Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাবা ফুচকা বেচেন, ছেলে মাধ্যমিকের কৃতী

আদতে রানাঘাটের বাসিন্দা রাহুলের প্রাথমিকের পাঠ শুরু হয়েছিল সেখানেই। প্রথম শ্রেণি থেকেই ক্লাসে প্রথম হয় রাহুল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় রানাঘাট ছেড়ে খড়্গপুরে চলে আসে তাঁরা। বর্তমানে খড়্গপুরের পীড়বাবা এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে তাঁরা থাকে।

রাহুল দাস

রাহুল দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১৩:১৫
Share: Save:

বাবা ফুচকা বেচেন। পড়ার মাঝে ফুচকা তৈরির কাজে হাত লাগায় ছেলে রাহুল দাসও। অভাব অবশ্য থামাতে পারেনি রাহুলের অদম্য ইচ্ছাকে। মাধ্যমিকে ৬৪০ পেয়েছে ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষানিকেতনের ছাত্র রাহুল।

আদতে রানাঘাটের বাসিন্দা রাহুলের প্রাথমিকের পাঠ শুরু হয়েছিল সেখানেই। প্রথম শ্রেণি থেকেই ক্লাসে প্রথম হয় রাহুল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় রানাঘাট ছেড়ে খড়্গপুরে চলে আসে তাঁরা। বর্তমানে খড়্গপুরের পীড়বাবা এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে তাঁরা থাকে। পঞ্চম শ্রেনি থেকেই ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষানিকেতনে পড়ছে রাহুল।

রাহুলের বাবা মাধব দাস ফুচকা বিক্রি করেন। মা পম্পাদেবী অসুস্থ শরীরে বাড়িতে বসেই স্বামীর ফুচকা তৈরি করেন। দিনের শেষে ফুচকা বিক্রির কয়েকশো টাকা দিয়েই চালাতে হয় সংসার। রাহুল বড় হয়ে সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। অভাব সেই স্বপ্নে বাধা হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রাহুলের বাবামা।

রাহুলের কথায়, “আমি জানতাম আমাকে ভাল ফল করতে হবে। কারণ আমি চাই বাবা-মায়ের এই কষ্টের অবসান হোক। ভবিষ্যতে সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।” অবসর সময়ে সত্যজিৎ রায়ের বই পড়তে ভালবাসে রাহুল। কিন্তু গল্পের বই পড়ার সুযোগ কোথায়। মা পম্পাদেবী বিগত চার বছর ধরে অসুস্থ। সেই শরীরেই তিনি স্বামীর ব্যবসার জন্য ফুচকা তৈরি করে দেন। তখন রাহুলকেও মায়ের সঙ্গে হাতে-হাতে কিছু কাজ করতে হয়। পম্পাদেবী বলছেন, “এত দিন অসুস্থতা নিয়ে ছেলের পড়াশোনার জন্য খেটেছি। ভাবতাম কবে যেন প্রাণটা বেরিয়ে যাবে। কিন্তু ছেলের এমন ফলের পরে বুঝেছি আমাকে বাঁচতে হবে। ওঁর স্বপ্নপূরণ করতে হবে। কিন্তু কী ভাবে হবে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।”

পড়শি স্বাধীন চট্টোপাধ্যায় এত দিন রাহুলের পড়াশুনোয় অনেক সাহায্য করেছেন। এ ছাড়াও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার স্কুলের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষকেরা। মাধববাবু বলেন, “আমাকে সবাই ফুচকাওয়ালা বলে চেনে। আমি আর ওর মা মাধ্যমিকও পাশ করিনি। আর আমার ছেলে সেই পরীক্ষায় এত ভাল ফল করেছে এটা গর্বের। ছেলের ইচ্ছাপূরণ করতে নিজের জীবন দিয়ে দেব।” রাহুলের পাশে রয়েছে তাঁর স্কুলও। রাহুলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ ঘোষ বলেন, “আমার স্কুলে রাহুল যে প্রথম হবে সেই আশা ছিলই। তবে ওর পরিবারের অভাব আমাকে ভাবায়। বিগত দিনে স্কুলের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik results 2017 Struggle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE