Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ঝড়-বৃষ্টিতে তছনছ মণ্ডপ

শহরের পুজো আকাশে আশঙ্কার মেঘ

মিনিট চল্লিশেকের ঝড়-বৃষ্টি। তাতেই তছনছ হয়ে গেল গেল একের পর এক মণ্ডপ। মহালয়ার আগের রাতে এই হঠাৎ দুর্যোগে মাথায় হাত মেদিনীপুরের পুজো উদ্যোক্তাদের। এক সপ্তাহের মধ্যে মণ্ডপের কাজ শেষ হবে কি না, সেটাই এখন ভাবনা। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেদিনীপুরের আকাশ ছিল পরিষ্কার। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ হঠাত্‌ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। মিনিট চল্লিশের দুর্যোগে শহরের বড় পুজোর মণ্ডপগুলো কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মেদিনীপুরের রাঙামাটি সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপ (বাঁ দিকে)।  রবীন্দ্রনগর পুজো মণ্ডপের সামনে জমে গিয়েছে জল (ডান দিকে)। ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ।

দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মেদিনীপুরের রাঙামাটি সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপ (বাঁ দিকে)। রবীন্দ্রনগর পুজো মণ্ডপের সামনে জমে গিয়েছে জল (ডান দিকে)। ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩৪
Share: Save:

মিনিট চল্লিশেকের ঝড়-বৃষ্টি। তাতেই তছনছ হয়ে গেল গেল একের পর এক মণ্ডপ। মহালয়ার আগের রাতে এই হঠাৎ দুর্যোগে মাথায় হাত মেদিনীপুরের পুজো উদ্যোক্তাদের। এক সপ্তাহের মধ্যে মণ্ডপের কাজ শেষ হবে কি না, সেটাই এখন ভাবনা।
রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেদিনীপুরের আকাশ ছিল পরিষ্কার। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ হঠাত্‌ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। মিনিট চল্লিশের দুর্যোগে শহরের বড় পুজোর মণ্ডপগুলো কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও মণ্ডপের কিছুটা ভেঙে পড়েছে, কোথাও ছিঁড়ে গিয়েছে কাপড়। কোথাও মণ্ডপের মধ্যে জল জমে বিভিন্ন কারুকাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুরের রাঙামাটিতে ভিন্ রাজ্যের এক মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। কাজ অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল। মণ্ডপের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মন্দিরের চূড়া। ঝড়-বৃষ্টিতে সেই চূড়াই ভেঙে গিয়েছে। রাঙামাটি সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা গোপালচন্দ্র কর্মকারের কথায় তাই একরাশ সংশয়। গোপালবাবু বলছেন, “অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেল। ৭০-৭৫ শতাংশ কাজ এগিয়ে গিয়েছিল। আবার নতুন করে সেই সব কাজ শুরু করতে হবে।’’ তিনি আরও জানান, পঞ্চমীর দিন পুজোর উদ্বোধন হবে বলে ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। ঘোষণা মতো ওই দিন যাতে পুজোর উদ্বোধন করা হয়, এখন সেই চেষ্টাই চলছে। দিনরাত এক করে কাজ করতে হবে।’’
তবে এ সপ্তাহে ফের বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে বলে মানছেন উদ্যোক্তারা। শহরের অরবিন্দনগর সর্বজনীনের অন্যতম কর্মকর্তা কার্তিক ধর বলেন, “ঝড়- বৃষ্টিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে আমাদের মণ্ডপের উচ্চতা খুব বেশি নয়। তাই বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে। এ ভাবে হঠাত্‌ ঝড়-বৃষ্টি হলে তো মণ্ডপ এবং চারপাশ সাজানো-গোছানো যাবে না।’’ রবীন্দ্রনগর সর্বজনীনের অন্যতম উদ্যোক্তা সোমনাথ দাসও মানছেন, “রবিবার রাতে যে ঝড়-বৃষ্টি হল, তাতে একটা সংশয় থেকেই যায়। পুজোর মুখে মাঝেমধ্যে আকাশ কালো করে ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি হলে তো সমস্যা। আশা করি, পুজোটা ভালয় ভালয় কাটবে। আর দুর্যোগ হবে না।’’
রবিবার রাতের ঝড়-বৃষ্টিতে মেদিনীপুর শহরে বেশ কয়েকটি তোরণ ভেঙে পড়ে। পথচলতি মানুষজন সমস্যায় পড়েন। দুর্গোত্‌সব উপলক্ষে বিজ্ঞাপনের তোরণ এখন শহর জুড়ে। গোলকুয়াচক, জেলা পরিষদ রোড, রবীন্দ্রনগর, জজকোর্ট রোডে তোরণ তৈরি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে এদের বেশ কয়েকটি তোরণ আংশিক, কয়েকটি আবার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। রাতে ভাঙা অংশও সরানো হয়নি। ফলে, ঝুঁকি নিয়েই পথ চলতে হয় বাসিন্দাদের। সোমবার সকালে ভাঙা অংশ সরিয়ে ফেলা হয়। তোরণগুলো নতুন করে তৈরির কাজও শুরু হয়। উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “দুর্যোগে কয়েকটি তোরণ ভেঙে গিয়েছিল। কয়েকটি এলাকায় রাতে সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি। এ দিন সকালে তোরণের ভাঙা অংশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’’

মেদিনীপুর শহরে বেশ কিছু বড় পুজো হয়। পুজো কমিটিগুলো নানা থিম তুলে এনে দর্শকদের মন জয়ের চেষ্টা করে। লড়াইও চলে। রবিবার রাতের দুর্যোগের পরে অবশ্য আর টেক্কা দেওয়ার লড়াই নয়, নিজেদের মণ্ডপের কাজ শেষ করতেই বেশি ব্যস্ত পুজো উদ্যোক্তারা। যে সব বড় পুজো কমিটি থিম করছে, সমস্যা বেশি তাদের। কারণ, ঝড়-বৃষ্টি হলে কারুকাজ নষ্ট হবে। ফলে, মণ্ডপের জৌলুস কমে যাবে।

একটা সময় পুজো উদ্যোক্তারা চিন্তায় ছিলেন বাজেট নিয়ে। বাজেট কম হলে যদি জাঁকজমক কমে যায়। তখন অন্য পুজোগুলো জৌলুসে এগিয়ে যাবে। আর তা হলে তো ষোলোআনাই লোকসান। পাড়ার মুখরক্ষা করাই দায় হয়ে উঠবে! রবিবার রাতের ঝড়-বৃষ্টির পরে অবশ্য পুজো উদ্যোক্তাদের চিন্তায় শুধুই দুর্যোগ। মেদিনীপুর শহরে পঞ্চমী থেকেই পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে যায়। ফলে, হাতে সময় নামমাত্র। বছর দুয়েক আগে রবীন্দ্রনগরের পুজো দেখতে এসে অনেকে নিরাশ হন। কারণ, দুর্যোগ। ভারী বৃষ্টিতে মণ্ডপসজ্জা এলোমেলো হয়ে যায়। বিধাননগর পূর্ব সর্বজনীনের এ বার পুজোর থিম পেঁচা। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা চম্পক দত্ত বলছেন, “রবিবার রাতের পরে ঝড়-বৃষ্টির একটা চিন্তা এসেই গিয়েছে। পঞ্চমীতে পুজোর উদ্বোধন। এখন সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করাটাই একটা চ্যালেঞ্জ।’’ তাঁর কথায়, “বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে দুর্গাপুজো সব উত্‌সবের থেকে আলাদা। তাই পুজোর আকাশে দুর্যোগের মেঘ দেখা দিলে সকলের মুখ ভার তো হবেই। আশা করি, পুজোর ক’টা দিন অন্তত আবহাওয়া শুকনো থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE