প্রাপ্তি: বেলিয়াবেড়ায় ডুলুং নদীর উপর নতুন সেতু। নিজস্ব চিত্র
নিজভূমে পরবাসী হয়ে থাকার অপবাদ ঘুচল লালমোহন টুডু, সুনীল মুর্মু, সাগুন সরেন, সোহাগী কিস্কুদের। স্বাধীনতার পরে এই প্রথমবার ব্লকসদরে যাওয়ার ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো পেলেন ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া ব্লকের ৬টি গ্রামের বাসিন্দারা।
ডুলুং নদীর উপর বেলিয়াবেড়া ও রাঞ্জিয়ার মধ্যে সংযোগকারী ওই ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্য রীতিমত চমক দিয়েছে প্রশাসন। ৩৬০ ফুট লম্বা এবং ১২ ফুট চওড়া সাঁকোটি আগাগোড়া কংক্রিটের। প্রশাসনের দাবি, এর ফলে প্রতি বছর ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো তৈরি করতে হবে না। সরকারি টাকারও সাশ্রয় হবে। কংক্রিটের সাঁকোটি তৈরি শেষ। এখন দু’দিকের সংযোগকারী মোরাম রাস্তা তৈরি চলছে। সাঁকোটি চালু হলে এই প্রথমবার ব্লক সদর বেলিয়াবেড়ার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে ওই ৬টি গ্রাম। সাঁকোটি চালু হলে বেলিয়াবেড়া ব্লক থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা সদরের দূরত্বও অনেকটা কমবে।
বেলিয়াবেড়া ব্লক সদরের কাছে কৈমা, ডাহি, মুচিনালা, রাঞ্জিয়া, ভাদুয়া, মহুলির মতো আদিবাসী অধ্যুষিত ৬টি গ্রাম। সারা বছর ডুলুং নদীর হাঁটুজল ভেঙে সাইকেল কাঁধে নিয়ে ব্লক সদরে যেতে হয় বাসিন্দাদের। হাইস্কুল, কলেজ, পঞ্চায়েত অফিস, দোকান সবই রয়েছে ব্লক সদর বেলিয়াবেড়ায়। ফলে, নদীতে জল বাড়লে সমস্যায় পড়েন ওই গ্রামগুলির বাসিন্দারা। বেলিয়াবেড়া ব্লকের তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে যেতে গেলেও ওই ৬টি গ্রামের বাসিন্দাদের নদী পেরোতে হয়। রাতে সমস্যা বাড়ে।
ব্লক সদরের সঙ্গে যোগাযোগের দাবিতে বাসিন্দারা অসংখ্যবার প্রশাসনিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, ৬টি গ্রামের জন্য প্রতি বছর বাঁশ-কাঠ দিয়ে লক্ষাধিক টাকার ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো তৈরির বিষয়টি লাভজনক ছিল না। সাধারণত, এ ধরনের অস্থায়ী সাঁকো তৈরির বরাতপ্রাপ্তরা যানবাহন ও যাতায়াত কারীদের থেকে টোল আদায় করে নির্মাণ খরচ তুলে নেন। কিন্তু সেখানে ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো করার ব্যাপারে আগ্রহী হননি কেউ। তবে পঞ্চায়েত সমিতির আর্থিক সাহায্যে বাসিন্দারা কখনও বাঁশ দিয়ে হাঁটার মতো অস্থায়ী দুর্বল সাঁকো বানাতেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে জলের তোড়ে সাঁকোটি ভেসে চলে যেত।
বেলিয়াবেড়ার বিডিও কৌশিক ঘোষ জানালেন, বাসিন্দাদের দুর্ভোগের হাত থেকে রেহাই দিতে কংক্রিটের চাতালের আদলে ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থায়ী সাঁকোটির পরিকল্পনা করেছেন ব্লকের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ফাল্গুনী চক্রবর্তী। টেন্ডার ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজটি হয়েছে। মোট খরচ হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ২০ লক্ষ টাকা রাজ্যসভার সাংসদ বিবেক গুপ্তর সাংসদ তহবিলের। বাকিটা জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যান তহবিলের টাকা। বর্ষাকালে নদীর জল খুব বাড়লে সাঁকোটি ডুবে যেতে পারে। তবে সাঁকোটি ভেসে যাওয়ার ভয় নেই।
জেলায় নতুন স্থায়ী সাঁকো পেয়ে আপ্লুত এলাকাবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy