ভরসা: জলমগ্ন ঘাটাল শহরে নৌকার ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
সুবর্ণরেখা ও ডুলুং নদীর জলে ডুবেছে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের প্রায় ২০টি গ্রাম।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, জলবন্দি প্রায় দু’হাজার মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত দু’শো মাটির বাড়ি। সাঁকরাইল ব্লকের আঁধারি, রগড়া ও রোহিনী পঞ্চায়েতের ২০টি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুবর্ণরেখার জল বেড়ে নয়াগ্রাম ব্লকের পাতিনা, বড়খাঁকড়ি, মলম, নয়াগ্রাম ও জামিরাপাল—পাঁচটি পঞ্চায়েতের ৩৫টি গ্রাম জলমগ্ন। দুর্গত প্রায় দশ হাজার। নয়াগ্রামের প্রায় ১৫ হাজার একর চাষ জমি জলের তলায়।
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি সমায় মাণ্ডি বলেন, ‘‘দু’টি ব্লকে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামগুলিতে শুকনো খাবার ও পানীয় জল পৌঁছানোর জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
জল বাড়ছিল রবিবার রাত থেকেই। মঙ্গলবার সকালেই বাড়িতে জল ঢুকে যায় ঘাটালের খালিশাকুণ্ডু গ্রামের নির্মলা পালের বাড়িতে। এদিন তাঁর টিনের ছাউনির মাটির বাড়ির অর্ধেক জলের তলায় চলে গিয়েছে। পরিবারের লোকজনের ঠাঁই এখন নদীবাঁধ।
বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ায় ঘাটালের মনসুকার বৃদ্ধা উমা পণ্ডিতও সোমবার থেকে রাত কাটাচ্ছেন পড়শি মিতা দলুইয়ের বাড়িতে। উমা দেবী বলেন, ‘‘পড়শির বাড়ির ছাদে কোনও ভাবে আছি। চাল থাকলেও রান্না করব কী ভাবে? কেরোসিন নেই। উনুন জলের তলায়!”
শুধু নির্মলা পাল, উমা পণ্ডিতই নন, জলমগ্ন ঘাটাল মহকুমার সামগ্রিক ছবিটা কমবেশি এমনই। বেশিরভাগ গ্রামেই বিদ্যুৎ নেই। নেই পানীয় জলও। রাস্তা থেকে শ্মশান সবই জলের তলায়। বন্ধ মোবাইল পরিষেবাও।
মঙ্গলবার সকাল জলমগ্ন ঘাটালের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ঘাটাল থানা ডুবে গিয়েছে। বহু স্কুলেও জল ঢুকেছে। গোটা শহরে নৌকাই এখন যাতায়াতে ভরসা। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ বলেন, “দ্রুত জল বাড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটাল ব্লকের ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দশটি জলমগ্ন। চন্দ্রকোনা-১ ও ২ ব্লকের ছ’টি এবং দাসপুর-১ ব্লকের তিনটি অঞ্চলও জলমগ্ন। প্লাবিত ক্ষীরপাই ও খড়ার পুরসভার একাধিক ওয়ার্ড। দাসপুরের সামাট চাতালে জল উঠে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘাটাল-মেদিনীপুর (ভায়া নাড়াজোল) রুটে যোগাযোগ বন্ধ। স্বাভাবিক হয়নি ক্ষীরপাই-চন্দ্রকোনা সড়কও।
যদিও প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই। দুগর্ত এলাকায় পানীয় জলের পাউচ এবং ত্রিপল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে চালও বিলি করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে একাধিক ত্রাণ শিবিরও। তবে প্রশাসন যাই দাবি করুক, প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, ত্রাণের জিনিস নিয়েও রাজনীতি হচ্ছে। ফলে ক্ষোভ ছড়িয়েছে জলমগ্ন এলাকায়। ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক। তিনি জানান, জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা কষ্টে আছেন। নৌকা ও লোকজনের অভাবে সব গ্রামে এখনও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যায়নি।
সোমবার চন্দ্রকোনার জলমগ্ন গ্রামগুলিতে জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ ত্রাণ বিলি করেন। মঙ্গলবারও জেলা পুলিশের তরফে জলমগ্ন এলাকায় শুকনো খাবার ও পানীয় জলের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মহকুমা শাসক অমিত শেঠ বলেন, “ঘাটালের সব নদীতেই জল বাড়ছে। দুঘর্টনা এড়াতে জলমগ্ন গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎসংযোগ চ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। প্রশসন সতর্ক রয়েছে। ত্রাণ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy