চণ্ডিয়া নদী দেখছেন বিধায়ক। —নিজস্ব চিত্র।
কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কারের ফলে নদীর জল উপচে বন্যার প্রবণতা কমেছে। তবু প্লাবন ঠেকানো গেল না হল সবং ও পিংলায়। ভারী বৃষ্টিতে শনিবার সকাল থেকে এই দুই ব্লকের নিকাশি অবরুদ্ধ হয়ে যায়। এতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে প্রায় ৭৯টি গ্রাম। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পিংলা ব্লকের গোবর্ধনপুর ও পিণ্ডরুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। এ দিন প্রশাসনের কর্তা থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্যরা এই দুই ব্লক পরিদর্শন করেন। এসেছিলেন সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও।
পূর্ণিমায় জোয়ার ও টানা বৃষ্টিতে শুক্রবার কেলেঘাই, কপালেশ্বরী, চণ্ডীয়া নদী ফুলেফেঁপে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে সবং ও পিংলা ব্লকের নিচু এলাকার জল বের করে দেওয়ার জন্য স্ল্যুইস গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নিকাশি সমস্যায় জেরবার হয়েছে দুই ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। চণ্ডীয়া নদীর জলে পিংলা ব্লকের গোবর্ধনপুর ও পিণ্ডরুই পঞ্চায়েত এলাকায় ছিল কোমর সমান জল। গোবর্ধনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রহ্মাণীচক, পদিমা, রাত্রাপুর, বনমালীবাড়, সাহরদা-সহ ১৬টি গ্রামের জলে প্রায় কয়েকশো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনও কোথাও ত্রাণ শিবির খোলা হয়নি। ত্রিপলের দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা।
এ দিন এলাকায় আসেন সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। প্রথমে সবং পৌঁছে তিনি কয়েকটি এলাকায় যান। এরপর বিডিও ও এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মানসবাবু যান পিংলা ব্লকের বরিশায়। সেখানে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ঘেঁষা বলাইপণ্ডা সেতুর নিচে কচুরিপানা জমে থাকতে দেখে তমলুকের সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে তা পরিষ্কারের জন্য অনুরোধ জানান। এলাকা পরিদর্শনের পরে মানসবাবু বলেন, ‘‘কপালেশ্বরী, কেলেঘাইয়ের জল বিপদসীমার উপরে বইছে। চণ্ডীয়ার নদীবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেচ দফতরের ছুটি বাতিল করে বাঁধ, সেতু মেরামতি হোক।’’
অকূল পাথার। পিংলার মালিকগ্রামে শনিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
সবংয়ের কেলেঘাই ও কপালেশ্বরী নদী ঘেঁষা প্রায় ৯টি অঞ্চল জমা জলে বিপর্যস্ত। বহু মানুষ গৃহবন্দি। প্রায় ৫০টি মাটির বাড়িতে ধস দেখা দিয়েছে। সবং ব্লকের বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতের মুরারিচক, কালিদহচড়া, সাতবেটিয়া, বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের শীলতদা, রামভদ্রপুর, মোহার গ্রাম পঞ্চায়েতের দুবরাজ, বাসুলিয়া গ্রাম ক্ষতির মুখে। চাউলকুড়ি, ভেমুয়া, বলপাই, নারায়নবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতে জমা জলে মানুষ স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। দশগ্রামের বাঙালদারি ও চাউলকুড়ি জমিদারি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
পিংলার পিণ্ডরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপলদা, দামোদরচক, ডঙলসা, কালুখাড়া-১২টি গ্রাম জলের তলায় চলে গিয়েছে। গোবর্ধনপুরের বিশ্বনাথ জানা, পিণ্ডরুইয়ের অনিলকুমার বেরা বলেন, ‘‘আমাদের এলাকার সব রাস্তা জলের তলায়। প্রচুর বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বৃষ্টিতে চাষেও ক্ষতি বাড়ছে।’’ এ দিন থেকে ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ উপলদা হাইস্কুল, ডংলসা হাইস্কুল, গোবর্ধনপুর মধ্য প্রাইমারি, রাগপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ দিন স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য অজিত মাইতি, সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ ওই জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে অজিতবাবু বলেন, ‘‘বৃষ্টির জল বেরোতে না পেরে এই অবস্থা। পানীয় জলের পাউচের ব্যবস্থা করেছি।’’
এ দিনই সবংয়ে যান তৃণমূল ব্লক সভাপতি প্রভাত মাইতিকে। তিনি বলেন, ‘নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় জল নিকাশি বন্ধ হয়েছে। ব্লক প্রশাসন ৪০০টি ত্রিপল দিয়েছে। আরও ত্রিপল দিতে আমি জেলায় অনুরোধ জানিয়েছি।’’ এ দিন পিংলার গোবর্ধনপুর ও পিণ্ডরুইয়ে এ দিন ক্ষোভ দেখা যায়। এলাকা পরিদর্শনের পরে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রবল বৃষ্টিতে পিংলা ব্লকের ওই দুই গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ কয়েকটি নিচু এলাকায় জল জমে গিয়েছে। সবংয়ের কিছু অংশে জল জমার খবর পেয়েছি। তবে পিংলার পরিস্থিতি তুলনায় খারাপ। এখনও ত্রাণ শিবির চালু না হলেও মানুষ স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা দুই ব্লকে এক হাজার করে ত্রিপলের ব্যবস্থা করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy