চন্দন ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
স্যার, আপনাকে আমরা কিছুতেই স্কুল ছেড়ে যেতে দেব না কাঁদোকাঁদো গলায় এমনটা বলেই প্রিয় চন্দনস্যারের পায়ে লুটিয়ে পড়েছিল ছাত্রেরা। প্রিয় পড়ুয়াদের এই আবদার আর ঠেলতে পারেননি চন্দনস্যারও। অন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক নয়, দাসপুর থানার খেপুত হাইস্কুলের চন্দন ভট্টাচার্য সহ-শিক্ষক হিসাবেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
টানা বাইশ বছর স্কুলে ইংরাজি পড়ানোর পরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় বসেছিলেন চন্দনবাবু। পরীক্ষায় পাশ করে প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগপত্রও পেয়ে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে পরিচালন কমিটির বৈঠক হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই স্কুল ছাড়া যাবে না এই আর্জি নিয়ে চন্দনস্যারকে ঘিরে ধরে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অধিকাংশ পড়ুয়া। অনেকে পা জড়িয়ে কেঁদেও ফেলে। প্রিয় স্যার স্কুল ছাড়ছেন, এই খবরে স্কুলে আসেন অভিভাবকেরাও। তাঁদেরও ওই একই অনুরোধ দয়া করে স্কুল ছাড়বেন না স্যার।
আচমকাই এমন দৃশ্য দেখে পরিচালন কমিটির সদস্য থেকে স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরাও হতবাক। শেষমেষ ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক-সহকর্মীদের আর্জি মেনে স্কুলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওই শিক্ষক। চন্দনবাবু বলেন, “বাবার স্বপ্ন ছিল প্রধান শিক্ষক হই। আমারও তেমন ইচ্ছে ছিল। পরীক্ষায় বসে পাশও করি। ঘাটালেই পেয়েছিলাম। কিন্তু পড়ুয়াদের এই আবদারকে আর ফেলতে পারলাম না।”
প্রধান শিক্ষক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিয়ম মেনে ওনাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এ দিনই পরিচালন কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। শেষমেশ তা আর হয়নি।” তাঁর সংযোজন, “চন্দনবাবু সহকর্মী হিসাবে থেকে যাওয়ায় আমাদেরও ভাল লাগছে।” একই বক্তব্য স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি অমিয়কুমার দাস এবং সম্পাদক অনিমেষ মাইতিরও।
ঘাটাল থানা এলাকার মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা চন্দন ভট্টাচার্য ১৯৯২ সালে ওই স্কুলে সহকারি শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। চন্দনবাবুর কথায়, তখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন নন্দদুলাল জানা। স্কুলে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছিল না। তিনি বলেন, “নন্দদুলালবাবু আমাকে ও সহকর্মী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে আদর্শ শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি স্কুলকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন। সেই থেকে আমারও স্কুলের প্রতি টান এসেছিল।”
অভিভাবক তথা স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষণ মান্না, প্রদীপ পোড়িয়া, হবিবুর রহমানেরা বলেন, “এখন স্কুলের পড়াশোনার মান ভাল হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলও ভাল হচ্ছে। এতে স্কুলের অন্য শিক্ষকদের মত চন্দনবাবুর অবদানও যথেষ্ট। তাই আমরা ওনাকে স্কুল ছেড়ে না যাওয়ার আর্জি জানিয়েছিলাম। উঁনি কথা রেখেছেন।” এ জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি তাঁরা। স্কুলের ছাত্র সৈকত রায়, শেখ সইফুল, অভিষেক মণ্ডল, নিবেদিতা মান্না, জয়িতা পালেরা বলেন, “চন্দনস্যার আমাদের স্কুল ছুটি হওয়ার পরেও আলাদা ভাবে কোচিং দেন। স্যারকে আমরা কিছুতেই যেতে দেব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy