সাপ থেকে উই— আছে সবই। অবহেলায় শুধু হারিয়ে যাচ্ছে বই।
অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সামনে এক চিলতে ঘর। টিনের ছাউনির উপর ত্রিপল বিছানো। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। জলে ভেজে বইপত্র। চারিদিকে উইয়ের ঢিপি। মেদিনীপুরের একমাত্র ক্রীড়া গ্রন্থাগারের অবস্থা এমনই। দুরবস্থার এখানেই শেষ নয়। কখনও কখনও সাপও ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে!
গ্রন্থাগারের আলমারির জীর্ণ দশা। অনেক বই বাইরে টেবিলের উপর পড়ে রয়েছে। ধুলো জমেছে বইয়ে। এখানে-সেখানে দেওয়াল থেকে মাটি খসে পড়ছে। সমস্যার কথা মানছেন গ্রন্থাগারিক অনুপকুমার মণ্ডলও। তাঁর কথায়, “এখানে পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করবেন!”
সঙ্কট রয়েছে কর্মীরও। তাই পাঠাগার খোলা থাকে সপ্তাহে মাত্র দু’দিন! সোম ও মঙ্গলবার। সমস্ত কিছু দেখভাল করতে হয় অনুপবাবুকেই। দরজা খোলা থেকে ঝাঁট দেওয়া, জল আনা— সবই। বুধ থেকে শনিবার- সপ্তাহের এই চারদিন তিনিই চন্দ্রকোনা-২ এর পলাশচাবড়ি গ্রামীণ পাঠাগারে কাজ করেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগার বিভাগের এক কর্তা মানছেন, “এখন এ ভাবেই পাঠাগারগুলো চলছে! কর্মীর বেশ অভাব। তাই একজনকে দু’-তিনটি পাঠাগার দেখভাল করতে হয়! একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে তো সপ্তাহে দু’-তিন দিন খোলা থাকা ভাল!”
জেলায় মোট ১৫৮টি পাঠাগার রয়েছে। এরমধ্যে ১৪৩টি গ্রামীণ পাঠাগার। শহরে রয়েছে ১৫টি পাঠাগার। ক্রীড়াপ্রেমীদের উদ্যোগে সত্তরের দশকে মেদিনীপুর স্টেডিয়ামের সামনে এই গ্রন্থাগার গড়ে ওঠে। ক্রীড়া গ্রন্থাগার নামে পরচিতি এই পাঠাগারে রয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকের খেলার বই। এক সময় এখানে প্রায় ৬ হাজার বই ছিল। এখন রয়েছে প্রায় ৪ হাজার বই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ২ হাজার বই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনুপবাবুর কথায়, “চেষ্টা করেও কিছু বই বাঁচানো যায়নি! জল পড়ে, পোকায় কেটে নষ্ট হয়েছে!”
সময় পেলেই পাঠাগারে আসেন বিদ্যুৎ বসু, বিজয় পাটীরা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সম্পাদক বিদ্যুৎবাবুর কথায়, “আগে বিকেল বেলায় পাঠাগার গমগম করত। অনেকে খেলার বই পড়তে আসতেন। এখন পাঠাগার ধুঁকছে!” ফুটবল কোচ বিজয়বাবুর কথায়, “পাঠাগারের অবস্থা দেখলে সত্যিই খারাপ লাগে। উই পোকা লেগে অনেক বই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে পাঠাগারের ঘর জল-কাদায় ভরে যায়।” বিদ্যুৎবাবু, বিজয়বাবুদের কথায়, “শহরের বুকে এ রকম একটা পাঠাগার এ ভাবে নষ্ট হতে পারে না। সংস্কারের ব্যবস্থা করা উচিত।”
একই মত জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস মালেরও। বিনয়বাবুর কথায়, “পাঠাগারের ঘরটার অবস্থা সত্যিই খারাপ। স্টেডিয়ামের অন্য এক পাশে পাঠাগারের জন্য নতুন একটা জায়গা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
বাস্তবে ক্রীড়া গ্রন্থাগারের হাল কবে ফেরে, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy