Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেবীপক্ষের সূচনায় আলোকিত রেলশহর

দুষ্কর্মে দাঁড়ি পড়েনি। রয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ। তার মধ্যেই ছিল আঁধার পথে ঝুঁকির যাত্রা। সমস্যা মেটাতে খড়্গপুর জুড়ে মিনিমাস্ট বাতিস্তম্ভের উদ্বোধন হল সোমবার। দেবীপক্ষের সূচনায় এটা পুর-উদ্যোগ। এ দিন সন্ধ্যায় সুভাষপল্লিতে এক অনুষ্ঠানে একযোগে ৪০টি আলোকস্তম্ভের উদ্বোধন হয়। ছিলেন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘রেল মানুষের দ্বারাই চলে। তাই মানুষের উন্নয়নে রেলের সাহায্য করা উচিত। তা সে রেলের জমি হোক বা রাজ্যের।’’

খড়্গপুরের অনুষ্ঠানে জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

খড়্গপুরের অনুষ্ঠানে জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:২৩
Share: Save:

দুষ্কর্মে দাঁড়ি পড়েনি। রয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ। তার মধ্যেই ছিল আঁধার পথে ঝুঁকির যাত্রা। সমস্যা মেটাতে খড়্গপুর জুড়ে মিনিমাস্ট বাতিস্তম্ভের উদ্বোধন হল সোমবার। দেবীপক্ষের সূচনায় এটা পুর-উদ্যোগ।
এ দিন সন্ধ্যায় সুভাষপল্লিতে এক অনুষ্ঠানে একযোগে ৪০টি আলোকস্তম্ভের উদ্বোধন হয়। ছিলেন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘রেল মানুষের দ্বারাই চলে। তাই মানুষের উন্নয়নে রেলের সাহায্য করা উচিত। তা সে রেলের জমি হোক বা রাজ্যের।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে উন্নয়নের গুণগানও করেন তিনি। এর আগে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি সম্বোধন করেছিলেন ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে। এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ভারতীদেবী ফের বলেন, ‘‘আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে যে উন্নয়নের জোয়ার এনেছেন তার স্পর্শ থেকে যেন খড়্গপুর বাদ না পড়ে। প্রদীপ সরকার কথা দিয়েছিলেন। উনি কথা রেখেছেন। ওঁদের ধন্যবাদ।’’ এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডলের কথায়, ‘‘অন্ধকার এলাকাতেই বেশি দুষ্কর্ম হয়। আলো হওয়ায় পুলিশ ও বাসিন্দাদের সুবিধা হবে।’’ এ দিন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রেলের জমিতে পুরসভার উদ্যোগে তৈরি পার্কেরও উদ্বোধন হয়। রেল এলাকার মানুষের দাবি মেনে ওই পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
রেলের ঠিকাদারি নিয়ে গোলমালের সূত্রে খড়্গপুরে খুন-জখমের ইতিহাস বহু দিনের। সেই অশান্তি কিছুটা থিতোলেও সম্প্রতি চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। শহরের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রেল এলাকা। ২০১০সালে রেল এলাকার ৮টি ওয়ার্ড পুরসভার অধীনে এসেছে। তবে এখনও ওই সব এলাকায় পুরসভার উন্নয়নের কাজে বাধা রয়েছে রেলের। এ নিয়ে বিগত কংগ্রেস পুরবোর্ড রেলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছিল। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। তবে গত পুর-নির্বাচনে তৃণমূল বোর্ড দখলের পরে সাংসদ সন্ধ্যা রায়কে নিয়ে পুর-প্রতিনিধিরা খড়্গপুরের ডিআরএমের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। রেল জানিয়ে দিয়েছিল, পুরসভার অর্থ সাহায্য পেলে তারা আরও বেশি করে উন্নয়নের কাজ তরান্বিত করতে পারে।
এ দিকে, শহরের অন্ধকার রাস্তা নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল দীর্ঘ দিনের। বিশেষ করে রেলের বিস্তীর্ণ এলাকা সন্ধের পরেই অন্ধকারে ডুবে যাওয়ায় অপরাধ বাড়ছে বলে অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। শহরের রাস্তায় বাইকে সওয়ার রোমিওদের উৎপাতও রয়েছে। তা ছাড়া, শহরের বিভিন্ন রাস্তা বেহাল হওয়ার আঁধারে পথ চলতে সমস্যা হচ্ছিল বাসিন্দাদের, বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের। তাই শহর আলোকিত করার দাবি ছিলই।

সেই দাবিকে মাথায় রেখেই পুরভোটের আগে শহরের ঝাপেটাপুর, মালঞ্চ রোডে পথবাতি বসিয়েছিল কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা। ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন ছোট মোড় থেকে মাঠ, শ্মশান, ইদগা ময়দান, বাসস্ট্যান্ড, বাজার এলাকায় মিনিমাস্ট বাতিস্তম্ভ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল। সেই মতো ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সুভাষপল্লি, গোলবাজার, ইন্দা, তালবাগিচা, বাসস্ট্যান্ড, প্রেমবাজারে ৪০টি বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছে। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “শহরের বিভিন্ন এলাকা এতদিন অন্ধকারে ডুবে ছিল। চুরি-ছিনতাইয়ের মতো দুষ্কর্ম বাড়ার পাশাপাশি বৃদ্ধদের অসুবিধা হচ্ছিল। তাই শহরকে আলো জ্বালাতে আমরা পুরবোর্ডে আসার তিনমাসের মধ্যেই এই আলো উদ্বোধন করলাম।’’ যদিও এতে দুষ্কর্ম বন্ধ হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। প্রেমবাজারের বাসিন্দা স্বপন দে বলেন, “শুধু আলো বসিয়ে অপরাধ বন্ধ হবে না। পুলিশকেও আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।’’ শহরে এত দিন পার্কও ছিল না। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চে একটি পার্ক থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা বেহাল হয়ে পড়েছিল। এ দিন পুরপ্রধানের নিজের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে রেলের জমিতে পার্কের উদ্বোধন হয় এ দিন। ৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে গোলবাজার-বড়বাতি সড়কের ধারে এই পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। রেলের বাধা সত্ত্বেও এই পার্ক হল কী ভাবে? পুরপ্রধান বলেন, “এলাকার মানুষের দাবি ছিল। তাঁরা আমাকে চিঠি দিয়েছিল। তাই বয়স্ক ও শিশুদের কথা ভেবে রেলকে জানিয়ে এই পার্ক চালু করলাম। সদিচ্ছা ছিল বলেই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই কাজগুলি সম্ভব হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE