Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দীপাবলির আলো রঙিন করে তৈবুররা

প্রথাগত লেখাপড়ার বাইরে ওদের জন্য বৃত্তিমূলক নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ওই হোমে। কালীপুজোর জন্য সেই অগস্ট মাস থেকে ওরা তৈরি করেছে মোমবাতি।

কাঁথি: আলো নেই ওদের চোখে। শুধু আছে শব্দ, আর হাতের স্পর্শ। তা দিয়েই অন্তত একটা দিন পৃথিবীটা আলোয় ভরে দিতে চায় ওরা।

কাঁথি: আলো নেই ওদের চোখে। শুধু আছে শব্দ, আর হাতের স্পর্শ। তা দিয়েই অন্তত একটা দিন পৃথিবীটা আলোয় ভরে দিতে চায় ওরা।

শান্তনু বেরা
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

জয়দেব মণ্ডল, জোৎস্না বেরা, সুমিতা বেরা, রোহিত মাহাতো, রঞ্জিত দাসরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পড়াশোনা দেশপ্রাণ ব্লকের ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষানিকেতনের প্রতিবন্ধী ও বোধোদয় হোমে। সেখানেই থাকে সুস্মিতা দাস, শঙ্করী মাইতি, কোয়েল দাসের মতো মানসিক প্রতিবন্ধীরাও। আবার ওদের সঙ্গেই থাকে অঙ্কিত, তৈবুররা। অঙ্কিত, তৈবুরের কেউ নেই এ পৃথিবীতে। সকলে মিলে একটা নতুন জগতে ওদের বাস।

প্রথাগত লেখাপড়ার বাইরে ওদের জন্য বৃত্তিমূলক নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ওই হোমে। কালীপুজোর জন্য সেই অগস্ট মাস থেকে ওরা তৈরি করেছে মোমবাতি। রাসায়নিকের জমাট বাধা দেহে উঁকি দেওয়া এক টুকরো সলতে আর সামান্য আগুনের ফুলকি— অমাবস্যার অন্ধকার তাতেই লোপাট।

অর্থ আর প্রতিপত্তি সরিয়ে রেখে ওই একটা দিন ছোট-বড় সব রকমের বাড়িতে জ্বলে উঠবে মোমবাতি। নেপথ্যে জয়দেব, শঙ্করী, তৈবুররা।

পূর্ব মেদিনীপুরের নানান বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের তৈরি ‘দেওয়ালি স্পেশ্যাল’, ‘লক্ষ্মীনারায়ণ’, ‘ফ্যাটম্যান’, ‘জয়পুরলেডি’, ‘লোডশেডিং’। সবই মোমবাতি— বিচিত্র তাদের রূপ।

কেমন? জানালেন, ওই হোমের প্রশিক্ষক অনিরুদ্ধ প্রধান— দেওয়ালি স্পেশ্যাল হল ক্যারমের ঘুঁটির মতো আকৃতির। লক্ষ্মীনারায়ণ একেবারে সাধারণ লম্বা-সরু মোমবাতি। ফ্যাটম্যানের চেহারা দাবার ঘুঁটির বোড়ের মতো। জয়পুরলেডি ছোটছোট রঙিন পুতুলের মতো। লোডশেডিং-এ দু’টি রং মিশে যায় আলোর নীচে।

সারা বছরই পড়াশোনার পাশাপাশি নানা রকম কাজ করে হোমের ছেলেমেয়েরা। মূলত পড়ুয়াদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই সব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আবাসিকদের তৈরি করা সামগ্রী বিক্রি হয় বাজারে। প্রতি বছরই মোমবাতি বানানো হয় এই দীপাবলি উপলক্ষে। এ বার অবশ্য শব্দ দূষণ রোধে কড়াকড়ি, তাই আবাসিকরা আশা করছে রঙিন মোমবাতির কদর বাড়বে। বিক্রিও হচ্ছে দেদার।

আবাসিক জয়দেব মণ্ডল বলে, ‘‘অগস্ট মাস থেকে হোমটাকে চেনাই যায় না, যেন কারখানা। চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু বুঝতে পারি সবাই মন দিয়ে কাজ করে। আমি মোমবাতি প্যাকিং করি।’’ প্যারাফিন গলিয়ে ডাইসে ফেলা, সুতো কাঁচি দিয়ে কাটা— সবই প্রশিক্ষকদের সহায়তায় করে আবাসিকরা। ‘‘যখন শুনতে পাই, অনেক অনেক বিক্রি হয়েছে মোমবাতি, খুব মজা হয়’’, আঁধার দু’চোখেও আলোর ঝিলিক সুমিতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Candle Blind People Diwali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE