তিনি মন্ত্রী হচ্ছেন জানাই ছিল। যাবতীয় কৌতূহল ছিল কোন দফতর পাচ্ছেন তা ঘিরে। শুক্রবার শপথগ্রহণ শেষে শুভেন্দু অধিকারী পরিবহণ মন্ত্রী হচ্ছেন জানার পর থেকেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে অন্য জল্পনা— শুভেন্দুর সংসদ আসন তমলুকে এ বার ঘাসফুলের প্রার্থী হবেন কে!
তৃণমূল সূত্রে খবর, দাদার আসনে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার হিসেবে দিব্যেন্দু অধিকারীর দিকেই পাল্লা ভারী। নিয়ম মতো দু’টি আইনসভায় একই সঙ্গে ছ’মাস পর্যন্ত সদস্য থাকা যায়। ফলে এ বার নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দুকে সাংসদ পদ ছাড়তে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে সময় নষ্ট করতে রাজি নন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁরা চাইছেন, শুভেন্দু এখনই লোকসভা থেকে পদত্যাগ করুন। তাই শপথ নেওয়ার দিন সাতেকের মধ্যেই দিল্লি যেতে পারেন তমলুকের বর্তমান সাংসদ। স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের সঙ্গে দেখা করে লোকসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন শুভেন্দু।
আনন্দবাজারের তরফে ফোন করা হলে শুভেন্দু অবশ্য এ নিয়ে কোনও জবাব দেননি। তিনি বলেন, ‘‘হতে পারে, আপনারা আমার থেকে বেশি জানেন।’’ নয়াদিল্লির এক সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারই স্পিকারের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুভেন্দুর তরফে সময় চাওয়া হয়েছে। এখন স্পিকারের তরফে শুধু সময় দেওয়ার অপেক্ষা।
শুভেন্দু সাংসদ পদে ইস্তফা দিলে দক্ষিণ কাঁথির তিন বারের বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারীকে তমলুক লোকসভার উপ-নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। তখন একই সঙ্গে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা আসনেও উপ-নির্বাচন অনিবার্য হবে। প্রাক্তন মন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে সেই কেন্দ্রে প্রার্থী করার ভাবনা রয়েছে তৃণমূলে। মণীশবাবু এ বার ভোটে হেরেছেন। কিন্তু ‘দক্ষ’ এই প্রাক্তন আমলাকে মন্ত্রিসভায় চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্ভবত তাই এই তড়িঘড়ি।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা অবশ্য এ ক্ষেত্রে অন্য অঙ্কের আভাস পাচ্ছেন। কারণ, সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে তমলুক লোকসভা আসনে ভোটের হিসেব তৃণমূলের পক্ষে খুব একটা স্বস্তির নয়। ২০১৪-র লোকসভায় তমলুক কেন্দ্রে ২,৪৬,৪৮১ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন শুভেন্দু। এ বারের বিধানসভা ভোটের হিসেব ধরলে কিন্তু তমলুক কেন্দ্রে তৃণমূলের ‘লিড’ দাঁড়িয়েছে এক লক্ষের কিছু বেশি। দু’ বছর আগে যে তমলুক বিধানসভায় শুভেন্দুর ‘লিড’ ছিল প্রায় ত্রিশ হাজারের। কিন্তু এ বার সেই তমলুক বিধানসভায় সামান্য ব্যবধানে হলেও হারতে হয়েছে তৃণমূল প্রার্থী নির্বেদ রায়কে। জেলার আরও যে দু’টি আসন ঘাসফুলের হাতছাড়া হয়েছে, সেই হলদিয়া ও পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভাও পড়ে তমলুক লোকসভা আসনের মধ্যেই।
তমলুক লোকসভার অধীন বাকি যে চারটি বিধানসভায় তৃণমূল এ বার জিতেছে, সেই নন্দীগ্রাম, মহিষাদল, ময়না ও নন্দকুমারেও তৃণমূলের ভোট কমেছে। এই অঙ্ক মাথায় রেখেই তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছেন, অধিকারী বাড়ির কাউকে প্রার্থী করে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের ভাবনায় রয়েছে, তমলুক বিধানসভায় ‘বহিরাগত’ নির্বেদ রায়ের হারের উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে বাইরের কাউকে প্রার্থী করে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ শাসকদল। সে জন্যই লোকসভা উপ-নির্বাচনে তমলুকে দিব্যেন্দুকে প্রার্থী করার ভাবনা-চিন্তা।
এ সব নিয়ে অবশ্য তৃণমূলের জেলা নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে দিব্যেন্দু নিজে বলছেন, ‘‘দলের নির্দেশ পালন করব।’’ তৃণমূল সূত্রে খবর, ভোটে মণীশবাবুর হার নিয়ে গত ক’দিনে বার বার দলের অন্দরে আক্ষেপ করেছেন মমতা। সেই সঙ্গে ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম কোনও উপ-নির্বাচনের সুযোগ পেলে মণীশবাবুকে সেখান থেকে জিতিয়ে মন্ত্রিসভায় আনবেন। কারণ, বিদ্যুৎ দফতরে মণীশবাবুর কাজে তিনি খুশি। মমতার নবগঠিত মন্ত্রিসভায় বিদ্যুৎ দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy