জঙ্গলমহলবাসীর লাভ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE