সবুজায়ন: চারা রোপণে ব্যস্ত ক্লাবের সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র
ওঁদের কেউ শিক্ষক, কেউ আইনজীবী, কেউ পুলিশ। রয়েছেন ঠিকাদার, সরকারি আধিকারিক,রেলের টিকিট পরীক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ব্লক অফিসের কর্মীও। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এঁরাই মেদিনীপুর শহরের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। সঙ্গে আর্জি— ‘আম খেয়ে দয়া করে আঁটিটা ফেলবেন না। বাড়িতেই আলাদা করে রেখে দিন। আমরা রবিবার সকালে আপনার বাড়ি থেকে ওগুলো নিয়ে আসব।’
পরিবেশ রক্ষায় আম-কাঁঠাল গাছ পুঁততেই এই উদ্যোগ মেদিনীপুর শহরের বিধাননগর এলাকার ‘গুড মর্নিং ক্লাবে’র সদস্যদের। প্রতিদিন সকালে এঁরা বিধাননগর মাঠে শরীরচর্চা করেন, ফুটবল খেলে গা ঘামিয়ে নেন। পাড়ার কচিকাঁচারাও সেখানে হাজির হয়ে যায়। মাস খানেক আগে হোয়াটস অ্যাপের একটি মেসেজ-ই এঁদের সকলকে পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোয় অনুপ্রাণিত করেছেন। আর তারপরই শুরু হয়েছে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বীজ সংগ্রহের কাজ।
ক্লাবের সদস্য সমীর দে পেশায় আইনজীবী। তিনি বলছিলেন, ‘‘নিজেদের মুনাফার জন্য গাছ কেটে সাফ করে দিচ্ছে অসাধু চক্র। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে প্রাণ। সেই সঙ্কট কাটাতেই আমাদের এই উদ্যোগ।’’ আপাতত সারা সপ্তাহ ধরে আম-কাঁঠালের বীজ সংগ্রহ করছেন ক্লাব সদস্যরা। তারপর রবিবার বিকেলে শহর লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় সেই বীজ মাটিতে পোঁতা হচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে গোপগড় ক্যানালের পাশে, নদীর ধারে আম ও কাঁঠালের বীজ লাগানো হয়েছে।
ক্লাবের আর এক সদস্য রাজেন্দ্র বালির কথায়, ‘‘শহরের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় আমরা গাছ লাগাব। পরিবেশ ভাল রাখতে, শহরবাসীকে সুস্থ রাখতেই এই উদ্যোগ।’’ পরিবহণ দফতরের আধিকারিক অমিত দত্তেরও বক্তব্য, ‘‘অফিসে ও শহরের নানা এলাকায় পরিচিতদের বলেছি, আম খেয়ে আঁটি ফেলে দেবেন না, জমিয়ে রাখুন। তারপর রবিবার সকালে বিধাননগর মাঠে এসে দিয়ে যান, না হলে আমরাই তা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে নেব।’’ ওয়ার্ডের সাফাই কর্মীদের বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাড়ির আবর্জনা থেকে আমের আঁটি বেছে রাখতে। রবিবার সকালে সেই আঁটি দিলে মিলবে মিষ্টি খাওয়ার টাকা। শহরবাসী যাতে গাছ লাগানোর কাজে তাঁদের সাহায্য করেন, সেই আবেদনও জানিয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা।
এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে মেদিনীপুর পুরসভাও। উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘‘ওঁদের দেখে যদি শহরবাসী অনুপ্রাণিত হন, তাহলে আরও ভাল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy