Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
প্রাথমিক টেট-এর ফর্ম বিলি

লাইন সামলাতে হিমশিম পুলিশ, লাঠিচার্জের নালিশ

প্রাথমিক টেট- এর ফর্ম নেওয়া ঘিরে তুমুল বিশৃঙ্খলা তৈরি হল মেদিনীপুর শহরে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন ছাত্রছাত্রীরা। লাঠিচার্জও করল পুলিশ। পুলিশ অবশ্য লাঠিচার্জের কথা মানতে চায়নি। তাদের বক্তব্য, এক জায়গায় প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভিড় করেছিলেন। তাই লাইন ঠিক রাখতে সেখান থেকে তাঁদের একটু দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্কুলবাজারে ব্যাঙ্কে ফর্ম তোলার ভিড়। বুধবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

স্কুলবাজারে ব্যাঙ্কে ফর্ম তোলার ভিড়। বুধবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

প্রাথমিক টেট- এর ফর্ম নেওয়া ঘিরে তুমুল বিশৃঙ্খলা তৈরি হল মেদিনীপুর শহরে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন ছাত্রছাত্রীরা। লাঠিচার্জও করল পুলিশ। পুলিশ অবশ্য লাঠিচার্জের কথা মানতে চায়নি। তাদের বক্তব্য, এক জায়গায় প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভিড় করেছিলেন। তাই লাইন ঠিক রাখতে সেখান থেকে তাঁদের একটু দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মীদের হাতে লাঠি ছিল। তবে লাঠিচার্জের কোনও ঘটনা ঘটেনি। মেদিনীপুর মহকুমার মধ্যে মাত্র একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকেই ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। স্বভাবতই সকাল থেকে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন পড়ছে। মেদিনীপুর শহরের স্কুলবাজার এলাকায় রয়েছে এই ব্যাঙ্ক। কেন ফর্ম তুলতে এসে ছাত্রছাত্রীদের এ ভাবে সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে? সদুত্তর এড়িয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা বলেন, “ঠিক কি হয়েছে দেখছি। সবকিছু সুশৃঙ্খল ভাবে যাতে হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।” তাঁর দাবি, “শুরুর দিকেই একটু ভিড় হয়। আর এক- দু’দিন পর ছাত্রছাত্রীদের এত ভিড় থাকবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে!”

সংসদ সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের চারটি মহকুমার প্রতিটিতেই একটি করে ব্যাঙ্ক থেকে প্রাথমিক টেট-এর ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার থেকে এই ফর্ম দেওয়া শুরু হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের স্কুলবাজার এমনিতেই ঘিঞ্জি এলাকা। রাস্তার দু’পাশ অস্থায়ী দোকানদের দখলে চলে গিয়েছে। বুধবার ভোর থেকে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিতে শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। লাইনের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ব্যাঙ্ক খোলার পরই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও সকাল থেকে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। অশান্তির খবর পেয়ে বাড়তি পুলিশ যায় এলাকায়। আসেন কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী। এক সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। ধাক্কাধাক্কি হয়। ছাত্রছাত্রীদের কয়েকজন সামান্য জখমও হন। লাইন ঠিক করতে হিমশিম খায় পুলিশ। অভিযোগ, লাইন ঠিক করার নামে পুলিশ ছাত্রছাত্রীদের উপর লাঠিচার্জও করে। পুলিশ অবশ্য লাঠিচার্জের কথা মানতে চায়নি।

কেশপুরের বিশ্বজিত্‌ কোলে বলেন, ‘‘ভোর চারটের সময় মেদিনীপুরে এসেছি। ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছি। ব্যাঙ্ক খোলার পর আচমকা পুলিশ মারধর শুরু করে। ধস্তাধস্তিতে জামাও ছিঁড়ে গিয়েছে। পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আমাদের দোষ কি? আমরা পুলিশের মার খেতে এসেছি না পরীক্ষার ফর্ম তুলতে এসেছি?” সবংয়ের টুপুর প্রধান বলেন, “পুলিশ সকাল থেকে লাইন ঠিক রাখার চেষ্টা করেনি। ব্যাঙ্ক খোলার পর আচমকা লাঠিচার্জ শুরু করে। ভোর চারটে থেকে এসেছি। পরীক্ষার ফর্ম তুলতে এসে এমন বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে হবে, ভাবতে পারিনি।” কেশপুরের সৌরভ ঘোষ, গড়বেতার তমাল পালরাও ক্ষোভ উগরে দেন। তমালদের বক্তব্য, এটা ঘিঞ্জি এলাকা। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা। পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার বেড়েছে। পাশ করেছে সবমিলিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার পরীক্ষার্থী। অনেকেই ৫০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে। যাঁরা ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে, তাঁদের অনেকেই প্রাথমিকের টেট দেবে। এটা সংসদ কর্তৃপক্ষও ভেবে রেখেছেন। শহরের স্কুলবাজার এলাকার কাউন্সিলর কংগ্রেসের শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য সরকারের সঠিক পরিকল্পনা নেই। দূরদৃষ্টিও নেই। না- হলে এ ভাবে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হত না। পুলিশের ধমক খেতে হত না।” তাঁর কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্ন দেখানোর বদলে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা দেওয়া হচ্ছে। মেদিনীপুর মহকুমায় একটি মাত্র ব্যাঙ্ক থেকে প্রাথমিকের টেট- এর ফর্ম দেওয়া হচ্ছে, এটা ভাবা যায়?”

ছাত্রছাত্রীদের হয়রানি কমাতে শহরের আরও কয়েকটি ব্যাঙ্ক থেকে ফর্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান শহর কংগ্রেস সভাপতি তথা কাউন্সিলর সৌমেন খান। তাঁর কথায়, “যে ভাবে লাইন পড়ছে, তাতে শহরের ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই দায় হয়ে উঠেছে। প্রচুর মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। ছাত্রছাত্রীরাও নানা সমস্যায় পড়ছে। কেন মাত্র একটি ব্যাঙ্ক থেকে ফর্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত বুঝতে পারছি না। রাজ্য সরকারই বিশৃঙ্খলার পথ করে দিচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE