Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্বামীর সামনেই গুলিতে খুন তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্যা

স্বামী গিয়েছিলেন বাড়ির বাইরে শৌচালয়ে। দাওয়ায় বসেছিলেন স্ত্রী। মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ শৌচালয়ের দরজা ঠেলে স্বামীকে বেরোতে দেখে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যা কাকলি বরদোলুই (২৮)। সেই মুহূর্তে তাঁর পিঠে এসে বিঁধল গুলি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, কাকলির দেহে প্রাণ নেই।

কাকলি বরদোলুইকে শ্রদ্ধা। বুধবার মেদিনীপুর জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে। সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

কাকলি বরদোলুইকে শ্রদ্ধা। বুধবার মেদিনীপুর জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে। সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

বরুণ দে
কেশপুর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

স্বামী গিয়েছিলেন বাড়ির বাইরে শৌচালয়ে। দাওয়ায় বসেছিলেন স্ত্রী। মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ শৌচালয়ের দরজা ঠেলে স্বামীকে বেরোতে দেখে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যা কাকলি বরদোলুই (২৮)। সেই মুহূর্তে তাঁর পিঠে এসে বিঁধল গুলি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, কাকলির দেহে প্রাণ নেই।

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের লোয়াদা গ্রামের এই ঘটনা ঘিরে যথারীতি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। তৃণমূলের দাবি, এটা সিপিএম-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাজ। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের বক্তব্য, কাকলি খুন হয়েছেন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে। পুলিশের অনুমান, আততায়ী হয়তো কাকলি নয়, তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ বরদোলুইকে মারতে এসেছিল। পেশায় ঠিকাদার বিশ্বজিৎ সম্প্রতি তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিও হয়েছেন। তবে কাকলি বা বিশ্বজিতের পরিবারের তরফে বুধবার রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “কেন এই খুন তা জানতে তদন্ত চলছে।” ঘটনার পরেই জ্ঞান হারান বিশ্বজিৎ। এ দিন সকাল পর্যন্ত জ্ঞান না ফেরায় তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে সরানো হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

কেশপুরের জগন্নাথপুর অঞ্চলের লোয়াদায় বিশ্বজিৎবাবুদের পারিবারিক বাড়ি। পাঁচ ভাই। যৌথ পরিবার। এ দিন সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ভিড় পড়শিদের। রয়েছে পুলিশও। যেখানে গুলিবিদ্ধ কাকলি লুটিয়ে পড়েছিলেন, সেই জায়গাটায় ঝুড়ি দিয়ে রক্তের দাগ ঢাকা। পুলিশের অনুমান, ফুট পঞ্চাশেক দূর থেকে পাইপগানের ট্রিগার টেপা হয়েছিল। পাইপগানে ব্যবহৃত .৩০৩ রাইফেলের গুলি শিরদাঁড়ার পাশ দিয়ে ঢুকে কাকলিদেবীর বুকের ডান দিকে বিঁধে যায়। তবে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি পায়নি পুলিশ। সন্ধান মেলেনি আততায়ীরও।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময় কংগ্রেস করতেন বিশ্বজিৎবাবু। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ঠিকাদারিও শুরু করেন। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। দক্ষ সংগঠক হিসেবে এলাকায় পরিচিতি তৈরি হয় বিশ্বজিতের। সপ্তাহখানেক আগে তৃণমূলের জগন্নাথপুর অঞ্চলের সভাপতি অলোক মণ্ডলকে সরিয়ে বিশ্বজিৎকে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে কাকলিদেবীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ রাজনীতির তেমন যোগ দেখেননি এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশপুরেরই একটি মহিলা সংরক্ষিত আসনে (নিজের এলাকায় নয়) তিনি প্রার্থী হন। জিতেও যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE