Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সুপ্রিয়া মাঠ কাঁপাবে, স্বপ্ন দেখছে জামবেদিয়া

ছিপছিপে চেহারা। উচ্চতা পাঁচ ফুটেরও কম। এক সময় কেউ কেউ বিদ্রুপ করতেন, ‘মেয়েটা পারবে তো?’ সেই মেয়েই মহিলা ফুটবল লিগে ‘ফেয়ার প্লে’-র শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে।

পুরস্কার নিচ্ছে সুপ্রিয়া চালক। — নিজস্ব চিত্র।

পুরস্কার নিচ্ছে সুপ্রিয়া চালক। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩১
Share: Save:

ছিপছিপে চেহারা। উচ্চতা পাঁচ ফুটেরও কম। এক সময় কেউ কেউ বিদ্রুপ করতেন, ‘মেয়েটা পারবে তো?’ সেই মেয়েই মহিলা ফুটবল লিগে ‘ফেয়ার প্লে’-র শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে। বছর তেরোর সুপ্রিয়া চালককে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জেলার ক্রীড়া-মহল। মেদিনীপুর (সদর) মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জীত তোরই ও সন্দীপ সিংহ বলছিলেন, “ওর মধ্যে ফুটবলটা আছে। আগামী দিনে ও আরও ভাল করবে।” মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি তথা মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলছেন, “মহিলা ফুটবল লিগ চালুর ফলে অনেক প্রতিভাই সামনে এসেছে। সুপ্রিয়া দাপটের সঙ্গে খেলে। প্রতিযোগিতামূলক খেলার মাধ্যমেই তো প্রতিভা খুঁজে পাওয়া সম্ভব।”

সম্প্রতি মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহিলা ফুটবল লিগ। শালবনির জামবেদিয়ার বাসিন্দা সুপ্রিয়া লিগে কুলফেনি সবুজ সঙ্ঘের হয়ে মাঠে নামে। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফিরতে হলেও আক্ষেপ নেই সবুজ সঙ্ঘের সম্পাদক চন্দন মানার। চন্দনের কথায়, “মেয়েরা চেষ্টা করেছে, এটাই বড় কথা। খেলায় তো হার-জিত থাকেই।” সুপ্রিয়া মিডফিল্ডে খেলে। গোটা প্রতিযোগিতায় সে একবারও কার্ড দেখেনি। ফাউল কম করেছে। বল দখলের লড়াইয়ে নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছে। তাই ফেয়ার প্লে-র পুরস্কারও ছিনিয়ে নিয়েছে সে। রেফারি ইন্দ্রজিত্‌ পানিগ্রাহী বলছিলেন, “আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের মধ্যে নিজের খেলাটা খেলে গিয়েছে সুপ্রিয়া। কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েনি। মাঠে প্রচুর পরিশ্রমও করেছে।”

সুপ্রিয়ার বাবা স্বদেশ চালক দিনমজুর। মা ভাগ্যদেবী গৃহবধূ। তিন ভাইবোনের মধ্যে সুপ্রিয়াই বড়। অভাব সুপ্রিয়ার ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। স্থানীয় গাইঘাটা মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্রী বছর কয়েক হল ফুটবল খেলছে। আগে নেহাতই শখে ফুটবল খেলত সে। এখন রীতিমতো প্রশিক্ষণ নিয়ে সুপ্রিয়া পরিণত ফুটবলার। সবুজ সঙ্ঘের মাঠে সপ্তাহে তিনদিন প্রশিক্ষণও করে। সুপ্রিয়া বলছে, “পুরস্কার পেয়ে খুব ভাল লাগছে। ফুটবল নিয়ে আরও অনেক দূর এগোতে চাই। আরও বড় হতে চাই।” মেয়ের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে স্বদেশবাবুও বলছেন, “ফুটবল নিয়ে ওর আগ্রহ রয়েছে। আমরা নিশ্চিত, ভাল প্রশিক্ষণ পেলে ও অনেক দূর এগোবে।”

সবুজ সঙ্ঘের সম্পাদক চন্দনবাবুও বলেন, ‘‘প্রতিভাবান ফুটবলারদের আরও ভাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলায় আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলাও জরুরি। না হলে মফসস্‌লের মেয়েরা পিছিয়ে পড়বে।’’ একইভাবে, ইন্দ্রজিত্‌বাবুরও বক্তব্য, “গ্রামেগঞ্জে অনেক প্রতিভা রয়েছে। শুধু তুলে আনতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE