Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মডেল স্টেশন খড়্গপুর বাজেটে ব্রাত্য

বহু দিন আগেই মডেল স্টেশন হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল খড়্গপুর। তারপর তাকে ঘোষণা করা হয় এ ওয়ান স্টেশন হিসেবে। তবু বিকল টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, নিম্নমানের খাবার, অপরিচ্ছন্ন শৌচালয়, ঢিলেঢালা নিরাপত্তা, বিলম্ব ট্রেন চলাচল সংক্রান্ত নানা অভাব-অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। এ বারের রেলবাজেটে যাত্রী পরিষেবা ও পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে সর্বাধিক জোর দিয়েছেন মোদী সরকারের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু।

সহায়ক নেই। খড়্গপুর স্টেশনে টিকিট কাটার যন্ত্র ব্যবহারে ভোগান্তি যাত্রীদের।

সহায়ক নেই। খড়্গপুর স্টেশনে টিকিট কাটার যন্ত্র ব্যবহারে ভোগান্তি যাত্রীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

বহু দিন আগেই মডেল স্টেশন হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল খড়্গপুর। তারপর তাকে ঘোষণা করা হয় এ ওয়ান স্টেশন হিসেবে। তবু বিকল টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, নিম্নমানের খাবার, অপরিচ্ছন্ন শৌচালয়, ঢিলেঢালা নিরাপত্তা, বিলম্ব ট্রেন চলাচল সংক্রান্ত নানা অভাব-অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। এ বারের রেলবাজেটে যাত্রী পরিষেবা ও পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে সর্বাধিক জোর দিয়েছেন মোদী সরকারের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তবে বৃহস্পতিবার বাজেট পেশের সময় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশন খড়্গপুরে পুরনো প্রকল্প রূপায়ণ বা যাত্রী পরিষেবার হাল ফেরানো নিয়ে কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত করেননি রেলমন্ত্রী। ফলে, রেলশহর খড়্গপুরের বাসিন্দারা থেকে শুরু করে এই ডিভিশনে নিত্য যাতায়াতকারী রেলযাত্রীরা হতাশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ঘোষিত সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও লোকো পাইলট ট্রেনিং সেন্টারের ভবিষ্যৎ নিয়েও রয়ে গিয়েছে প্রশ্ন।

অ্যাসোসিয়েশন ফর মেদিনীপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার্সের সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু পাল বলেন, “বাজেটে খড়্গপুর ডিভিশনের জন্য স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। পরিচ্ছন্নতা ও পরিকাঠামো নিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হলে ভাল। তবে সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচল, টিকিট ভেন্ডিং মেশিনে সহায়ক নিয়োগ, পরিচ্ছন্নতা, এবং নিরাপত্তার দাবি আমাদের থাকছে।”

ফলে, এ বার রেলবাজেটে কী হতে চলেছে, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। অনেকেই এ দিন বেলা ১১টা থেকে টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসে ছিলেন নতুন কিছু ঘোষণার অপেক্ষায়। তবে বাজেটে শিকে ছেঁড়েনি। খড়্গপুর স্টেশনের রেলযাত্রীরা তাই এ দিন নানা অভাব-অভিযোগের কথা শোনালেন। খড়্গপুর ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের চাপ কমাতে একাধিক অটোমেটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এখন মেদিনীপুর, বাগনান, সাঁতরাগাছি, পাঁশকুড়া, মেচেদা, গিরিময়দান, বেলদা, ঝাড়গ্রাম-সহ বিভিন্ন স্টেশনে মেশিনগুলির অধিকাংশই বিকল হয়ে গিয়েছে। যেখানে চালু রয়েছে সেখানেও মেশিন ব্যবহারের পদ্ধতি না জানায় তা পড়েই থাকে। রেল সূত্রে খবর, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন ব্যবহারের সুবিধার্থে একজন করে সহায়ক নিয়োগ করার কথা। অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীদের ওই পদে নিয়োগ করার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহায়কের অভাব রয়েছে। মেশিন চললেও টিকিটের কাগজের রোল, কালির অভাব দেখা দেয়। ফলে, টিকিট কাউন্টারের চাপ কমেনি। অথচ এ বারের রেল বাজেটে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৫ মিনিটের বেশি লাইনে দাঁড়াতে হবে না। খড়্গপুরের রেলযাত্রী সঞ্জীব কুমার, রেলকর্মী কিরণ কাডুলনা বলেন, “লাইনে না দাঁড়িয়ে মেশিন থেকে টিকিট কাটার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছি না। এই মেশিন কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটাই তো আমাদের জানা নেই।”

খড়্গপুর ডিভিশনের অধিকাংশ স্টেশনে পানীয় জলের ব্যবস্থাও যথাযথ নয়। কোথাও আয়রন মিশ্রিত লাল জল পড়ে তো কোথাও গরম জল। খড়্গপুর রেল ডিভিশনের সদর স্টেশন খড়্গপুরেও পানীয় জলের জায়গা অপরিচ্ছন্ন। কলকাতা থেকে নিত্য খড়্গপুরে যাতায়াতকারী বেসরকারি ংস্থার কর্মী অমরনাথ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “স্বচ্ছতার কথা বলা হচ্ছে। অথচ এই স্টেশনে তো অধিকাংশ পানীয় জলের জায়গায় নোংরা। এ দিকে রেলের নজর দেওয়া উচিত।” ট্রেনের পরিচ্ছন্নতা নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। প্রবীণ ব্যবসায়ী গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “ট্রেনের সংখ্যাবৃদ্ধির না করার সিদ্ধান্তে আমি সহমত। কিন্তু প্রতিটি ট্রেন যাতে ঠিক সময়ে চলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।” খড়্গপুর ডিভিশনের অধিকাংশ স্টেশনে ট্রেন ইন্ডিকেশন বোর্ড নেই। থাকলেও বিকল। কলেজ শিক্ষক রঙ্গনাথ দত্তের কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে এই ইন্ডিকেশন বোর্ড খারাপ। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ উদাসীন।”

রেলের দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় ট্রেনের নিরাপত্তার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আরপিএফ কম থাকায় প্রতিটি দূরপাল্লার ট্রেন বা লোকাল ট্রেনে হামেশাই নানা ঘটনা ঘটে। মেয়ে আইআইটির ছাত্রী হওয়ায় দিল্লির বাসিন্দা সবিতা কানওয়ার খড়্গপুরে যাতায়াত করেন। রাজধানী এক্সপ্রেসে আসা সবিতাদেবীর কথায়, “রাজধানী এক্সপ্রেসেও নিরাপত্তা এখন ঢিলেঢালা। আরপিএফ চোখে পড়ে না। রাতে একা ট্রেনের বাথরুমে যেতে ভয় করে।” রেল সূত্রে খবর, এই সমস্যার কারণ পর্যাপ্ত রেল সুরক্ষা বাহিনীর অভাব। এই মুহূর্তে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে আরপিএফের ৪৮০০টি পদের মধ্যে প্রায় দু’হাজারই শূন্য। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আরপিএফ সংগঠনের সম্পাদক প্রমোদ কুমার বলেন, “আমাদের পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে রেলের নিরাপত্তা যথাযথ দেওয়া সম্ভব হয় না। প্রায় ৪০ শতাংশ শূন্যপদে নিয়োগের দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি।” খাবারের মান নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। নয়াদিল্লিতে কর্মরত দাঁতনের ঈশ্বরচন্দ্র দ্বিবেদীর কথায়, “আমার মতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হোক। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা ও পরিষেবা উন্নতমানের হওয়া দরকার। রাজধানীর মতো ট্রেনে বায়ো টয়েলেটও অপরিচ্ছন্ন। খাবারও নিম্নমানের।”

খড়্গপুর ডিভিশনের জন্য ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্পও বিঁশ বাও জলে। ২০১০ সালে তদানীন্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খড়্গপুরে অ্যাডভান্সড্ লোকো পাইলট ট্রেনিং সেন্টার তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। বরাদ্দ হয়েছিল ১২ কোটি টাকা। এত দিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টাটানগরে লোকো ট্রেনের চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। আপ খড়্গপুরে ছিল ডিজেল ট্রেনের চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এখন চাঁদমারি ময়দানের কাছে রেলের জমি জঙ্গলে রূপান্তরিত হলেও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। বাজেটেও এ নিয়ে আলাদা ঘোষণা নেই। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মেনস্ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রহ্লাদ সিংহ বলেন, “ওই ট্রেনিং সেন্টার চালু হলে অনেক উন্নতমানের প্রশিক্ষণ পেতেন চালকেরা। সেটা চালুর স্পষ্ট কোনও বার্তা এই রেল বাজেটে নেই। তবে ঘোষিত প্রকল্পের কাজ ধীরে করার কথা বলায় কিছুটা আশা থাকছে।” এ প্রসঙ্গে খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “২০১০ সালে ঘোষিত ওই প্রকল্পের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। আমাদের কাছে নির্দেশ এলেই কাজ শুরু হবে।” তাঁর আরও সংযোজন, “যে ভাবে টাকা আসে, আমরা সেই মতো পরিকাঠামো ও পরিষেবা বাড়ানো কাজ করি। সে ক্ষেত্রে ডিভিশনের মূল স্টেশন খড়্গপুরকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়।”

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rail budget kharagpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE