Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুনর্বাসন প্যাকেজে অনুদান ৮৬ জন প্রাক্তন মাওবাদীকে

ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাওবাদী তত্‌পরতার কথা মেনে নিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। বুধবার মেদিনীপুরে পুলিশের এক বৈঠকে যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাওবাদী তত্‌পরতা রয়েছে। ওখানে যৌথ অভিযান চলছে। ওরা এখানে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের অভিযান জারি থাকায় ঢুকতে পারছে না।” পুলিশের দাবি, এ জেলার জঙ্গলমহলে অবশ্য নতুন করে মাওবাদীদের প্রভাব বাড়েনি।

সরকারি সাহায্য নিতে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে (বাঁ দিকে)। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দিচ্ছেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত ( ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সরকারি সাহায্য নিতে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে (বাঁ দিকে)। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দিচ্ছেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত ( ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাওবাদী তত্‌পরতার কথা মেনে নিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। বুধবার মেদিনীপুরে পুলিশের এক বৈঠকে যোগ দিতে এসে তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ড সীমানায় মাওবাদী তত্‌পরতা রয়েছে। ওখানে যৌথ অভিযান চলছে। ওরা এখানে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের অভিযান জারি থাকায় ঢুকতে পারছে না।” পুলিশের দাবি, এ জেলার জঙ্গলমহলে অবশ্য নতুন করে মাওবাদীদের প্রভাব বাড়েনি।

এ দিন মেদিনীপুরে জঙ্গলমহলের তিন জেলার ৮৬ জন প্রাক্তন মাওবাদীরা হাতে ‘পুনর্বাসন প্যাকেজের’ নথিপত্র তুলে দেওয়া হয়। মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (মেদিনীপুর) বিশাল গর্গ, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ-সহ তিন জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। এ দিন যে ৮৬ জন প্রাক্তন মাওবাদীর হাতে ‘পুনর্বাসন প্যাকেজের’ নথিপত্র তুলে দেওয়া হয়, তারমধ্যে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ৪৯ জন, পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলার এক জন, পুরুলিয়ার ২৫ জন এবং বাঁকুড়ার ১১ জন রয়েছে। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের মধ্যে ছিলেন অজিত মুর্মু, চুনারাম টুডু, সুভাষ হাঁসদা, পীযূষ খিলাড়ি, গাঁধারী লোহাররা।

ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের অজিত মুর্মু ওরফে সুজয় মাওবাদীদের এরিয়া কমান্ডার ছিলেন বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। পাশাপাশি তাঁর দাবি, চুনারাম ওরফে চাটু সেকেন্ড ইন এরিয়া কমান্ডার ছিলেন। সুভাষ ওরফে চায়না সুচিত্রা মাহাতোর স্কোয়াডে ছিলেন। বুধবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আইজি আইবি (অ্যাডভাইসারি) ও পি গুপ্ত। তিনি বলেন, “আজ ৮৬ জনকে ডাকা হয়েছিল। এরা আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা চেয়েছিলাম, এরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসুক। ওরাই তাই চেয়েছে। ওরা আবেদন করেছে বলেছে, আমরা ভাল হতে চাই। আমরা ভাল থাকব।”

এই ৮৬ জন কী কী সুবিধা পাবেন? পুলিশ সূত্রে খবর, ২ লক্ষ টাকা স্থায়ী আমানত, এককালীন ৫০ হাজার টাকা অনুদান ও ফি মাসে চার হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন। এ ছাড়া চিকিত্‌সার খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৫০০ টাকা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৫০০ টাকা এবং ঘরভাড়া বাবদ প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকাও পাবেন।

আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) বলেন, “এরা পুলিশের ‘রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার’-এ থাকবে। পরিবারের সঙ্গেই থাকতে পারবে।” এর আগে আত্মসমর্পণকারী ৪৩ জন মাওবাদীকে হোমগার্ডের চাকরি দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই ৮৬ জনকেও কি হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে? আইজি- র (পশ্চিমাঞ্চল) জবাব, “এদেরও হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব আমরা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাচ্ছি।” রাজ্যে মাওবাদী সন্ত্রাসপর্বে নিহতদের পরিবারকে চাকরি বা পেনশন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য কার্যক্ষেত্রে তা এখনও হয়ে ওঠেনি। এ নিয়ে নিহতদের পরিবারের লোকজন বেশ ক্ষুব্ধও। এঁদের বক্তব্য, ধৃত মাওবাদী ও তাদের লিঙ্কম্যানরাও যেখানে সরকারি চাকরি বা আর্থিক প্যাকেজ পাচ্ছে, সেখানে আমরা কেন বঞ্চিত থাকছি? এদের ব্যাপারে কিছু ভাবা হচ্ছে?

আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) বলেন, “ওদের ৯০- ৯৫ শতাংশ লোককে সাহায্য করা হয়েছে। যে ‘স্কিম’ আছে, সেই ‘স্কিম’ থেকেই সাহায্য করা হয়েছে।” বস্তুত, মাওবাদী হামলায় নিহতদের পরিবারের জন্য যে আর্থিক প্যাকেজ রয়েছে, প্রায় প্রতিটি পরিবার তা পেয়েছে বলেই এ দিন দাবি করেন সিদ্ধিনাথবাবু। আর সরকারি চাকরি? এই প্রশ্নের কোনও জবাবই দেননি তিনি। এ দিন যাদের হাতে ‘পুনর্বাসন প্যাকেজের’ নথি তুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের কেউ কেউ আগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরে জামিনে ছাড়া পান। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা কিছু অস্ত্রশস্ত্রও জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে একটি এ কে ৪৭ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

বস্তুত, বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারাও মানছেন, মাওবাদী স্কোয়াডের সদস্যরা দল বেঁধে এসে কিছু এলাকায় থাকছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম এলাকায় ইতিমধ্যে কয়েকজনকে মাওবাদীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জঙ্গলমহলে নতুন করে মাওবাদীদের প্রভাব বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশের এক সূত্র। বরং ওই সূত্রের মতে, যে কোনও ‘সোর্স’ থেকে খবর এলেই তার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা দরকার। কোথায় কোথায় মাওবাদীরা আশ্রয় নিতে পারে তা খতিয়ে দেখে নজরদারি বাড়াতে হবে। জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “এক সময় জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের প্রভাব ছিল। ফলে পথঘাট সবই ওদের চেনা। ওরা হয়তো সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রত্যাঘাতের পথ খুঁজছে। তবে চিন্তার কিছু নেই। সীমানাবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতাই রয়েছে।” তাঁর কথায়, “মাওবাদী সক্রিয়তা নিয়ে আসা তথ্যগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE