নতুন ইনকিউবেটর নিয়ে কাজ করছেন স্বনির্ভর দলের মহিলারা।
পথ দেখিয়েছিল ইউটিউবের ভিডিও। সেখানেই প্রাথমিক পরিচয় হয়েছিল হাঁস-মুরগির ডিম ফোটানোর কাজে ব্যবহৃত ‘ইনকিউবেটর’-এর সহজ সংস্করণের সঙ্গে। সেই মডেল দেখে উৎসাহিত হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইটি) ছাত্র সৌরভ মুখোপাধ্যায় আর বাণিজ্যের ছাত্র ডেভিড মণ্ডল কাঠের প্লাই, বোর্ড দিয়ে অনাড়ম্বর কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তৈরি করেছেন ‘অভিনব’ ইনকিউবেটর। পরীক্ষামূলক ভাবে তা পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের এক স্বনির্ভর দলকে দিয়ে, তা থেকে আশানুরূপ সাফল্য মিলেছে বলেও দাবি সৌরভ-ডেভিডের। নতুন যন্ত্রের কথা শুনে রাজ্য হাঁস ও মুরগি খামারের কর্তারা অবশ্য বলছেন, স্থানীয় ভাবে তৈরি ওই যন্ত্রে ডিম ফোটার সম্ভাবনা কিছুটা কম।
সাধারণত একসঙ্গে এক হাজার মুরগির ছানা ফোটানো যায় নতুন মডেল ইনকিউবেটরে। আর ৩০০ থেকে ৫০০ ডিম ফোটানো যায় যে ইনকিউবেটরে, বাজারে তার দাম বেশ কয়েক লাখ টাকা। সৌরভ-ডেভিডের দাবি, সেখানে নতুন গ্রামীণ সংস্করণের মোট খরচ খুব বেশি হলে ৬৫০০ টাকা। কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই শুধুমাত্র কেরোসিন তেল খরচ করেই দিব্যি চালানো যাবে ব্যবসা।
কেমন দেখতে, কী ভাবেই বা কাজ করছে এই ইনকিউবেটর?
কাঠ আর প্লাইউডের তৈরি এই ইনকিউবেটর অনেকটা ওয়ার্ড্রোবের গড়ন। পাঁচটি তাক। দু’পাল্লার দরজা। একেবারে নীচের তাকে তিনটি কেরোসিনের লম্ফ জ্বলছে। তার উপরের তাকে বালি ছড়ানো। রাখা আছে জলভর্তি মাটির মালসা। পরের তিনটি তাকে ডিম রাখার কাগজের মণ্ডের ট্রে পরপর সাজানো। তাতে সাজানো ডিম। কোনওটা থেকে উঁকি মারছে সদ্য ফোটা মুরগির ছানা। একটি মুরগি প্রাকৃতিক ভাবে যে ভাবে ডিম ফোটায়, কৃত্তিমভাবে তেমনই ব্যবস্থা রয়েছে ইনকিউবেটরে। আর তার নতুন সংস্করণে, একসঙ্গে ডিমের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট রাখা হয় লম্ফের তাপমাত্রা বাড়িয়ে কমিয়ে। তার উপরের তাকে রাখা মালসার জল আর বালি আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে।
যান্ত্রিক ইনকিউবেটরের মতোই এখানেও ২১ থেকে ২২ দিনে ডিম ফুটতে শুরু করে। ঘাটালের কেশপুর ব্লকের রানিপাটনা নটরাজ স্বসহায়ক দলের সদস্যরাও শিখে নিয়েছেন কেমন করে ডিম ফুটিয়ে ছানা বার করতে হয়। শিবরানি দোলই, কল্পনা সিংহ, ময়না দাস, কৃষ্ণা সিংহ, প্রতিমা দোলই, মিঠু সিংহ প্রত্যেকের একই কথা, যন্ত্রটা দারুণ কাজ করছে। ইতিমধ্যে দু’বার ডিম ফুটিয়ে মুরগির ছানাও পেয়েছেন তারা। প্রতিটি ছানা বাজারে ২০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। সব ঠিক মতো চললে মাসে ভালই রোজগার হবে এই আশাতেই বুক বাঁধছেন সদস্যেরা।
কিন্তু সৌরভ-ডেভিডরা যে কিছু করার ইচ্ছায় ইতিমধ্যে তাঁরা মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে কেশপুরের গ্রামে গ্রামে স্বপ্ন ফেরি শুরু করছেন। প্রচার করছেন নতুন ইনকিউবেটরের উপযোগিতার কথা। সৌরভ বলেন, “বাংলাদেশ আর নাইজেরিয়ার এ রকম কিছু উদ্যোগ ইউটিউবে দেখেছিলাম। সেটাই পথ দেখিয়েছে।” উদ্যোক্তাদের মতে, এমন যন্ত্র স্বনির্ভর দল থেকে শুরু করে গ্রামের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে পারবে।
নতুন ডিম ফোটানোর যন্ত্রের কথা শুনে রাজ্য হাঁস ও মুরগি খামারের সহ-অধিকর্তা কিংশুক মাইতি বলেন, “আধুনিক ইনকিউবেটরে প্রতি ১০টি ডিমে ৮টি থেকে ছানা পাবার সম্ভাবনা থাকে। স্থানীয় ভাবে তৈরি করা ওই যন্ত্রে অবশ্য তা আরও কিছুটা কমার আশঙ্কা থাকে।” সৌরভের অবশ্য দাবি, তাঁদের তৈরি যন্ত্রেও ডিম ফুটে বাচ্চা হবার শতকরা হারও একই। একই মত স্বনির্ভর দলের সদস্যদেরও। সৌরভের যুক্তি, “ইনকিউবেটর নয়, ডিম ফোটার শতকরা ভাগ ডিমের গুণের উপরে নির্ভর করে।”
মেদিনীপুর সদর ব্লকের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিক অপূর্ব চক্রবর্তী এমন ইনকিউবেটরের কথা শুনে উৎসাহিত। তিনি জানালেন, “ডিমের ব্যবসা শুরুর পক্ষে এটা খুবই ভাল।” তাঁর আশ্বাস, প্রয়োজনে প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন দফতর নতুন ইনকিউবেটরের বিপণন থেকে প্রচার সব রকম সাহায্যই করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy