Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

‘লক্ষ্মণ-হীন’ জেলা সিপিএমে এ বার নতুন মুখ

জেলা সম্পাদকমণ্ডলী-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএমের নেতৃত্বের সবস্তরেই এত দিন আধিক্য ছিল লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠদের। কিন্তু, আলিমুদ্দিনের লক্ষ্মণ-বহিষ্কারের চার মাসের মাথায় তমালিকা পণ্ডা শেঠ-সহ নানা স্তরের একাধিক নেতৃত্বের শনিবারের পদত্যাগ, পরিবর্তে নতুন সদস্যদের অর্ন্তভুক্তি সিপিএমের জেলা রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

জেলা সম্পাদকমণ্ডলী-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের সিপিএমের নেতৃত্বের সবস্তরেই এত দিন আধিক্য ছিল লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠদের। কিন্তু, আলিমুদ্দিনের লক্ষ্মণ-বহিষ্কারের চার মাসের মাথায় তমালিকা পণ্ডা শেঠ-সহ নানা স্তরের একাধিক নেতৃত্বের শনিবারের পদত্যাগ, পরিবর্তে নতুন সদস্যদের অর্ন্তভুক্তি সিপিএমের জেলা রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিল।

অবিভক্ত মেদিনীপুর ভেঙে ২০০২ সালের শুরুতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠনের পর থেকেই দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে নিজের অনুগামী সদস্যের আধিক্য বজায় রেখে দলের কর্তৃত্ব কার্যত আপন হাতে রেখে দিয়েছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলন পর্বে অনেকটা কোণঠাসা হলেও সংগঠনের রাশ এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার হাতেই ছিল বলে সিপিএমেরই একাংশের দাবি। এর হাতেগরম উদাহরণ শনিবারের দলত্যাগের ঘটনা। ওই দিনই জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর মোট ৬ জন এবং জেলা কমিটির ১২ জন দল ছাড়েন। এঁদের প্রায় সকলেই লক্ষ্মণ-অনুগামী বলে পরিচিত। এর ফলে সিপিএমে লক্ষ্মণ-রাজ কার্যত শেষ হয়ে গেল।

পরিবর্তে উঠে এল নতুন সমীকরণ। কেমন? দলের নানা স্তরে সদ্য অর্ন্তভুক্ত নেতাদের অধিকাংশেরই লক্ষ্মণ শিবিরের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। শনিবারই পূর্ব মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক রবীন দেবের উপস্থিতিতে জেলা কমিটিতে আটজনকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এঁদের মধ্যে রয়েছেন কাঁথির বামপ্রার্থী তাপস সিংহ এবং তমলুকের বামপ্রার্থী শেখ ইব্রাহিম আলিও। অন্যরা হলেন চন্দ্রশেখর পাঁজা এবং অমল কুইল্যা। এ ছাড়া জেলা কমিটিতে স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে চারজনকে। এঁরা হলেন, সুশান্ত করণ, ভরত মাইতি, প্রজাপতি দাস এবং শেখ সহিদুল্লা। পাশাপাশি চণ্ডীপুরের সিপিএম নেতা বিদুৎ গুছাইতকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর আমন্ত্রিত সদস্য করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।

বস্তুত, দলে নতুন এই অর্ন্তভুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তমলুক ও কাঁথির দুই বামপ্রার্থীকে জেলা কমিটিতে স্থান দিয়ে তাঁদেরকে দলের নতুন মুখ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। নতুন দায়িত্ব পাওয়া সকল নেতারাই আগামী দিনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সংগঠনকে শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করাবেন বলে আশাপ্রকাশ করেছেন ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক রবীন দেব।

তমালিকাদেবীর সঙ্গে সঙ্গেই শনিবার সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়া, প্রণব দাস, প্রশান্ত পাত্র, শক্তিপদ বেরা পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এ ছাড়াও হলদিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুদর্শন মান্না, পাঁশকুড়ার তরুণ সামন্ত, তমলুক শহরের বিজন মিত্র, তমলুকের গৌরহরি মাইতি, মহিষাদলের শরৎ কুইল্যা, নন্দকুমারের হৃষীকেশ মাজি, খেজুরির জবেদ মল্লিক, কাঁথির সোয়েব মহম্মদ আটজন জোনাল কমিটির সম্পাদক ও নন্দীগ্রামের সিপিএম নেতা অশোক বেরা-সহ ১২ জন জেলা কমিটির সদস্য দলের জেলা নেত্ৃত্বের কাছে পদ্যতাগ পত্র জমা দেন।

রবিবার নন্দকুমারের রাজনগরে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য। সিপিএমের বহিষ্কৃত নেতা লক্ষ্মণ শেঠ ও তাঁর অনুগামীরা কী বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন? এর জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই অঞ্চলের একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে লক্ষ্মণ শেঠের গ্রহণযোগ্যতা আছে। তবে তিনি অতীতে তো বলেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হতে দেখতে চাইছেন। তাই দোদুল্যমান অবস্থা থেকে তিনি যদি একটা অবস্থানে আসেন তখন কথাবার্তা হবে।” তাঁক কথায়, “এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এ রকম কোনও খবর নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

zilla cpm new faces in cpm tamluk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE