Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অন্দরের অভিযোগ

স্মার্ট হলদিয়ায় দ্রুত কাজ চান শহরবাসী

স্মার্ট সিটি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে হলদিয়া। কিন্তু সে শহরের বুকের ভিতর রয়ে গিয়েছে অনেক না-পাওয়া। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণাতে খুশি হয়েছেন শহরে বাসিন্দারা। তাঁদের আশা এই প্রকল্পের মাধ্যমে হলদিয়ার সমস্যার সমাধান হবে। পরিবহণ থেকে শুরু করে পানীয় জল, নিকাশি, পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্য, গাড়ি পার্কিং, পথবাতি-সহ একাধিক সমস্যায় জর্জরিত শিল্পশহর। শাসকদলের দাবি কাজ হচ্ছে, কিন্তু ভুক্তোভুগী বাসিন্দারা আদৌ সে কাজে সন্তুষ্ট নন।

ট্যাঙ্কারের দখলে এইচপিএল লিঙ্ক রোড। —নিজস্ব চিত্র

ট্যাঙ্কারের দখলে এইচপিএল লিঙ্ক রোড। —নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

স্মার্ট সিটি ঘোষণা হয়ে গিয়েছে হলদিয়া। কিন্তু সে শহরের বুকের ভিতর রয়ে গিয়েছে অনেক না-পাওয়া।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের এই ঘোষণাতে খুশি হয়েছেন শহরে বাসিন্দারা। তাঁদের আশা এই প্রকল্পের মাধ্যমে হলদিয়ার সমস্যার সমাধান হবে। পরিবহণ থেকে শুরু করে পানীয় জল, নিকাশি, পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্য, গাড়ি পার্কিং, পথবাতি-সহ একাধিক সমস্যায় জর্জরিত শিল্পশহর। শাসকদলের দাবি কাজ হচ্ছে, কিন্তু ভুক্তোভুগী বাসিন্দারা আদৌ সে কাজে সন্তুষ্ট নন।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি ঘোষণা। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল জানিয়েছেন কেন্দ্র থেকে চিঠি এসে পৌঁছে গিয়েছে পুরসভার কাছে। স্মার্ট সিটি প্রকল্পে হলদিয়ার অন্তর্ভুক্তির বিষয় নিয়ে তাঁরাও যথেষ্ট আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘স্মার্টসিটি প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে জেলাশাসককে নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।’’ শুধু তাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হবে বলেও তাঁর দাবি। গোটা পরিকল্পনায় সঙ্গী হবেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এই মুহূর্তে দাঁড়িয়েও হলদিয়া শহরে অর্ধেক এলাকায় জলের সংযোগ পৌঁছে দিতে পারেনি পুরসভা। পুর এলাকার অধিকাংশ নিকাশি নালাই কাঁচা রয়েছে। রাস্তার পাশেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছোট-বড় গাড়ি। ফুটপাথও দখল হয়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কোন কোন বিষয় অগ্রাধিকার পাবে?
চেয়ারম্যানের উত্তর, ‘‘পানীয় জল, নিকাশি, পরিবহণ এবং রাস্তাঘাটের উপরে জোর দিতে চাই। এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে হলদিয়ার মানুষ আধুনিক সুযোগ সুবিধা পাবেন।’’
হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারীও জানান, স্মার্ট সিটি প্রকল্প রূপায়ণে পুরসভাকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। সাংসদ হিসাবেও পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘হলদিয়া বন্দর-নগরী হওয়ার কারণেই এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। তাই আমরা সকলেই বন্দরের প্রতিষ্ঠাতা সতীশ সামন্তর কাছ কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও পুর দফতরকে ধন্যবাদ জানাই।’’

হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান মণীশ জৈন তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘‘ভাল পদক্ষেপ। স্মার্টসিটি প্রকল্পের আওতায় আসায় হলদিয়ার বাসিন্দারা উন্নত এবং আধুনিক পরিষেবা দ্রুত পাবেন। যার ফলে শহরের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। বন্দরের পক্ষ থেকে যতটা সাহায্য করা প্রয়োজন আমরা তা করব।’’

এই দ্রুততার কথাই বলছেন সাধারণ মানুষও। তাঁদের অভিযোগ হলদিয়া পুরসভার ২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে আটটি ওয়ার্ড এখনও সম্পূর্ণ গ্রামীণ। চারটি ওয়ার্ডের অংশ বিশেষ গ্রামীণ। ২, ৩, ৬, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ এবং ৪, ৫, ৭ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকায় নিকাশির সমস্যা যেমন রয়েছে। তেমনই রয়েছে নিরাপত্তার সমস্যাও। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। ওই সব এলাকার প্রায় কোনও রাস্তায় নেই পথবাতির ব্যবস্থা।

এর বাইরে তথা-কথিত শহরাঞ্চলের সমস্যাও নিতান্ত কম নয়। পুরসভা এলাকার বাসিন্দা প্রায় ৪২হাজার পরিবার। প্রায় দু’লক্ষ মানুষের বাস এই শহরে। কিন্তু ৫০ শতাংশ ওয়ার্ডে আজও জলের পাইপ বসানোর কাজ শেষ করতে পারেনি পুরসভা। বহু এলাকায় বসানই হয়নি পাইপ লাইন। ফলে বিশুদ্ধ জল আজও স্বপ্ন এলাকার বাসিন্দাদের।

এত হতাশা নিয়েও তাঁরা চান স্মার্ট হলদিয়ায় অন্তত জলের সুরাহাটুকু হোক। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রামনগর এলাকার বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম হলদিয়া স্মার্টসিটি হয়েছে। আমরা আশাবাদী এ বারে হয়তো আমাদের সমস্যার সমাধান হবে।’’ হলদিয়া ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণ দাস অধিকারী জানান, ‘‘হলদিয়া টাউনশিপে একটি উন্নতমানের হাসপাতাল চাই। সেই সঙ্গে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলির সুরাহা করা দরকার। উন্নত শহর হতে গেলে একটি পার্কিং লটের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।’’ এ দাবি নিতান্তই সঙ্গত। হলদিয়া টাউনশিপে কোনও হাসপাতাল নেই। রাত বিরেতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেও রোগী নিয়ে ছুটতে হয় ১৬ কিলোমিটার দূরে মহকুমা হাসপাতালে। সিটি সেন্টার এলাকায় ভারী গাড়ির জন্য ছোট পার্কিং জোন রয়েছে। কিন্তু তাও প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। এ ছাড়া গোটা শহরে ছোট গাড়ির জন্য কোনও পার্কিং করার জায়গা নেই।

টাউনশিপের বাসিন্দা ইলোরা মণ্ডল জানান, এই শহরে পরিবহণের খুব সমস্যা রয়েছে। ছোট ছোট রুটগুলিতে সে ভাবে কোনও যানবাহনই চলে না। সম্প্রতি কিছু রাস্তায় কিছু অটো নেমেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া সন্ধ্যার পর শিল্পাঞ্চল থেকে বাস বা অন্য যানবাহন প্রায় উধাও হয়ে যায়। ফলে যাতয়াতে খুব সমস্যা হয়।

বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা বলছে হলদিয়ার টাউনশিপে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসটিরও দরকার সামান্য যত্নের। স্মার্ট সিটি প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটালে তাঁরা খুশি। হলদিয়ার শিক্ষক অসিত শতপথীর অভিযোগ, জাতীয় সড়কের ধারে কিংবা এইচপিএল লিংক রোডের ধারে বা দুর্গাচকে রাস্তার দু’ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। দুর্গাচক, সুতাহাটা, ব্রজলালচক-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথ হকারদের দখলে। ফলে বিপত্তিতে পড়েন পথচারীরা।

ভবানীপুর থেকে কদমতলা, হাতিবেড়িয়া থেকে ক্ষুদিরামনগর, সুতাহাটা থেকে দুর্গাচক, ক্ষুদিরাম স্কোয়্যার থেকে মিতসুবিশি যাওয়ার রাস্তা বা ক্ষুদিরামনগর, রানিচক রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং, সিটি সেন্টার মোড়, রানিচক থেকে ব্রজলালচক পর্যন্ত জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা খারাপ। নজর নেই কর্তৃপক্ষের।

এরই পাশাপাশি হলদিয়ার অন্যতম সমস্যা পরিবেশ দূষণ। একে শিল্পশহর। শিল্পের বর্জ্য ছড়িয়ে দূষিত করে পরিবেশ। অন্য দিকে, সচেতনতার অভাবে দূষণ মাত্রা ছাড়াচ্ছে। দায় এড়াতে পারেন না পুর কর্তৃপক্ষ থেকে সাধারণ নাগরিক কেউই।

(সহ প্রতিবেদন: আরিফ ইকবাল খান)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE