খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গ। — রামপ্রসাদ সাউ
এ এক অন্য ‘রেফার’।
রোগী নয়, ময়না-তদন্তের বিশেষজ্ঞ না থাকায় কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে মৃতদেহই ‘রেফার’ করা হচ্ছে অন্য হাসপাতালে।
সমস্যাটা দু’একদিনের নয়। বছর খানেক ধরেই খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে কোনও অটপ্সি সার্জন (ময়না-তদন্তের বিশেষজ্ঞ) নেই। সাধারণ চিকিৎসকদেরই চালাতে হচ্ছে ময়না-তদন্তের কাজ। খড়্গপুর রেল হাসপাতাল, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল ও ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালেও ছবিটা একই।
গত মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ খড়্গপুর রেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রসূতি সুপ্রিয়া ভক্তার। হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সরব হন মৃতার পরিজনরা। থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। মৃত্যুর সঠিক কারন জানতে গত বুধবার দুপুরে ময়না-তদন্তের জন্য খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহ পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দুপুরে ময়না-তদন্ত করতে গিয়ে চিকিৎসক দেখেন মৃতার পেটে দু’টি কাটা দাগ রয়েছে। তারপরই মৃতদেহ ময়না-তদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করা হয়। ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন রোগীর পরিজনরা।
বছর তেইশের মৃতা সুপ্রিয়াদেবীর স্বামী সন্তু ভক্তার কথায়, “স্ত্রীর মৃত্যুর পরে ময়না-তদন্তের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা ধরে আমরা মৃতদেহ আঁকড়ে ছিলাম। সেই সময় বাড়ির লোকেদের মানসিক অবস্থা কী ভাবুন তো? এরপরে ফের স্ত্রীর দেহ মেদিনীপুরে স্থানান্তর করা হল। এসব কী মেনে নেওয়া সম্ভব’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিশেষজ্ঞ না থাকায় বাধ্য হয়ে স্ত্রীর দেহ মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যেতে হল। আমি চাই একজন ময়না-তদন্ত বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হোক।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যালে আলাদা ‘ফরেন্সিক’ বিভাগ থাকায় চার জন অটপ্সি সার্জন রয়েছেন। তবে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নেই কোনও বিশেষজ্ঞ। অথচ এই হাসপাতালে দাঁতন, মোহনপুর, পিংলা, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়-সহ ১০টি ব্লকে কারও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়। শুধু তাই নয়, রেল পুলিশের অধীন এলাকায় দেহ উদ্ধার বা ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুর মতো ঘটনাতেও ময়না-তদন্তের জন্য মৃতদেহ আনা হয় খড়্গপুর হাসপাতালে। গড়ে প্রতি মাসে এই হাসপাতালে ৭০টি দেহ ময়না-তদন্ত করা হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। বিশেষজ্ঞ না থাকায় সামান্য জটিলতা হলেই দেহ মেদিনীপুর মেডিক্যালে ‘রেফার’ করা হয় বলে একাংশের দাবি। ফলে বাড়ছে কাজের চাপও।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই খড়্গপুর হাসপাতালে অটপ্সি সার্জন নেই। ২০১৪ সালে সোমনাথ মাইতি নামে এক বিশেষজ্ঞকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালের অগস্টে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে বদলি করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে নতুন করে হাসপাতালে কোনও অটপ্সি সার্জন নিয়োগ করা হয়নি। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই হাসপাতালের অন্য বিভাগের চিকিৎসকরা ময়না-তদন্তের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অভিযোগ, ময়না-তদন্তে দেরি হওয়ায় মৃতের পরিজনদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় লাশকাটা ঘরের কর্মীদের। এক কর্মী সুনীল ঘোড়াই বলেন, “বিশেষজ্ঞ থাকলে সমস্যা হয় না। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞ না থাকায় মৃতদেহ স্থানান্তর করলেই তাঁর বাড়ির লোকেরা চটে যান। আমাদের সব অশান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।”
হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক মাস আগে হাসপাতালে একজন সার্জন থাকলেও তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে মৃতদেহ ‘রেফার’ করতে হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি। এখনও কোনও বিশেষজ্ঞ আসেননি।” সমস্যা মেনে নিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও। তিনি বলেন, “জেলায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল ছাড়া কোনও হাসপাতালেই অটপ্সি সার্জন নেই। স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছি। দেখা যাক কতদূর কী হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy