Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ মাস টাকা বাকি, অনিশ্চিত নিশ্চয়যান

নিরাপদ মাতৃত্ব সুনিশ্চিত করতে প্রসূতিকে হাসপাতালমুখী করা খুব জরুরি, বুঝেই প্রসবকালীন পরিবহণ পরিষেবা চালু করেছিল জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন। প্রসবের গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে প্রসূতিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিযোগ করা হয়েছিল মাতৃযান (নিশ্চয় যান)।

সদ্যোজাতকে নিয়ে নিশ্চয়যান চেপে বাড়ির পথে। নিজস্ব চিত্র।

সদ্যোজাতকে নিয়ে নিশ্চয়যান চেপে বাড়ির পথে। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:১৪
Share: Save:

নিরাপদ মাতৃত্ব সুনিশ্চিত করতে প্রসূতিকে হাসপাতালমুখী করা খুব জরুরি, বুঝেই প্রসবকালীন পরিবহণ পরিষেবা চালু করেছিল জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন। প্রসবের গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে প্রসূতিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিযোগ করা হয়েছিল মাতৃযান (নিশ্চয় যান)। শুধু তাই নয় প্রসব পরবর্তীকালে হাসপাতাল থেকে মা ও শিশুকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া বা আরও পরে সদ্যোজাতের কোনও সমস্যা হলে ফের হাসপাতালে নিয়ে আসে মাতৃযান। ২০১০ সাল থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরে চলছে এই পরিষেবা। কিন্তু তা নিয়ে হাজার সমস্যার কথা এর আগে জানিয়েছেন ভুক্তোভোগীরা। কখনও গাড়ি পাওয়া যায় না তো কখনও টাকা দাবি করেন মাতৃযান চালক— এমন অভিযোগ বারবার করেছেন নানা এলাকার প্রসূতি ও তাঁদের পরিবার। কিন্তু এ বার সমস্যায় মাতৃযানের মালিকরা।

অভিযোগ দীর্ঘ ছ’মাস টাকা পাননি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স মালিকেরা। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। কবে টাকা পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন “টাকা না এলে কী করে দেব? যতটুকু টাকা এসেছিল তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি গত পাঁচ মাস ওই প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা আসেনি জেলায়। তাই এই সমস্যা। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছে, প্রকল্প যাতে বন্ধ না-হয়ে যায় সে জন্য অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের অনুরোধ করেছেন গাড়ি আপাতত চালিয়ে যেতে।

কিন্তু সেটা কত দিন?

গাড়ি মালিকদের পক্ষে সুশান্ত মারগুল, প্রদীপ সিংহ রায়েরা বলেন, ২৪ ঘন্টার জরুরিকালীন পরিষেবা। ফলে অন্তত দু’জন চালক থাকেই। সঙ্গে আরও একজন সহকারী। সুতরাং এক একটি গাড়ির উপর চার জন নির্ভরশীল। আবার অনেক অ্যাম্বুল্যান্স মালিকের তেমন ক্ষমতা নেই যে ঘর থেকে টাকা বার করে গাড়ি চালাবেন।

অন্যদিকে ঘাটালের এক মাতৃযান চালক কালু দোলইয়ের কথায়, “আমি গাড়ি চালিয়েই সংসার চালাই। মালিক দু’মাসের বেতন মালিক দিতে পারেননি। কিছু হাত খরচ অবশ্য দিয়েছেন।’’ আর এক গাড়ির চালক কার্তিক সামন্তের কথায়, “আমার মালিক লোন নিয়ে গাড়ি কেনায় দু’মাস কিস্তি দিতেই পারেনি। আমার বেতন তো দুরের কথা। ধার করে কোনও ক্রমে সংসার চালাচ্ছি।”

এ ভাবে ক’দিন চলবে বুঝতে পারছেন না মালিক, চালকরা। ফলে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে প্রকল্প নিয়ে। টাকা না-এলে হয়তো অনেক গাড়িই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কেন বন্ধ হয়ে গেল টাকা? মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েই দায় সেরেছেন। এ দিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, কেন্দ্র এই প্রকল্পে টাকা পাঠায়। যখন টাকা দেয়, তখন একসঙ্গে অনেক টাকায় আসে। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প চলছে। কেন্দ্র ভাগ করে টাকা পাঠালেও বিভিন্ন কারণে সেই টাকা ভাগে গোলমাল হয়ে যায়। একটি প্রকল্পে বেশি টাকা চলে গেলে অন্যটি তো ভুগবেই। এর ফলেই সমস্যা। কিন্তু প্রকল্পটি চালু রাখতে গেলে সময় মতো গাড়ি মালিকদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়াই ভাল বলে মন্তব্য করেছেন ওই কর্তা। সেইসঙ্গে তিনি এ আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন, পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে আদৌও এক সঙ্গে সমস্ত টাকা মালিকেরা পাবেন না।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, নিশ্চয়যানের নিয়ম অনুযায়ী অ্যাম্বুল্যান্স মালিকেরা মাসিক কোনও টাকা পান না। যত সংখ্যক প্রসূতিদের এবং শিশুদের হাসপাতালে আনা হয় বা বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় তার উপরই টাকা পান তাঁরা। ১-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনও গাড়ি গেলে মালিকেরা পান ১৫০ টাকা। ১১-২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২৫০, ২১-৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৪৫০ টাকা দেওয়া হয়। আর দূরত্ব ৪০ কিলোমিটারের বেশি হলে ওই টাকার সঙ্গে প্রতি কিলোমিটারে আট টাকা যোগ হয়।

জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের উদ্যোগে এই প্রকল্পটি রাজ্যে দেখভাল করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান দফতর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বিষয়টি জানানোর জন্য আশা কর্মী সহ স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেছিলেন। শুধু সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। দেওয়া হয় দু’ধরনের কার্ড— একটি শিশুদের ও অন্যটি প্রসূতিদের। কার্ডেই রয়েছে টোল ফ্রি নম্বর।

তথ্য বলছে, এই ক’বছরে হাসপাতালে প্রসবের ও শিশুদের চিকিৎসা ক্রমেই বেড়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “আগে প্রাতিষ্ঠানিক হার ছিল ৬৫-৭০ শতাংশ। প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরের সমীক্ষায় এখন ৯২ শতাংশ প্রসূতি সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হয়। বাকি বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা নার্সিংহোমে। গ্রামে ও ছোট ছোট শহরে এখন প্রায় সবাই হাসপাতালেই ভর্তি হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE