Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বানান ভুলেই নম্বর উঠছে কম

কমছে বই পড়ার প্রবণতা। নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করে কোনো বিষয় রপ্ত করার অভ্যাসও উধাও। ফল, পরীক্ষার খাতায় অজস্র বানান ফুল। অনেকে প্রশ্নের উত্তর ভাল লিখলেও বানান ভুলের জন্য কাটা যাচ্ছে নম্বর, মত অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

কমছে বই পড়ার প্রবণতা। নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করে কোনো বিষয় রপ্ত করার অভ্যাসও উধাও। ফল, পরীক্ষার খাতায় অজস্র বানান ফুল। অনেকে প্রশ্নের উত্তর ভাল লিখলেও বানান ভুলের জন্য কাটা যাচ্ছে নম্বর, মত অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকার। ফলে নম্বর কমছে বাংলা ও ইংরাজিতে। তুলনায় বিজ্ঞান বিভাগে প্রাপ্ত নম্বরের হার ভাল।

চলতি বছরে পুজোর আগেই মিটে গিয়েছে মাধ্যমিকের টেস্ট। পুজোর ছুটির পর টেস্টের ফল প্রকাশিত হতেই দেখা যাচ্ছে, ইংরাজি ও বাংলায় কমেছে পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বর। তুলনায় ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞানে প্রাপ্ত নম্বরের হার ভাল। মেদিনীপুর টাউন স্কুলের ছাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নয়ন ভুঁইয়া এ বার টেস্টে ৭০.৭১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ইংরাজিতে তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫। নয়নের মতো আরও অনেক ছাত্রর ক্ষেত্রেই ইংরাজিতে প্রাপ্ত নম্বর ৬০ শতাংশরে আশেপাশে। সায়ন ঘোষ এ বার টেস্টে ৭৯.২৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। অঙ্ক এবং ইংরাজিতে তার প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ এবং ৬২। বাংলায় ৭০। সে ভৌতবিজ্ঞান ও জীবনবিজ্ঞানে পেয়েছে যথাক্রমে ৮৪ ও ৯০। আরেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দেবপ্রসাদ ডোগরা এ বার টেস্টে ৮০.৪২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। অঙ্ক এবং ইংরাজিতে তার প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৭৭ এবং ৬৬। বাংলায় ৭৪। ভৌতবিজ্ঞানে ৯০।
জীবনবিজ্ঞানে ৯০।

বানান ভুলের পিছনে পড়ুয়াদের ধৈর্য কমে যাওয়াকেও দায়ী করছেন অনেক শিক্ষক। তাঁদের মতে, বই পড়ার অভ্যাস কমছে। বই বলতে শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, যে কোনও ধরনের ভাল মানের বই-ই একজন পড়ুয়ার জ্ঞান বাড়ায়। সুন্দরবা়ড় হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক ঋত্বিক ত্রিপাঠীর কথায়, “ছেলেমেয়েদের মধ্যে গল্পের বই, সাহিত্যের বই পড়ার আগ্রহ কমে গিয়েছে। বানান ভুলের একটা কারণ এটাও। তাই দুর্গা বানান অনেকে দূর্গা লিখছে। পূজা বানান পুজা লিখছে।”

অধিকাংশ শিক্ষকের মতে, ছাত্রছাত্রীদের অনেকের মধ্যে প্রাথমিক ধারণাগুলো তৈরি হচ্ছে না। তাই বানান ভুল হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল নেই। অতি সাধারণ মানের ছেলেও নবম শ্রেণিতে উঠে যাচ্ছে। অথচ, নবম শ্রেণিতে ওঠার আগে যে ভিতটা তাদের তৈরি হওয়া দরকার ছিল তা হচ্ছে না। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘একাংশ শিক্ষকও ক্লাসে পড়ানোর ক্ষেত্রে উদাসীন। এই উদাসীন ভাব থাকার একটা কারণও পাশ-ফেল না থাকা। শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, পাশ-ফেল যখন নেই, তখন যেমন-তেমন করে পড়ালেই হল!”

শালবনির ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের মনে রাখা প্রয়োজন, উত্তরপত্রে যে শব্দটি সে লিখবে সেই শব্দের বানানটি সঠিক হওয়া প্রয়োজন। একটি ভাল উত্তরের মধ্যে কয়েকটি ভুল বানানযুক্ত শব্দ সেই উত্তরের মান অনেকখানি কমিয়ে দিতে পারে। তা হচ্ছেও।” নিয়মিত অনুশীলন না করাও বানান ভুলের কারণ বলে মনে করছেন একাংশ শিক্ষক। নিতাই ঘোষ, সুমনা দত্ত প্রমুখ অভিভাবকদের মতে, “যে কোনও বিষয়ের গভীরে পৌঁছনোর প্রাথমিক ধারণাগুলো তৈরি হয় স্কুলেই। এখন স্কুলে আর আগের মতো পড়ানো হয় কোথায়! একাংশ শিক্ষকের মধ্যে উদাসীনতা রয়েছে। সকলে সমান যত্ন নিয়ে পড়ান না। এখন পড়াশোনা অনেকটা গৃহশিক্ষক নির্ভর
হয়ে পড়ছে।”

তুলনামূলক ভাবে বিজ্ঞান বিভাগে ভাল নম্বর হওয়ার কারণ কী?

সায়ন-দেবপ্রসাদরা বলছে, “জীবনবিজ্ঞান- ভৌতবিজ্ঞানই সবথেকে পছন্দের বিষয়। পড়তে খুব ভাল লাগে।” বিজ্ঞান বিভাগের মতো সমান ঝোঁক যে কলা বিভাগে নেই, তাও মানছে তারা। শালবনির মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলেন, “গ্রামাঞ্চলে এখন বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করলে সহজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে।” তাঁর কথায়, “এখন বেশি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে। ফলে, নম্বর পাওয়াও সহজ হচ্ছে।” একই বক্তব্য কেশপুরের তোড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্‌পল গুড়ের। একাংশ শিক্ষকেরও বক্তব্য, ছেলেমেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা থেকেই বাবামায়েরা বিজ্ঞান বিভাগে বেশি জোর দিচ্ছেন। ফলে পড়ুয়াদের মধ্যেও কলাবিভাগকে অবহেলা করার মানসিকতা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে কমছে কলা
বিভাগের নম্বরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE