Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দেউলপোতায় কাজের সুবিধায় মিনি পঞ্চায়েত

মিনি মহাকরণের পরে এ বার ‘মিনি পঞ্চায়েত’। সোমবার হলদিয়ার দেউলপোতায় এই মিনি পঞ্চায়েতেরই উদ্বোধন করলেন তমলুকের সাংসদ তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, “স্থানীয় এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মূল প্রশাসনিক কাজ পঞ্চায়েত কার্যালয়ে হলেও কিছু পরিষেবা মানুষ এখান থেকেই পেতে পারেন। তেমন সুযোগ থাকলে অন্য পঞ্চায়েতও এ ভাবে এগোতে পারে।”

চলছে জব কার্ড জমা।—নিজস্ব চিত্র।

চলছে জব কার্ড জমা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০১:১৭
Share: Save:

মিনি মহাকরণের পরে এ বার ‘মিনি পঞ্চায়েত’।

সোমবার হলদিয়ার দেউলপোতায় এই মিনি পঞ্চায়েতেরই উদ্বোধন করলেন তমলুকের সাংসদ তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, “স্থানীয় এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। মূল প্রশাসনিক কাজ পঞ্চায়েত কার্যালয়ে হলেও কিছু পরিষেবা মানুষ এখান থেকেই পেতে পারেন। তেমন সুযোগ থাকলে অন্য পঞ্চায়েতও এ ভাবে এগোতে পারে।”

তবে মিনি পঞ্চায়েত, এই বিষয়টিতে প্রশাসনের কোনও অনুমোদন নেই। হলদিয়ার বিডিও অশোক রক্ষিত বলেন, “পঞ্চায়েত আইনে বিষয়টির স্বীকৃতি নেই। যদিও নির্বাচিত সদস্যেরা ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়ে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই পারেন।” বিডিও-র মত, তবে সেখানে পঞ্চায়েত কর্মীদের যাওয়া ঠিক নয়।

কিন্তু কেন এই উদ্যোগ?

তৃণমূল পরিচালিত দেউলপোতা গ্রাম পঞ্চায়েতের বক্তব্য: এই পঞ্চায়েত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে। ২৮টি বুথে পঞ্চায়েত সদস্যই রয়েছেন ২২ জন। বাড়বাসুদেবপুর মৌজায় অবস্থিত পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে সবচেয়ে প্রান্তিক এলাকার দূরত্ব অন্তত ১২ কিলোমিটার। দ্বারিবেড়িয়া, সাপুয়া, হাদিয়া ও দেউলপোতা গ্রাম থেকে ওই কার্যালয়ে যেতে দু’বার গাড়ি পাল্টাতে হয়। যা বয়ষ্ক এবং মহিলাদের পক্ষে যেমন খরচের তেমনি কষ্টের। অনেকসময় সেই ঝক্কি পেরিয়ে ছুটে যাওয়ার পরেও দেখা যায়, প্রধান অনুপস্থিত। অনেকে আবার পেশাগত কিংবা অন্য কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পঞ্চায়েতে পৌঁছাতে পারেন না।

এমনই নানা সমস্যা বহুদিনের। পঞ্চায়েত প্রধান রীনা কুইতি বলেন, “সমস্যার সমাধানে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যেরা যে প্রস্তাব দেন, তা মেনে স্থানীয় ভাবে মিনি পঞ্চায়েত খোলা হয়েছে।” তবে তিনিও মানছেন, গোটা বিষয়টি হয়েছে দলেরই উদ্যোগে। রীনাদেবীর আশ্বাস, “কাজ নিরপেক্ষ ভাবেই হবে।”

স্থানীয় সূ্ত্রে খবর, মিনি পঞ্চায়েতের মূল পরিকল্পনা তিনবারের পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের অশোক মাইতির। দ্বারিকাপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে নিজের বাড়ির পাশে দু’ডেসিমেলের একটি খাস জমিতে নির্মিত হয়েছে ওই মিনি কার্যালয়। টিনের ছাওয়া হলেও ঝাঁ-চকচকে এক কামরার প্রশস্ত ঘরে সাধারণ মানুষের বসার চেয়ারের পাশাপাশি রয়েছে প্রধান, সদস্য, বিভিন্ন উপ-সমিতির সঞ্চালক ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি খুকুমনি সাউদের বসার চেয়ার। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এ সবের জন্য অর্থ দিয়েছেন স্থানীয়েরাই।

অশোকবাবু বলেন, “উদ্বোধনের মাস ছ’য়েক আগে এই মিনি কার্যালয়ে এসে বিডিও-সহ সরকারি কর্মীরা একশো দিনের প্রকল্পের কাজের তদারকি করতে এসেছিলেন। তারপরেই আমরা এটিকে পাকাপাকি ভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিই।” খুকুমনিদেবী জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে সকাল ছ’টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কেউ না কেউ এখানে বসবেন। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, গ্রামবাসী নথিপত্র জমা দেওয়া নেওয়া, শংসাপত্র, ত্রাণ, ভাতা, একশো দিনের কাজের আবেদন, উন্নয়ন সংক্রান্ত সরকারি কোনও নির্দেশিকা জানা, স্থানীয় সমস্যা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে মিনি পঞ্চায়েতে।

মঙ্গলবার সকালে কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, নানা আবেদন নিয়ে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামবাসী। ষাটোর্ধ্ব বর্ষা প্রামাণিক বিধবা ভাতার জন্য দরবার করছেন। একশো দিনের কাজের জন্য আবেদন করছেন মিনু প্রধান, শঙ্করী সামাই, গোবিন্দ প্রধানরা।

নতুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের কিশলয় সর্দারও। তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমারও সুবিধে হবে।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ওরা দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে কতটা কাজ করবে, তা ভবিষ্যতই বলবে।” কেন এমন আশঙ্কা? সিপিএম সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতের ১৬ জন সদস্যই যেহেতু তৃণমূলের তাই আশঙ্কাকা থেকেই যায়।

সিপিএমের আশঙ্কা অমূলক জানিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য অশোকবাবু বলেন, “সাংসদ ঊদ্বোধনে এসে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তা ছাড়া আমরা পঞ্চায়েত শব্দটি ব্যবহার করায় সেটা কর্তব্যও বটে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mini panchayat deulpota haldia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE