শালবনির গোদাপিয়াশালে চলছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভার প্রস্তুতি (বাঁ দিকে)। এই এলাকাতেই সিমেন্ট কারখানারও উদ্বোধন করবেন তিনি (ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বেশ কয়েকবার পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আগে কখনও বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের এমন ব্যস্ততা নজরে পড়েনি!
শনিবার আচমকাই মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি সাব স্টেশনের একটি ট্রান্সফরমারে সমস্যা ধরা পড়ে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ শুরু হয়। শহরের জেলা পরিষদের সভাকক্ষে প্রশাসনিক সভা করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সভাকক্ষের অদূরে বিদ্যুতের খুঁটিগুলোয় গাছের ডালপালা জড়িয়ে ছিল। দ্রুত সাফসুতরো করা হয়েছে তা-ও। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট এড়াতে একই লাইন বারবার পরীক্ষা করছেন ইঞ্জিনিয়ার-কর্মীরা। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সফরে চার-চারবার বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই না মেদিনীপুরে এমন ঘটনা ঘটুক!”
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে চার-চারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে মালদহে, তারপর মাদারিহাটে, মংপঙে। কিছু দিন আগে বীরভূমের বোলপুরে। মাদারিহাটে মুখ্যমন্ত্রীর সফরে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে রাত্রিবাস করবেন, যেখানে সভা করবেন, গত কয়েক দিন ধরেই সেখানে বারবার এসেছেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মকর্তা থেকে ইঞ্জিনিয়ার- কর্মীরা। লাইন পরীক্ষা- নিরীক্ষার পাশাপাশি বাতানুকূল যন্ত্রগুলোও ঠিকঠাক রয়েছে কি না দেখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক জেলা সফরে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্য প্রশাসনও। জেলা প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, পরিস্থিতি দেখে এ বার রাজ্য থেকেই অতি- সর্তক থাকার নির্দেশ এসেছিল জেলায়। এমন ঘটনার দায় পূর্ত দফতর এড়াতে পারে না। তাই পূর্ত দফতর এবং বিদ্যুৎ-দফতরকে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে ‘সুরক্ষা’ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। সেই মতো রবিবারও পূর্ত ও বিদ্যুৎ দফতরের কর্মকর্তা-ইঞ্জিনিয়ার-কর্মীরা ছোটাছুটি করেন। শেষ প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন।
মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ, সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। দুপুরে শালবনিতে এক সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন করবেন তিনি। তারপর গোদাপিয়াশালে সরকারি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন-শিলান্যাস হবে। কিছু মানুষকে সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধেও প্রদান করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে মেদিনীপুর শহরে ফিরে জেলা পরিষদের সভাকক্ষে তিনি প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। রবিবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যাবেন মেদিনীপুরে। থাকবেন শহরের সার্কিট হাউসে।
এ দিন সার্কিট হাউস এবং জেলা পরিষদ চত্বরে বিদ্যুতের লাইন পরীক্ষা করা হয়। সভাকক্ষ এবং সার্কিট হাউসের ঘরে যে সব বাতানুকূল যন্ত্র রয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাক রয়েছে কি না দেখা হয়। এই দুই এলাকাতেই জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকছে। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হলে তড়িঘড়ি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একাধিক ইঞ্জিনিয়ারও থাকবেন। মেদিনীপুরে মাঝেমধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে। শনি এবং রবিবারও কিছু সময়ের জন্য লোডশেডিং হয়। বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওন্যাল ম্যানেজার অমলেন্দু মাইতি বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি সাব-স্টেশনের একটি ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। দ্রুত তা মেরামত করা হয়।” জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ- কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “লোডশেডিং- এর সমস্যা নেই। লাইন মেরামতি করতে তো সাট- ডাউন করতেই হবে।”
এত তৎপরতা? মুখ্যমন্ত্রীর সফরে তাহলে বিদ্যুৎ- বিভ্রাট এড়ানো যাবে? বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলছেন, “আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব, আমরা ততটাই করেছি। শেষ মূহুর্তেও সমস্ত পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে অবশ্য আমাদের হাতে কিছু নেই। বজ্রপাত হলে কিন্তু বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হতেই পারে!” বিদ্যুৎ- বিভ্রাট এড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সফর নির্বিঘ্ন করতে ঠিক কতটা তৎপর প্রশাসন? বিশেষ করে মালদহ, মাদারিহাট, মংপং, বোলপুরের ঘটনার পর? রবিবার ছুটির দিনেও জেলা পরিষদে অনান্য দিনের মতো সমস্ত কাজকর্ম হয়েছে। জেলা প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, এদিন দুপুরে বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওন্যাল ম্যানেজার অমলেন্দুবাবুকে ফোন করেছিলেন জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ-কর্মাধ্যক্ষ অমূল্যবাবু। কর্মাধ্যক্ষের অনুরোধ ছিল, “আপনারা সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে কি না দেখে নিয়েছেন তো? তা-ও বিকেলে একবার সেফটি অফিসারকে পাঠিয়ে দেবেন। যদি কোথাও ত্রুটি থাকে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy