Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর জামা বিলিয়ে আনন্দের পাঠ স্কুলেই

ভাগ করে নিলে আনন্দ বাড়ে। শারদোৎসবের আমেজে জীবনে স্বার্থত্যাগের এই সহজপাঠ স্কুলেই পাচ্ছে ঝাড়গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ঝাড়গ্রাম শহরের সুখময় সেনগুপ্ত সরণির এক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য পুজোর মুখে এক অভিনব বন্দোবস্ত করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল চত্বরে পড়ুয়াদের মাঝে চিন্ময়বাবু। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

স্কুল চত্বরে পড়ুয়াদের মাঝে চিন্ময়বাবু। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ২১:১৭
Share: Save:

ভাগ করে নিলে আনন্দ বাড়ে। শারদোৎসবের আমেজে জীবনে স্বার্থত্যাগের এই সহজপাঠ স্কুলেই পাচ্ছে ঝাড়গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

ঝাড়গ্রাম শহরের সুখময় সেনগুপ্ত সরণির এক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য পুজোর মুখে এক অভিনব বন্দোবস্ত করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। নিজের পুজোর জামা থেকে অন্তত একটা বাঁচিয়ে দুঃস্থ শিশুর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের বলছেন শিক্ষকরা। যারা সে কাজ করছে, তাদের পুরস্কৃত করছে স্কুল। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে পেন-পেন্সিলের মতো লেখাপড়ার নানা সরঞ্জাম।

হঠাৎ এই উদ্যোগ কেন?

স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিন্ময় সেনগুপ্তের জবাব, ‘‘জেন ওয়াই যুগে ছোট ছোট আবেগ ও সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো নতুন প্রজন্ম হারিয়ে ফেলছে বলে অনেকেই হাহুতাশ করেন। সাধ্যমতো অন্যের মুখে হাসি ফোটানোটাও যে আমাদের কর্তব্যের মধ্যে, সেটা শেখাতেই এই ভাবনা।” পড়ুয়ামহলে ‘আঙ্কল’ বলে পরিচিত চিন্ময়বাবু ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়েছিলেন, চারপাশে এমন অনেক শিশু রয়েছে, পুজোয় যাদের নতুন জামা হয় না। অথচ আমরা সম্মিলিত ভাবে একটু স্বার্থত্যাগ করলেই মলিন মুখগুলিতে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারি। তাঁর ডাকে ইতিমধ্যেই স্কুলের মোট ৩৩৮ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১২১ জন সাড়া দিয়েছে। এই কচিকাঁচাদের দেওয়া নতুন জামা পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে ১৮৯ জন দুঃস্থ শিশুর। স্কুলপড়ুয়ারা কেউ একটা, কেউ আবার দু’টো জামা উপহার দিয়েছে পড়শি বন্ধুদের।

স্কুলের এই উদ্যোগে বেজায় খুশি পড়ুয়ারা। আর অভিভাবকরা অভিভূত। তৃতীয় শ্রেণির অর্ণব মাহাতোর বাড়ি মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার মালবাঁধি গ্রামে। অর্ণবের বাবা অনুপ মাহাতো একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। অনুপবাবু বলেন, “কয়েকদিন আগে স্কুল থেকে ফিরেই অর্ণব বায়না ধরল, গ্রামে ওর খেলার সাথীদের নতুন জামা দেবে। তিনজন দুঃস্থ শিশুকে জামা দেওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ অর্ণবকে পুরস্কৃত করেছেন। স্কুলের এই শিক্ষায় আমরা খুশি।” অর্ণবের কথায়, “পুজোয় আমার অনেক জামা হয়। আঙ্কল বলেছেন, আনন্দ ভাগ করে নিলে আরও বেশি আনন্দ পাওয়া যায়। এ বার থেকে প্রতি বছর বন্ধুদের নতুন জামা দেব।” নতুন জামা পেয়ে খুশি অর্ণবের সঙ্গী দীপক, রূপক, বুবাইরাও। লালগড়ের বৈতার বাসিন্দা চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া রুদ্র আচার্যও গ্রামের দু’জন বন্ধুকে দু’টো নতুন জামা দিয়েছে। রুদ্রর কথায়, ‘‘আমি বন্ধুদের জামা দিয়েছি জেনে ‘আঙ্কল’ খুব খুশি হয়েছেন।”

স্কুলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা আর এক অভিভাবক বনশ্রী সেনাপতি। তাঁর কথায়, “এর ফলে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই সার কথাটা কত সহজে ছেলের মাথায় ঢুকে গিয়েছে।” পেশায় কলেজ শিক্ষক ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা অভিভাবক সুপ্রকাশ দাস বলেন, “আমার ছেলে অর্ঘ্যদীপ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সমবয়সী এক দুঃস্থ শিশুকে নিজের জামা-প্যান্ট দিয়ে ও ভীষণ খুশি। স্কুলের তরফে এমন শিক্ষাদান ব্যতিক্রমী।” ঝাড়গ্রামের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্রও মানছেন, “আত্মসর্বস্ব সময়ে এমন ভাবনা অভিনব ও অনুকরণযোগ্য।”

আত্মকেন্দ্রিকতা ভুলে অর্ণব, সপ্তক, শ্রেয়ান, সৌম্যদীপ, রুদ্র, ঈপ্সিতারা যে ভাবে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তাতে তৃপ্ত চিন্ময়বাবু নিজেও। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবে সাড়া পেয়েছি, তাতে বর্তমান প্রজন্মকে নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE