Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ঘাটাল-কাণ্ডে দুষ্কৃতীরা অধরাই

পুলিশের উপর হামলায় প্রশ্নে নিরাপত্তা

শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় পুলিশের উপর হামলায় প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা। রবিবার রাতে ঘাটাল শহরের আলমগঞ্জ এলাকায় টহলে বেরোনো পুলিশের উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রণব সরেন নামে এক হোমগার্ডেরও মৃত্যু হয়। তবে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। মঙ্গলবারও অবশ্য ওই ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। ওই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

মঙ্গলবার শহরে পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র

মঙ্গলবার শহরে পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৬
Share: Save:

শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় পুলিশের উপর হামলায় প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা।

রবিবার রাতে ঘাটাল শহরের আলমগঞ্জ এলাকায় টহলে বেরোনো পুলিশের উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রণব সরেন নামে এক হোমগার্ডেরও মৃত্যু হয়। তবে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। মঙ্গলবারও অবশ্য ওই ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। ওই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, দুষ্কৃতীদের ধরতে ঘাটাল সংলগ্ন বিভিন্ন থানা এলাকায় তল্লাশি চলছে। পাশাপাশি, পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা অন্য কোনও জেলাতেও পালিয়ে থাকতে পারে। তাই তদন্তে বাঁকুড়া ও হুগলি জেলা পুলিশের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে আটটি তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে। ওই দলের পুলিশ আধিকারিকরা বিভিন্ন থানার রেকর্ডে থাকা অপরাধীদের তথ্য সম্বলিত নথিপত্র খতিয়ে দেখছেন। পুলিশের দাবি, তদন্তে একাধিক সূত্র মিলেছে। কয়েকজন দুষ্কৃতীর কথাও পুলিশ জানতে পেরেছে। তদন্তে ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের যোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে বেশ কিছু সূত্রও পাওয়া গিয়েছে। দ্রুত দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে পাকড়াও করার চেষ্টা চলছে।” ঘাটালের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ওই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে দোষীদের ধরতে তদন্ত চলছে।”

থানা থেকে মাত্র আড়াইশো মিটার দূরত্বে আলমগঞ্জ এলাকার ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন শহরবাসীরা। পাশাপাশি, ঘিঞ্জি এলাকায় এ ভাবে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কেন আগে থেকে তার খবর পেল না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। পুলিশের দাবি, রবিবার রাতে টহলরত ছয় পুলিশ কর্মীর দলে দু’জনের কাছে রিভলভার ছিল। জেলা পুলিশ সুপারের দাবি, দুষ্কৃতীরা প্রথমেই পুলিশকে মারধর করে। পরে দুষ্কৃতীরা নিজেদের বাঁচাতে গুলি চালায়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, দুষ্কৃতীরা গুলি ছুঁড়লেও কেন পুলিশ পাল্টা গুলি ছুঁড়ল না? পুলিশ সুপার এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও সোমবারই পুলিশ ওই ঘটনায় মাওবাদী-যোগ থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে।

বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার তদন্তে পুলিশের নিজস্ব সোর্স মারফতও অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সোর্স পুলিশকে দেয়। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, বর্তমানে সোর্স মারফত তথ্য সংগ্রহ কমেছে। ফলে সোর্সদের দেওয়ার জন্য বরাদ্দ সরকারি অর্থও খরচ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন থানায় সোর্সদের জন্য বরাদ্দ অর্থ বন্টনের পদ্ধতি নিয়েও। গোয়েন্দা বিভাগের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শহরবাসীদের অভিযোগ, রাতে শহরের রাস্তায় টহল দেওয়ার চিত্র এখন বিরল। ফলে শহরে দুষ্কৃতীদের রমরমা বাড়ছে। তাছাড়াও অনেক থানাতেই এখনও মান্ধাতার আমলের অস্ত্র নিয়ে কাজ করারও অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, রবিবার রাতে তিনটি মোটরবাইকে ঘাটাল থানার ওসি-র নেতৃত্বে ছয় পুলিশকর্মী সাদা পোশাকে টহল দিতে বেরিয়েছিলেন। থানা থেকে আড়াইশো মিটার দূরে আলমগঞ্জের কাছে জনা আটেক যুবককে দল বেঁধে হেঁটে আসতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই ওই দুষ্কৃতীরা বাঁশ নিয়ে পুলিশের উপরে চড়াও হয়। পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে যায়। এক দুষ্কৃতী পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায়। একটি গুলি লাগে হোমগার্ড প্রণবের বুকের ডান দিকে। দুষ্কৃতীদের বাঁশের ঘায়ে তিন পুলিশ কর্মীও আহত হন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই প্রণবের মৃত্যু হয়। তবে দুষ্কৃতীরা পালায়। ঘটনাস্থলে ০.৮ মিমি কার্তুজের দু’টি খোল উদ্ধার হয়।

রবিবারের ঘটনার পর সোমবার রাত ন’টার মধ্যেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ঘাটাল শহরের এক হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী সুজিত হড়ের প্রশ্ন, “থানা থেকে সামান্য দূরত্বে যেভাবে দুষ্কৃতীরা পুলিশের উপর গুলি চালিয়ে পালাতে পারল, সেখানে পুলিশ আমাদের কী করে নিরাপত্তা দেবে।” পেশায় স্কুল শিক্ষক দিবাকর সামন্তের কথায়, “নিরাপত্তা কোথায়। আমারা ওই ঘটনার পর থেকে বাড়ির মেয়েদের রাতে টিউশনি পাঠাতেও ভয় পাচ্ছি।” শহরের এক যুবক তরুণ মণ্ডলেরও বক্তব্য, “সারদিন কাজ সেরে রাতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে বাড়ি ফিরতে প্রায়ই দশটা বেজে যায়। কিন্তু থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে ওই ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।” তবে পুজোর আগে শহরে নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে তৎপর পুলিশ। ঘাটাল ব্লকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে পুলিশ নজরদারি চালাবে। এছাড়াও বাজার ও জনবহুল এলাকাতেও পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE