খড়্গপুর শহরে এ ভাবেই রাস্তায় ধারে রাখা থাকে বাইক। নিজস্ব চিত্র।
বাজারে গিয়েছিলেন খড়্গপুরের ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা পিনাকী চক্রবর্তী। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী পিনাকীবাবু মোটরবাইকটা বাইরে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাজারে ঢুকে ইস্তক ছটফট করছিলেন তিনি। বারবার বাইরে এসে বাইকটা দেখে যাচ্ছিলেন। পাছে কেউ চুরি করে নেয়! পিনাকীবাবুর কথায়, “আসলে শহরে প্রায়ই বাইক চুরি হচ্ছে। তাই ভয় করে।”
এই ভয় যে খুব একটা অমূলক নয়, তা নিজের অভিজ্ঞতাতেই টের পেয়েছেন খড়্গপুরের ইন্দার রেল কলোনির অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়। বাইক চালানোর নেশা রয়েছে তাঁর। গত সেপ্টেম্বরে ইন্দারই বিদ্যাসাগরপুরে মামাবাড়ির বাইরে বাইক রেখেছিলেন। আধ ঘন্টা বাদে বেরিয়ে দেখেন বাইক উধাও। শখের বাইক ফিরে পেতে ছুটেছিলেন টাউন থানায়। কিন্তু অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। পুলিশ শুধু বলেছে, তদন্ত চলছে। অভিষেকের আক্ষেপ, “আমার অভিযোগ কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছিল জানি না। তবে পুলিশি টহলদারির অভাবেই এ ভাবে বাইক চুরির সাহস পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।”
রেলশহর খড়্গপুরে বাইক চুরি এখন প্রায় আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। হাট-বাজার থেকে উৎসব-মেলা, চোখের আড়াল হলেই উধাও হয়ে যাচ্ছে বাইক। সম্প্রতি শহরের সাউথ সাইডে মাতা পুজোর প্রাঙ্গণ থেকে বেশ কয়েকটি বাইক খোয়া যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুরি যাওয়া বাইক উদ্ধার করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। হাতে গোনা যে ক’টি ক্ষেত্রে যা-ও বা বাইক ফেরত পাওয়া যাচ্ছে, তা-ও চালানোর অবস্থায় থাকছে না বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এই পরিস্থিতিতে বাইক চুরি রুখতে পুলিশ কেন পদক্ষেপ করছে না, সেই প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে ব্যস্ত যে সব এলাকায় দীর্ঘক্ষণ মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, সেখানে নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠছে। যদিও খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডলের বক্তব্য, “এখন টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। আসলে ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীরা এই কাজে যুক্ত থাকায় সমস্যা হচ্ছে। আর চুরি যাওয়া বাইক উদ্ধারও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে কিন্তু মানুষকে সচেতন হতে হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাইক চুরি চক্রে পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার দুষ্কৃতীদের যোগ রয়েছে। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা একের পর এক বাইক চুরি করছে। চুরি যাওয়া বাইক পাচার হয়ে যায় ভিন রাজ্যে। তারপর যন্ত্রাংশ খুলে অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, বাইক উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে।
খড়্গপুরে বাইক চুরির বাড়বাড়ন্ত অবশ্য নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই চোখের আড়াল হওয়া মাত্র মোটর বাইক চুরি যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তারপরেও পুলিশি নজরদারি কিন্তু সেই তিমিরেই। এমনকী এখন শহরের রাস্তায় মোটরবাইকে পুলিশ কর্মীদের টহল আর নজরে পড়ে না বলে অভিযোগ শহরবাসীর। সেই সুযোগেই বাড়ছে বাইক চুরি। পরিসংখ্যানও বলছে, গত চার মাসে বাইক চুরির সংখ্যা বেড়েছে। গত চার মাসে ২৬টি মোটরবাইক চুরি গিয়েছে। তার মধ্যে উদ্ধার হয়েছে মাত্র আটটি বাইক।
মফস্সল শহরে পথচলার অন্যতম সঙ্গী মোটর বাইক। খড়্গপুরেও তাই এখন ঘরে ঘরে বাইক। ফলে, বাইক চুরির বাড়বাড়ন্তে শহরবাসী উদ্বিগ্ন। মালঞ্চর বাসিন্দা রাজেন কুমারের কথায়, “যে ভাবে বাইক চুরি হচ্ছে তাতে আতঙ্ক তো বাড়বেই। সব ক্ষেত্রে আবার অভিযোগও হচ্ছে না। কারণ, অভিযোগ জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।”
পুলিশ অবশ্য এই বাইক চুরির জন্য শহরবাসীর অসচেতনতাকেই দায়ী করছে। পুলিশের দাবি, অনেকেই বাইক রেখে দীর্ঘক্ষণ কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন। তখন দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় পড়ে থাকা বাইক নিশানা করে দুষ্কৃতীরা। অনেক আরোহী আবার বাইকের চাবি বন্ধ করলেও হ্যান্ডেল ‘লক’ করেন না, অনেকে আবার চাবি বাইকে ফেলে রেখে চলে যান। ফলে, দুষ্কৃতীদের কাজ সহজ হয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি খড়্গপুরের গোলবাজারে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে এ ভাবেই চাবি-সহ বাইক রাস্তায় রেখে বাজারে কেনাকাটা করছিলেন এক রেলকর্মী। টহলরত পুলিশকর্মীর নজরে আসতেই তিনি বাইক ‘লক’ করে ওই রেলকর্মীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে বাইকের মালিক ফিরলে তাঁকে ধমক দিয়ে কাগজপত্র দেখে বাইক ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন নজরদারি সম্ভব হয় না। তাই বাইক চুরিতে রাশ টানতে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবি জোরালো হচ্ছে রেলশহরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy