বেহাল খড়্গপুরের তালবাগিচা মার্কেট কমপ্লেক্স।—নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই গমগম করছে বাজার। সব্জি, মাছ-সহ হরেক পসরা নিয়ে হাজির ক্রেতারা। তবে বিকিকিনি চলছে খোলা আকাশের নীচে। আর পাশেই ছাউনি দেওয়া বাজার ভবন পরিণত হয়েছে আস্তাকুঁড়ে। রেলশহরের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ তালবাগিচা বাজারের এমনই দুর্দশা। উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের অধীনস্থ ওই বাজার ভবন দ্রুত সংস্কার এবং সম্প্রসারণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
দেশভাগের পরে ওপার বাংলার বহু মানুষ এ পারে এসে বসবাস শুরু করেন। তখনই কলোনি গড়ে উদ্বাস্তুদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সরকার। গড়া হয় এই সংক্রান্ত দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বিভিন্ন ধাপে ৭৯টি কলোনি গড়ে তোলা হয়। খড়্গপুরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে আইআইটি সংলগ্ন তালবাগিচা এলাকাতেও বহু উদ্বাস্তু বসবাস শুরু করেন। সেই সময় নিত্য প্রয়োজনীয় সব্জি বা মাছের জন্য স্থানীয় ট্যাংরা হাট বা নিমপুরা বাজার ছিল একমাত্র ঠিকানা। ক্রমে চাহিদা বাড়ায় তালবাগিচাতেই ১৯৭২ সালের পরে বাজার তৈরি হয়।
উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটি সূত্রে খবর, ১৯৭৪ সাল নাগাদ দফতরের বরাদ্দ করা ২৩লক্ষ টাকা ব্যয়ে তালবাগিচায় রাস্তা, পানীয় জলের বন্দোবস্তের সঙ্গেই ছাউনি দেওয়া মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়। ইংরেজির ‘এল’ অক্ষরের আকারের ওই মার্কেট কমপ্লেক্সে ৫ টাকার বিনিময়ে জায়গা দেওয়া হয় সব্জি ও মাছ ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭৮ সালের ঘুর্ণিঝড়ে মার্কেট কমপ্লক্সের টিনের ছাউনি উড়ে যায়। ছাউনি মেরামত করা হলেও সেই বছরেই ফের ঝড়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই মার্কেট কমপ্লেক্স। এরপরই ব্যবসায়ীরা পাশেই উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতেরর ময়দানে সরে আসেন। তারপর তিন দশকেরও বেশি এই ময়দানেই খোলা আকাশের নীচে চলছে বাজার।
পুনর্বাসন দফতরের আওতায় থাকা বাজারের ওই জমিতে কোনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এত বছরেও এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়নি পুরসভা। পুনর্বাসন দফতরে বহুবার জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে বহু মহিলা সব্জি বিক্রেতা আছেন। অথচ একটি শৌচাগার পর্যন্ত নেই। সব্জি ব্যবসায়ী উত্তম সরকারের কথায়, “মার্কেট কমপ্লেক্সের ছাউনি ভেঙে যাওয়ার পরে ভেবেছিলাম দু’-এক দিন মাঠে বসি। বাজার ভবন তো মেরামত হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। আমাদের অসুবিধার কথা কে শুনবে, তাই বুঝতে পারি না।”
দীর্ঘ দিনের অবহেলায় মার্কেট কমপ্লেক্সটি এখন একেবারেই জীর্ণ ভবন। যাতায়াতের পথে দোকান গজিয়েছে। পিছনে আবর্জনার স্তূপ। সেখানে সাপখোপের আস্তানা। তারই মধ্যে কিছুটা জায়গা বেছে ব্যবসা করছেন প্রবীণ মাছ বিক্রেতা শ্যামল সরকার। তিনি বলেন, “এখানে তো কেউ-ই আসে না। ব্যবসাটা ধরে রাখতে বসি, কিন্তু খদ্দের পাই না।” বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী দীপক দে-র কথায়, “সামান্য বৃষ্টিতে মাঠের জল গড়িয়ে সব্জিতে চলে আসে। সব্জি পচে যায়।” এই পরিস্থিতিতে মার্কেট কমপ্লেক্সের সংস্কার এবং সম্প্রসারণের দাবি জোরাল হচ্ছে।
এত বছরেও কেন হাল ফেরেনি বাজারের?
এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জন-প্রতিনিধিদের উদাসীনতাকেই দুষছেন ব্যবসায়ীরা। সেই বাম আমল থেকে বর্তমান তৃণমূল সরকার, কেউই এ বিষয়ে তত্পরতা দেখায়নি। এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মনোজ ধর অবশ্য বলেন, “আমরা উদাসীন এটা ভুল। পুনর্বাসন দফতরের টাকায় যেহেতু ব্লক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই মার্কেট কমপ্লেক্স গড়া হয়েছিল তাই আমাদের সময়ে ব্লকেই জানিয়েছিলাম। কিন্তু সংস্কার হয়নি। পুনর্বাসন দফতরের জমি হওয়ায় পুরসভাও এগিয়ে আসেনি।” বর্তমান তৃণমূল কাউন্সিলর তথা উদ্বাস্তু ত্রাণ-পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি জহরলাল পালের কথায়, “ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমিও চাই এই মার্কেট কমপ্লেক্স সংস্কার হোক। বাম সরকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি। আমি কমিটির আগামী বৈঠকে সংস্কারের প্রস্তাব রাখব।”
তবে এ বিষয়ে এখনও কিছুই জানেন না উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর। দফতরের জেলা আধিকারিক অনিমেষ ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের কাছে এই বিষয়ে কোনও প্রস্তাব নেই। প্রস্তাব এলে ভেবে দেখা হবে।” দফতরের পরিকল্পনা কমিটির সরকার মনোনীত সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের অবশ্য আশ্বাস, “মার্কেট কমপ্লেক্স থাকা সত্ত্বেও সংস্কারের অভাবে খোলা আকাশের নীচে এ ভাবে বাজার চলতে পারে না। আমি পদক্ষেপ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy