Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টলমল নৌকোতেই পরীক্ষাকেন্দ্রে

ফেরিতে ঠাসাঠাসি ভিড়, বাসের মাথায় ওঠার হুড়োহুড়ি— কার্যত প্রাণ হাতে নিয়েই গ্রুপ-ডি’র পরীক্ষা দিতে গেল অনেক পরীক্ষার্থী। ২৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত বাস, সহায়তা ক্যাম্পের কথা আগেই ঘোষণা করেছিল প্রশাসন।

হলদিয়ায় হলদি নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই পারপার নৌকোর। নিজস্ব চিত্র

হলদিয়ায় হলদি নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই পারপার নৌকোর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ০২:১৬
Share: Save:

ফেরিতে ঠাসাঠাসি ভিড়, বাসের মাথায় ওঠার হুড়োহুড়ি— কার্যত প্রাণ হাতে নিয়েই গ্রুপ-ডি’র পরীক্ষা দিতে গেল অনেক পরীক্ষার্থী।

২৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত বাস, সহায়তা ক্যাম্পের কথা আগেই ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। যদিও হলদিয়ায় এর বিপরীত ছবিই ধরা পড়ল। হলদিয়া থেকে নন্দীগ্রাম রুটে হলদি নদী দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পারপার করল ফেরি। শনিবার সকাল থেকেই ফেরিঘাটে তিলধারণের জায়গা ছিল না। দেখা মেলেনি কোনও সিভিক ভলান্টিয়ারেরও।

দিন কয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার ভদ্রেশ্বরে তেলেনিপাড়ার জেটি ভেঙে অনেকের মৃত্যুর পরেও যে আদতে প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি তার প্রমাণ মিলল এ দিন। ফেরিঘাটে লাইফ জ্যাকেট রাখা, কোনও নৌকোয় নিয়ম ভেঙে যাত্রী তোলা হচ্ছে কি না তা দেখার কথা থাকলেও কার্যত শনিবার কিছুই করা হয়নি বলে অভিযোগ।

ফেরি করে এ দিন পরীক্ষা দিতে আসেন জেসমিন খাতুন, রনিত বিশ্বাস, আব্দুল রহমান, সোনালি দাশরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘লাইফ জ্যাকেট তো নেই-ই। এমনকী অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কারণে নৌকায় কোনও ক্রমে দাঁড়ানোর জায়গাটুকু পেয়েছি।’’ নন্দীগ্রাম থেকে হাতিবেড়িয়ায় পরীক্ষা দিতে আসা অসীম মাইতি বলছেন, ‘‘পরীক্ষা না থাকলে এতো ঝুঁকি নিয়ে যেতাম না। প্রবল বাতাসে নদী উত্তাল থাকায় ভয় লাগছিল।’’

হলদিয়া পুরসভার পক্ষ থেকে এই ঘাট পরিচালনার জন্য ইজারা পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ দাশ। রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘তাঁদের কাছে লাইফ জ্যাকেট থাকলেও যাত্রীরা তা ব্যবহার করতে চান না’’ তাঁর কথায়, ‘‘জেটিঘাটে একাধিক সমস্যা রয়েছে। ঘাটে নৌকা লাগানো যায় না বলে হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ নৌকোয় বেশি যাত্রী তোলা নিয়ে তাঁর সাফাই, ‘‘যাত্রীরা জোর করেই নৌকোয় উঠে পড়ছেন। আমাদের কিছু করার নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ফেরিঘাটের যাত্রীদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরায় নজরদারি চালানো হয়।’’ এ বিষয়ে হলদিয়ার মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু নস্কর বলছেন, ‘‘হলদিয়া মহকুমায় একাধিক ফেরিঘাট রয়েছে। লাইফ জ্যাকেট আবশ্যিক করা-সহ নানা বিষয়ে জোর দিতে শীঘ্রই বৈঠক ডাকা হবে।’’

শুধু নৌকো নয়, অব্যবস্থার ছবি ধরা পড়ল বাসেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও এ দিন বাস না মেলায় অনেকেই বাসের ছাদে উঠে পড়েন। শুধু বাস নয়, ট্রেকার-অটোর ছাদে ওঠার ছবিও দেখা গেল শনিবার। ঘাটাল থানার রাধানগর স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা গোপীগঞ্জের এক বাসিন্দা ইউসুফ খান বলছিলেন, “আমার মেয়ে ট্রেকারের ভিতরে ঢুকতেই পারেনি। বাধ্য হয়ে ট্রেকারের পিছনের সিঁড়িতে ঝুলেই ও পরীক্ষাকেন্দ্রে গেল।” এ দিন ইড়পালা স্ট্যান্ডে এসে বাস থেকে নেমেই অসুস্থ হয়ে পড়েন দাসপুর এলাকার যুবক সন্টু মাইতি। ভিতরে জায়গা না পেয়ে বাসের ছাদেই উঠেছিলেন সন্টু। নামতেই তাঁর মাথা ঘুরে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যান তিনি। বাসের ছাদে যাত্রী তোলা ঠেকাতে যেখানে এত তৎপর প্রশান, সেখানে এ দিন নজরদারি চালানো হল না কেন? সদুত্তর এড়িয়ে ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবেই পরীক্ষা মিটেছে। কোথাও কোথাও যাতায়াতের সমস্যা হয়েছিল। বাকি সব ঠিকই ছিল।”

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মোট ২৯৩টি কেন্দ্রে গ্রুপ ডি-র পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজার। এর মধ্যে ভিন্‌ রাজ্যের অনেক পরীক্ষার্থীও রয়েছে। শুক্রবার থেকেই দূরদূরান্তের এমনকী ভিন্‌ রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টেশনে এসে ভিড় জমায়। মেচেদা-সহ একাধিক স্টেশনে এ দিন রাত কাটায় পরীক্ষার্থীরা। শনিবার জেলার সব রুটেই বেশি সংখ্যক বাস চালানো হয়েছে বলে দাবি করেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাস ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মহম্মদ সামসের আরেফিন। যদিও এ দিন তমলুক-ময়না রাজ্য সড়ক-সহ একাধিক জায়গায় বাস না পেয়ে পরীক্ষার্থীরা ট্রেকারেই বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করেন বলে অভিযোগ। পরীক্ষার্থীদের সাহায্যের জন্য কাঁথির দিঘা বাসস্ট্যান্ড, রূপশ্রী বাইপাস-সহ একাধিক এলাকায় ক্যাম্প খোলা হয়। কোনও পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর চিকিৎসার জন্য ক্যাম্পে ছিল মেডিক্যাল টিম। এগরার দিঘা মোড়েও সহায়তা কেন্দ্র চালু করে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE