Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রোগী পালানোয় নড়ল টনক

ক্যামেরায় নজরদারি হাসপাতালে

হাসপাতাল সূত্রে খবর, অন্তর্বিভাগের কাছে দু’টি প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষী থাকবেন। তাঁরাই পাশ কার্ড নিয়ে পরিজনেদের ঢুকতে দেবেন। প্রবেশপথের কাছে নজরদারি চালাতে আরও ১৬টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

একের পর এক উধাও হয়ে যাচ্ছেন রোগী! দিন কয়েক আগে এক রোগী পালিয়ে যাওয়ার পরে টনক নড়ে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রোগী পালানোর ঘটনায় রাশ টানতে এ বার হাসপাতাল ভবনের ভিতরেও সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্যামেরার পাশাপাশি নজরদারিতে থাকবে নিরাপত্তারক্ষীও।

খড়্গপুর হাসপাতাল ভবনে ঢোকার পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে ১২টা ও বিকেলে ৪টে থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত রোগীদের সঙ্গে তাঁদের পরিজনেরা সাক্ষাৎ করতে পারেন। ফলে এই সময় হাসপাতালে বাইরের লোকেদের আনাগোনা থাকে বেশি। যদিও এমন সময়েই হাসপাতালের প্রবেশপথগুলিতে কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকে না বলে অভিযোগ। ফলে রোগীরাও পালানোর জন্য বেছে নিচ্ছেন এই সময়ই।

গত ১ জুন খড়্গপুর হাসপাতালে ভর্তি হন কলাইকুণ্ডার বাসিন্দা সুকুমার বেজ। তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। গত ৩ জুন বিকেলে তিনি হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও এই ঘটনায় সুকুমারের পরিজনেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। দিন চারেক পরে ওই রোগী ফিরে আসেন। হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, “হাসপাতাল থেকে প্রায়ই রোগী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সুকুমার বেজের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সত্যিই বিপাকে পড়তে হয়েছিল। পরে উনি ফিরে আসায় কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম।”

সুকুমারের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরেই টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ঠিক হয়, সবসময় হাসপাতালের প্রবেশ পথে নিরাপত্তারক্ষী রাখা হবে। হাসপাতালে সাকুল্যে আট জন রক্ষী রয়েছেন। তাঁরা কী ভাবে হাসপাতালের পাঁচটি প্রবেশ পথে নজরদারি চালাবেন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে।

রোগীর পরিজনেদের হাসপাতালে ঢোকার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, রোগীর পরিজনেদের পাশ কার্ড দেওয়া হবে। সেই কার্ড দেখিয়েই কেউ কোনও রোগীকে দেখতে হাসপাতালে ঢুকতে পারবেন। আরও ঠিক হয়েছে, কোনও রোগী ভর্তি হওয়ার সময় তাঁর পরিজনকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হবে, রোগী নিখোঁজ হলে তার দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নয়। যদিও রোগীর পরিজনেরা কেন এ সব লিখতে রাজি হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এক রোগীর পরিজনের কথায়, ‘‘হাসপাতালে কোনও রোগী ভর্তি থাকলে তার নিরাপত্তার দায় তো হাসপাতালেরই। রোগী ভর্তি করে এমন আজব কথা লিখে দেওয়ার কথা কেনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সেটাই আশ্চর্যের।’’ পরিজনেদের কাউকে রোগীর সঙ্গে থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশ্য যে সমস্ত রোগীর কোনও আত্মীয় নেই তাঁদের ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দায় নেবেন বলে জানানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, অন্তর্বিভাগের কাছে দু’টি প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষী থাকবেন। তাঁরাই পাশ কার্ড নিয়ে পরিজনেদের ঢুকতে দেবেন। প্রবেশপথের কাছে নজরদারি চালাতে আরও ১৬টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। এক রোগীর পরিজন বিভাস দাসের প্রশ্ন, “অনেক সময় বাড়ি থেকে ৫-৬ জন এসে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে চাইতে পারেন। তখন কী ভাবে একটি পাশ কার্ড ব্যবহার করে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হবে?” হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “একাধিক পরিচিত কোনও রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে একটি পাশ কার্ডে কী ভাবে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হবে সেটা ভেবে দেখতে হবে।” তাঁর কথায়, ‘‘নজরদারিতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। আমরা রোগীর পরিজনেদের রোগীর সঙ্গে থাকতে বলছি। আর যাঁদের পরিজন বলে কেউ নেই তাঁদের ক্ষেত্রে আমাদের তো দায়িত্ব নিতেই হবে। রোগী পালানো কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE