বাস মালিকদের ফোন করে বাস চালানোর চেষ্টা করছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। বুধবার মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে।—নিজস্ব চিত্র।
পথে নামেনি বেসরকারি বাস। বন্ধ ছিল মেদিনীপুর শহরের অধিকাংশ দোকানপাট। তবে স্কুল- কলেজ- সরকারি অফিসগুলো খোলা ছিল। বাস কম থাকায় অফিসগুলোয় উপস্থিতি ছিল অনান্য দিনের থেকে কম। সবমিলিয়ে বন্ধে মিশ্র প্রভাব পড়ল মেদিনীপুরে।
বুধবার সকাল থেকে বন্ধের সমর্থনে পথে নামে বাম কর্মী- সমর্থকেরা। পাল্টা মিছিল করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাও। শহরের কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। বড় ধরনের কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, এ দিন সব সরকারি অফিসেই কাজ হয়েছে অন্য দিনের মতো। কর্মীদের উপস্থিতিও ছিল ভালই। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “কোথাও কোনও গোলমাল হয়নি। সরকারি অফিসগুলোয় উপস্থিতি ভালই ছিল।” জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষও বলেন, “কোথাও তেমন কোনও গোলমাল হয়নি। সর্বত্র পুলিশের নজরদারি ছিল।”
বুধবার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলোর ডাকা সাধারণ ধর্মঘটকে ব্যর্থ করতে ফরমান জারি করে রাজ্য সরকার। জানানো হয়, আগে থেকে নিয়ে রাখা অন্য দিনের ছুটির সঙ্গে ধর্মঘটের ছুটি যোগ করে নিলেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে ‘অনুপস্থিত’ বলেই গণ্য করা হবে। বামেদের দাবি, পুলিশ দিয়ে বন্ধ ভাঙার চেষ্টা হলেও বন্ধ সর্বাত্মক হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “ধর্মঘট প্রতিহত করতে তৃণমূল সব রকম চেষ্টা করেছে। ওরা পথে নেমেছিল। পুলিশও পথে ছিল। কিছু এলাকায় দলের কর্মী- সমর্থকদের হেনস্থা করা হয়। মানুষ অবশ্য তৃণমূলের গুণ্ডামির সব চেষ্টা ব্যর্থ করেছে। তৃণমূলীরা হাজার চেষ্টা করেও ধর্মঘট ব্যর্থ করতে পারেনি।” তাঁর কথায়, “সর্বত্র ধর্মঘট সফল হয়েছে। কিছু এলাকায় আক্রমণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতিবাদ মিছিল হবে।”
তৃণমূল অবশ্য বামেদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, বন্ধ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কর্মনাশা বন্ধকে মানুষ সমর্থন করেনি। বুধবার জেলা সর্বত্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “বন্ধ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ সাড়া দেয়নি। যেটুকু দোকানপাট বন্ধ ছিল, তা ভয়ভীতির জেরেই। সিপিএম জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করে। আশা করি, আগামী দিনে ওদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।” তাঁর কথায়, “বন্ধ ব্যর্থ করার জন্য মানুষকে অভিনন্দন। বাংলা এগোচ্ছে। সিপিএম পিছোচ্ছে। মানুষ আর বন্ধ চায় না।”
এ দিন মেদিনীপুরের স্কুল- কলেজগুলোর সামনে পিকেটিং শুরু হয়। পথে নামে বামেরা। ছিলেন সিপিএম নেতা কীর্তি দে বক্সী, সারদা চক্রবর্তী, এসইউসি নেতা অমল মাইতি প্রমুখ। বন্ধের সমর্থনে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে মিছিল। অন্য দিকে, বন্ধ ব্যর্থ করার ডাক দিয়ে পথে নামে তৃণমূলও। ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী প্রমুখ। শাসক দলের মিছিলও শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। সকালের দিকে মেদিনীপুর শহরে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা সামান্য বদলায়। কিছু দোকান খোলে। তবে বেশির ভাগ বড় দোকান খোলেনি। ফুটপাথের বেশির ভাগ দোকানও বন্ধ ছিল।
ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি হার কম থাকায় এ দিন বেশ কিছু স্কুল টিফিনের পরে ছুটি হয়ে যায়। জেলা পরিষদ, কালেক্টরেট, বিডিও অফিস-সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি অন্য দিনের থেকে কম। প্রশাসনের এক সূত্রে দাবি, যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কেউ কেউ আসতে পারেননি। সকালে কালেক্টরেটের সামনেও যুযুধান দু’পক্ষের মিছিল হয়। তৃণমূল শহরে বাইক মিছিলও করে।
বাস কম থাকায় কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে গিয়েও ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ। তৃণমূলের দীনেনবাবু, প্রদ্যোত্বাবুরা সকালে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে যান। মালিকদের সঙ্গে কথা বলে পথে বাস নামানোর চেষ্টা করেন। অবশ্য চেষ্টা সফল হয়নি। তৃণমূল নেতাদের মন রাখতে তিন- চারটি বাস স্ট্যান্ড থেকে বেরোয়। অবশ্য শহর ছাড়িয়ে যাওয়ার পরে ফের দাঁড়িয়ে যায়। রুটে চলাচল করেনি। বাস মালিকদের বক্তব্য, যাত্রী কম ছিল। এ দিন বাস চালালে লোকসানই হত।
বন্ধ সফল করার জন্য মানুষকে অভিনন্দন জানান এসইউসির জেলা সম্পাদক অমল মাইতি। তাঁর কথায়, “ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো এবং বামপন্থী দলগুলো জনস্বার্থে কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তৃণমূল দল ও রাজ্য সরকার বিরোধী এই ধর্মঘট নয়। অথচ, আশ্চর্যজনক ভাবে তারা রাস্তায় নেমে বন্ধ ভাঙতে সক্রিয় হল। নক্কারজনক ভাবে কার্যত বিজেপি দল ও কেন্দ্রীয় সরকারকে রক্ষা করতে উঠেপড়ে লাগল। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।”
কালেক্টরেট মোড়ের অদূরে ফুটপাথের দোকান খোলা নিয়ে একদল তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে একদল হকারের বচসা হয়। তৃণমূল কর্মীরা জোর করে দোকান খুলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ। একাংশ হকার অবশ্য জানিয়ে দেন, শহরের বড় দোকানগুলো বন্ধ। সেগুলো খোলানো হোক। তাঁরা দোকান খুলবেন না। এই সময়ে রাজু বসু নামে এক তৃণমূল কর্মী এক হকারকে চড় মারেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ বলেন, “জোর করে দোকান খোলানোর ঘটনা ঘটেনি। ওখানে সামান্য একটা সমস্যা হয়েছিল। পরে তা মিটেও যায়। কেউ কাউকে চড় মারেনি।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “ধর্মঘট প্রতিহত করতে যে ভাবে তৃণমূল পথে নামল, তা থেকেই স্পষ্ট ধর্মঘট কতটা সফল।” জবাবে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্বাবু বলেন, “ধারণ মানুষ এ সব চান না। এ সব কর্মনাশা বন্ধ। মানুষ চান, জনজীবন সচল থাকুক। এ দিন সর্বত্র তারই প্রমাণ মিলেছে।” তাঁর কথায়, “বন্ধ- ধর্মঘট- হরতালের রাজনীতি থেকে আমরা অনেক দিন আগেই সরে এসেছি।”
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল, কিংশুক আইচ, রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy