Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
তমলুকে দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরা

বাস হাতেগোনা, ফাঁকাই পড়ে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড

নামেই কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। দু’কোটি টাকা খরচ করে তমলুকে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হলেও সেখানে সারাদিনে সাকুল্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাস আসে। কিন্তু হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক দিয়ে হলদিয়া-মেচেদা, মেদিনীপুর, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটের বাস চলাচল করলেও সেগুলি বাসস্ট্যান্ডে আসে না বলে অভিযোগ।

ফাঁকা তমলুক সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড। —নিজস্ব চিত্র।

ফাঁকা তমলুক সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

নামেই কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। দু’কোটি টাকা খরচ করে তমলুকে বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হলেও সেখানে সারাদিনে সাকুল্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাস আসে। কিন্তু হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক দিয়ে হলদিয়া-মেচেদা, মেদিনীপুর, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটের বাস চলাচল করলেও সেগুলি বাসস্ট্যান্ডে আসে না বলে অভিযোগ। ফলে ওই ফাঁকা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন অফিস ভবনের পাশে ইতিমধ্যেই বেআইনি ভাবে দোকান গড়ে উঠেছে। তাম্রলিপ্ত পুরসভার প্রধান দেবিকা মাইতি এই পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, “ওই বাসস্ট্যান্ডে যাতে বিভিন্ন রুটের বাস যাতায়াত করে সে জন্য বাস মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু বাস মালিকরা রাজ্য সড়ক থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বাস যাতায়াতের জন্য চওড়া রাস্তা না থাকার সমস্যার কথা জানিয়েছে। তাই বাসস্ট্যান্ডে এখনও অনেক বাস যাতায়াত করছে না। ওই রাস্তাটি চওড়া করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর হলেও সেখানে এতদিন কোনও কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড ছিল না। ফলে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক, তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক, মেচেদা-দিঘা, নন্দীগ্রাম, শ্রীরামপুর, টেংরাখালি, পুরসাঘাট রুটের যাত্রী বাসগুলি শহরের মানিকতলা, শঙ্করআড়া, হাসপাতাল মোড়, ডিএম অফিস, নিমতলা প্রভৃতি বাস স্টপেজের সড়কের উপরেই দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করত। রাস্তায় যানজটে যাত্রীদের সমস্যা হত। কয়েকবছর আগে যাত্রীদের বাসে ওঠানামা-সহ বিভিন্ন রুটের বাসে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তমলুক শহরের মধ্যে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। বাম আমলে তমলুক পুরসভার উদ্যোগে ওই বাসস্ট্যান্ড তৈরির জন্য তমলুক রেলস্টেশন সংলগ্ন কৃষি বিপণন দফতরের দেওয়া এক একর জমিতে বাসস্ট্যান্ডের কাজ শুরু হয়।

বাসস্ট্যান্ড তৈরির জন্য জলাজমি ভরাট, বাসস্ট্যান্ডের চাতাল ও যাত্রী প্রতীক্ষালয়-সহ অফিস ভবন, যাতায়াতের রাস্তা তৈরি প্রভৃতি কাজের জন্য রাজ্যের পরিবহণ দফতর কয়েক দফায় টাকা বরাদ্দ করে। ইতিমধ্যে ২০১০ সালের নির্বাচনে জিতে পুরসভার ক্ষমতায় আসে তৃণমল। দীর্ঘদিন ধরে ঢিমেতালে বাসস্ট্যান্ড কাজ চলার পর ওই কাজ সম্পূর্ণ হয়। চলতি বছরের ২ মার্চ তমলুক কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু তমলুক রেল স্টেশন সংলগ্ন ওই কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের কাছেই হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক দিয়ে হলদিয়া-মেচেদা, মেদিনীপুর, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটের বাস চলাচল করলেও সেগুলি বাসস্ট্যান্ডে আসে না বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র তমলুক-ঘাটাল রুটের কয়েকটি বাস সারাদিনে কয়েকবার যাতায়াত করে। ফলে সারাদিনে অধিকাংশ সময় বাসস্ট্যান্ড খালি অবস্থায় পড়ে থাকে। এর ফলে রেল স্টেশন থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। বাধ্য হয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে ট্রেন যাত্রীরা ভ্যান রিকশায় যাতায়াত করেন।

অনেক সময়ই সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কোনও বাস নেই। কোনও অপেক্ষমান বাস যাত্রীও নেই। ফাঁকা বাসস্ট্যান্ডের চাতালের অধিকাংশ অংশে স্টোনচিপসের খোয়া বেরিয়ে পড়েছে। বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতীক্ষালয়-সহ অফিস ভবনে এক জন কর্মী বসে রয়েছেন। ওই অফিস ভবনের মধ্যে পুরুষ, মহিলাদের জন্য আলাদা বিশ্রামাগার, শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। পুরসভার পরিচালনায় থাকা বাসস্ট্যান্ডের দেখভালের জন্য দু’জন কর্মী রয়েছেন। পুরসভা নিযুক্ত ওই কর্মী জানান, সারাদিনে সকাল ও বিকেল মিলিয়ে তমলুক-ঘাটাল রুটের ছ’টি বাস এখান থেকে যাতায়াত করে। সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে কয়েকটি বাস আসে। আর দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কয়েকটি বাস আসে। ওই কর্মী জানান, যে কয়েকটি বাস এখান থেকে যাতায়াত করে তাতে ভাল সংখ্যক যাত্রী ওঠানামা করে। কিন্তু ওই রুটের বাস ছাড়া আর কোনও রুটের বাস এখানে আসে না। ফলে যাত্রীদের আনাগোনাও কম।

প্রশ্ন হল, সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করা হলদিয়া-মেচেদা রুটের বাসগুলি এই কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে আসে না কেন?

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক সামসের আরেফিন বলেন, “হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক থেকে ওই বাসস্ট্যান্ডে যাতায়াতের পাকা রাস্তাটি যথেষ্ট প্রশস্ত না হওয়ায় দু’টি বাস পাশপাশি যাতায়াত করতে পারে না। তাই আমরা রাস্তা চওড়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলাম। রাস্তা প্রশস্ত হলেই কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে বাস যাতায়াত করবে।” পুরসভার পক্ষ থেকে ওই কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “ হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত প্রায় আধ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পাকা রাস্তাটি রেল দফতরের। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে ওই রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছেন। ইতিমধ্যে রেলের কাছ থেকে ওই রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই এই কাজ শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tamluk bus stand bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE