ফাঁসির সাজা শোনার পর রাকেশ সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
আড়াই ও দেড় বছরের দুই শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধ করে খুনের দায়ে ফাঁসির সাজা হল বাবার।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবপ্রসাদ নাথ শুক্রবার অভিযুক্ত রাকেশ সিংহকে ফাঁসির সাজা শোনান। মেয়েদের খুন করে নদীর চরে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগও ছিল রাকেশের বিরুদ্ধে।
বিচারক আদালতে বলেন, “সন্তানদের একমাত্র ভরসা মা ও বাবা। আদালতে প্রমাণ হয়েছে, ঘটনার দিন আপনি দুই মেয়েকে নিয়ে যখন বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন, তখন তারা জানতও না জীবনের পরিণাম কী হতে চলেছে। ময়না-তদন্তে জানা গিয়েছে, আপনি দুই সন্তানকে খুনের আগে নির্মম ভাবে আঘাতও করেন। এই ঘটনা বিরলতম। আপনাকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হল।”
কিন্তু কেন নিজের দুই শিশুকন্যাকে খুন করল রাকেশ?
মামলার সরকারি আইনজীবী চিত্তরঞ্জন কর্মকারের বক্তব্য, পর-পর দুই কন্যাসন্তানের জন্ম মন থেকে মেনে নিতে পারেনি বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক। এ নিয়ে স্ত্রী সুধার সঙ্গে তার অশান্তি হত। মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রী ও মেয়েদের প্রায়ই মারধর করত রাকেশ। শেষমেশ দুই মেয়েকে খুন করে সে। চিত্তরঞ্জনবাবু জানান, রাকেশের বিরুদ্ধে খুন, খুনের প্রমাণ লোপাট, স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। মেয়েদের খুনের ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সুধা।
ঘটনাটি ২০১১-র ১২ মার্চের। পুলিশ সূত্রের খবর, সে দিন সন্ধ্যায় স্ত্রী-র সঙ্গে একপ্রস্ত অশান্তির পরে দুই মেয়েআড়াই বছরের অনুরাগ ও বছর দেড়েকের তনুরাগকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে বেরোয় রাকেশ। ঘাটালের কোন্নগরে শিলাবতীর নদীর চরে নিয়ে গিয়ে দুই মেয়েকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে সে। দেহ দু’টি নদীর চরে পুঁতে বালি চাপা দিয়ে দেয়। রাকেশকে একা বাড়ি ফিরতে দেখে সুধা মেয়েরা কোথায় জানতে চাওয়ায় তাঁকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে রাকেশ।
ঘটনার পর দিনই রাকেশের ভাই কমলেশ সিংহের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রাকেশকে ধরে। নদীর চর থেকে দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। এই মামলায় পুলিশ ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়ায় রাকেশ আর ছাড়া পায়নি। বৃহস্পতিবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এ দিন ফাঁসির সাজা শোনানো হয়।
আদতে বিহারের বাসিন্দা রাকেশ বাবার সঙ্গে ঘাটালে এসেছিল। এক সময় ঘাটালের এক গ্যাস ডিলারের অফিসে সে কাজ করত। বিহারেরই ছাপরার বাসিন্দা সুধা সিংহকে বিয়ে করেছিল সে। সুধা এখন আর ঘাটালে থাকেন না। স্থানীয় সূত্রের খবর, তিনি বিহারে চলে গিয়েছেন।
রাকেশ এ দিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। আদালতে সে বলে, “ঘটনার দিন আমি টিভিতে ক্রিকেট দেখছিলাম। মাঝে একবার বেরিয়ে মিষ্টি কিনি। পরে আলাদা ঘরে শুয়ে পড়ি। আর কিছু জানি না।” বিচারক অবশ্য তার কথায় গুরুত্ব দেননি।
এই প্রথম ঘাটালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হল। ‘ঘাটাল বার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক আইনজীবী নিত্যানন্দ ভুঁইয়া বলেন, “শিশু ও মহিলাদের উপরে যারা অত্যাচার করে, এই রায় তাদের প্রতি একটা কড়া বার্তা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy