উৎসব: বিয়ের রেজিস্ট্রেশনে ব্যস্ত কর্মীরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
সকাল থেকেই ব্লক অফিসে শোনা যাচ্ছে সানাইয়ের সুর। চলছে রান্নার তোড়জোড়ও। রবিবার এমনই অভিনব ‘বিবাহবাসর’-এর সাক্ষী থাকল চন্দ্রকোনা-২ ব্লক প্রশাসনের সভাকক্ষ। ‘পাত্র-পাত্রী’রা সকলেই ব্লকের সরকারি কর্মী।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সে সব সরকারি কর্মীর কোনও কারণে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়নি, এ দিন বিবাহের নথিভুক্তিকরণ হয় তাঁদেরই। দু’টি দফতর মিলিয়ে ৪৫ জনের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ছিল না। আজ, রবিবার রেজিস্ট্রেশন হয় ২৯ জনের। মূল উদ্যোক্তা চন্দ্রকোনা-২ বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ি। তাঁর কথায়, “দেড়-দু’মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি চলছিল। ব্লক ও তার অধীন সমস্ত পঞ্চায়েত কর্মীদের নিয়ে একাধিক বার বৈঠকও হয়েছে। আমার প্রস্তাবে সবাই রাজি হন। আজ সফল ভাবে তা আয়োজন করতে পেরে ভাল লাগছে।”
শাশ্বতবাবুর আর্জিকে মান্যতা দিয়ে ন্যূনতম খরচে নিয়েই এগিয়ে আসেন ম্যারেজ অফিসার সমীর ঘোষ। সকাল ১০টা নাগাদ চন্দ্রকোনা শহরের বিডিও অফিস চত্বরে এক-এক করে হাজির হন ‘পাত্র-পাত্রীরা’। ১১টায় শুরু হয় ‘বিয়ের আসর’। কর্মীদের সঙ্গে এ দিন বিডিও অফিসে পৌঁছন তাঁদের স্ত্রীরা। আসে তাঁদের ছেলেমেয়েরাও। অফিসের সভাকক্ষে তিন জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রেশন ফর্মে সইসাবুদ করার পরই ‘বর-কনে’কে মিষ্টি মুখ করানো হয়। সাক্ষী হিসেবে ছিলেন শাশ্বতবাবু ও তাঁর স্ত্রী পলি লাহিড়ি মল্লিক। এর পর হয় মালাবদল। তোলা হয় ছবি। দুপুরবেলা খাসির মাংস, রকমারি মাছ, দই, মিষ্টি সহযোগে খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। শাশ্বতবাবু বলেন, “এ দিনের সমস্ত খরচই কর্মীদের চাঁদায় হয়েছে। সরকারি টাকায় নয়।” সইসাবুদ করার পর এক কর্মী মালবিকা রায়ের কথায়, “অনেক দিন থেকেই বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার কথা ভাবছিলাম। বিডিও-র উদ্যোগে তা হয়ে গেল।” সাতান্ন বছর বয়সী দীনবন্ধু দে-র বক্তব্য, “সেই কবে বিয়ে হয়েছে! বিডিও-র সৌজন্যে ফের মালাবদল করার সুযোগ পেয়ে আমরা খুশি।” একই কথা বলছিলেন পঞ্চান্ন বয়সী অরুণ চক্রবর্তীও। এ দিন রেজিস্ট্রেশন হয় যুগ্ম বিডিও অনীত নন্দী ও তাঁর স্ত্রী কল্যাণী নন্দীরও।
কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ? সূত্রের খবর, বাল্য বিবাহ, নারী নিযার্তন, বহু বিবাহের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই এই ‘বিবাহবাসর’। এই সব প্রবণতা আটকাতে বিবাহের রেজিস্ট্রেশন অত্যন্ত জরুরি। ১৯৫৫ সালে চালু হয় ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন’। কিন্তু সচেতনতার অভাবেই এখনও গ্রামগঞ্জের বহু এলাকাতেই রেজিস্ট্রেশনের প্রবণতা কম। অথচ সরকারি নিয়মানুযায়ী বিয়ের পর রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। নাবালিকা বিয়ে বন্ধে ‘কন্যাশ্রী’র মতো প্রকল্প চালু করছে সরকার। নাপিত, পুরোহিত থেকে মন্দির কমিটিগুলিকে নিয়ে একাধিক শিবিরও করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও আটকানো যাচ্ছে না বাল্য বিবাহ। ফি বছর চন্দ্রকোনাতেই প্রায় কুড়ি থেকে বাইশ জন নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে। বিডিও-র যুক্তি, “বিয়ের সময় রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হলে বাল্য বিবাহের প্রবণতা অনেকটাই কমবে। কারণ, এ জন্য ভোটার কার্ড-সহ যাবতীয় তথ্য প্রয়োজন। প্রতি দিন বিডিও অফিস ও পঞ্চায়েতে বহু মানুষ নানা কাজে আসেন। কর্মীরাও যাতে এ বার প্রচারে জোর দেন, তাই এই আয়োজন।”
এ বার নিয়ম করে বাল্য বিবাহ ঠেকাতে গ্রামে-গঞ্জে প্রচার শুরু করবেন পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসের কর্মীরা। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে টাঙানো হবে ফ্লেক্স-ফেস্টুন। আর সেই পদক্ষেপেই প্রথম প্রস্তুতি ছিল এ দিনের নথিভুক্তিকরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy