Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
রশ্মি মেটালিক্স

ফের শ্রমিক মৃত্যু, প্রতিবাদে কাজ বন্ধ

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফের কর্মরত এক শ্রমিক বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন খড়্গপুরের রশ্মি মেটালিক্স কারখানায়। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও এক শ্রমিক। শুক্রবার দুপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধারে সাদাতপুর থানার কাছে ওই শিল্পসংস্থার পিগ আয়রন কারখানায় এই ঘটনার করে কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকেরা। মৃত শ্রমিকের নাম ডি প্রসাদ (২৫)। জখম হয়েছেন তাঁরই ভাই বছর বাইশের ডি চরণ কুমার। দু’জনেই নিমপুরা ঘেঁষা দেওয়ানমারোর বাসিন্দা। এই কারখানায় ঠিকাশ্রমিকের কাজ করতেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৭
Share: Save:

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফের কর্মরত এক শ্রমিক বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন খড়্গপুরের রশ্মি মেটালিক্স কারখানায়। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও এক শ্রমিক। শুক্রবার দুপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধারে সাদাতপুর থানার কাছে ওই শিল্পসংস্থার পিগ আয়রন কারখানায় এই ঘটনার করে কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকেরা। মৃত শ্রমিকের নাম ডি প্রসাদ (২৫)। জখম হয়েছেন তাঁরই ভাই বছর বাইশের ডি চরণ কুমার। দু’জনেই নিমপুরা ঘেঁষা দেওয়ানমারোর বাসিন্দা। এই কারখানায় ঠিকাশ্রমিকের কাজ করতেন তাঁরা।

গত শনিবার এই পিগ আয়রন কারখানাতেই নির্গত গ্যাসের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক শ্রমিকের। ঝাড়গ্রামের পাটোয়ারি পরিবার ‘রশ্মি গোষ্ঠী’ সাহাচকের কাছে ৬নম্বর জাতীয় সড়কে ধারে এই পিগ্ আয়রনের কারাখানাটি তৈরি করেছিল। এই কারখানায় এখনও পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর নজির রয়েছে। বছর তিনেক আগে এলাকারই মথুরাকিসমতের কাছে আরও একটি সম্প্রসারিত প্রকল্প চালু করে রশ্মি। সেটি মূলত স্পঞ্জ আয়রন কারখানা ও ১২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্রকল্প। গত বছর অক্টোবরে সেখানে স্টোরেজ বাঙ্কার চাপা পড়ে এক ডাম্পার চালকের মৃত্যু হয়েছিল, জখম হয়েছিলেন তিন শ্রমিক। এর ঠিক দু’দিন পরেই পিগ আয়রন কারখানায় ‘স্ল্যাগ চেম্বারে’র গরম জলে পড়ে জখম হন এক ঠিকাশ্রমিক। ফের এই কারখানায় শ্রমিকের মত্যুতে তাই নিরাপত্তা নিয়েই অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকেরা।

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পিগ আয়রন কারখানার প্যালেট-৩ প্রকল্পে কাজ চলছিল। মেঝেতে বসে ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়ে ফ্যাব্রিকেশনের কাজ করছিলেন ডি প্রসাদ ও চরণ কুমার। নিয়মমাফিক ওয়েল্ডিং মেশিনের একটি তার বিদ্যুতের ‘আর্থিং’ (গ্রাউন্ডিং সিস্টেম) সংযোগের জন্য মাটির সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু আর্থিংয়ের ওই মাটিতে থাকা লোহার অংশে জল জমে যাওয়ায় এ দিন আর্থিং ব্যবস্থা কাজ করেনি। তার জেরে ওয়েল্ডিং মেশিনটি তড়িতবাহী হয়ে যায়। তা থেকেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যান ওই দুই ঠিকাশ্রমিক। মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় ডি প্রসাদের। চরণ কুমার মেডিক্যালেই চিকিৎসাধীন।

এ দিনের ঘটনার পরেই কারখানার শ্রমিকেরা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাজ বন্ধ করে দেন। শ্রমিক দেবাশিস মাইতি, প্রদীপ বাগদের কথায়, “এই কারখানায় নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। অধিকাংশ শ্রমিকের হেলমেট নেই, পায়ে বুটজুতো নেই।” একের পর এক দুর্ঘটনার পরেও কারখানা কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফেরেনি বলেও অভিযোগ শ্রমিকদের। এ দিনের ঘটনার পরে কারখানার আইএনটিটিইউসি মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “বারবার শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা কারখানার নিরাপত্তার গাফিলতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এমন ঘটনার পরেও হেলদোল কোনও হেলদোল দেখা যাচ্ছে না কর্তৃপক্ষের। মধ্যে তাই যতক্ষণ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়, ততক্ষণ কাজ করবেন না শ্রমিকেরা।”

ওই পিগ আয়রন কারখানার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (ওয়ার্কস) সুরেন্দ্রনাথ ঝাঁ অবশ্য বলেন, “আমরা শ্রমিক মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দেখছি। মৃতের পরিবারকে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” এ দিন তিনি আরও জানান, “শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে আলোচনা করা হচ্ছে।” তবে নিরাপত্তার দায় ঠিকাদারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন এই কারখানা-কর্তা।

কিন্তু কারখানার প্রধান নিয়োগকর্তা হিসেবে আপনারা কি দায় এড়াতে পারেন? এ প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সুরেন্দ্রনাথবাবুর জবাব, “এটা ঠিক আমাদেরও সতর্ক হওয়া উচিত। এর পরে নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়ই ভাবনাচিন্তা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rashmi metaliks kharagpur workers death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE