Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সমীক্ষাই সার, ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি

ডেঙ্গি রোধে এ বার গরম প়ড়ার আগেই নানা কর্মসূচি শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে সচেতনতা প্রচারের কথাও বলা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, মে থেকে অক্টোবর প্রতি মাসের ১-৫ ও ১৬-২০ তারিখ প্রতিটি এলাকায় সমীক্ষা চালানো হবে।

রেল এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। —ফাইল চিত্র।

রেল এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

বাড়ছে ডেঙ্গি। গত এক মাসে খড়্গপুরে আট জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আরও ন’জনের রক্তের এনএস ওয়ান পরীক্ষায় ডেঙ্গির সন্ধান মিলেছে। তাঁদের ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা করা হবে। ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি।

গত শীতেও খড়্গপুরে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। আক্রান্ত হয়েছিলেন জনা পনেরো। এ বার বৃষ্টি নামতেই পরপর ডেঙ্গি রোগীর সন্ধান মেলায় প্রশ্ন উঠছে, তবে কি পুর- অভিযানেই ফাঁক থেকে গিয়েছে!

রেল হাসপাতাল সূত্রে খবর, এনএস ওয়ান পরীক্ষায় যাঁদের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে, তাঁদের পাঁচ জন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ১৩, ২০, ২১, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও একজন করে রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ জন জ্বর, বমি ও মাথা ব্যথা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের ভর্তি। তাঁদের রক্তেও ডেঙ্গির জীবাণু মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। রেল হাসপাতালের চিকিৎসক এ কে জায়সবাল বলেন, ‘‘সকলেই প্রায় সুস্থ রয়েছেন। আসলে ডেঙ্গি হলেই সকলের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে।’’

ডেঙ্গি রোধে এ বার গরম প়ড়ার আগেই নানা কর্মসূচি শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে সচেতনতা প্রচারের কথাও বলা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, মে থেকে অক্টোবর প্রতি মাসের ১-৫ ও ১৬-২০ তারিখ প্রতিটি এলাকায় সমীক্ষা চালানো হবে। ছড়ানো হবে ব্লিচিং পাউডার ও মশা মারার তেলও। শহরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, এ সবই কথার কথা, আদতে স্বাস্থ্য দফতরের এই কর্মসূচি মে মাসেই মুখ থুবড়ে পড়েছে।

ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিবারের সদস্য ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওয়াই বেবিরানি ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এম সাঁইআদিত্য কুমাররা বলছেন, “কোয়ার্টারের চারদিকে আবর্জনা ও জল জমে থাকে। মশার উপদ্রবে টেকা যায় না। রেল ও পুরসভার তরফে ব্লিচিং ছড়াতে বা মশানাশক তেল স্প্রে করতে দেখা যায় না। অভিযোগ উঠলে একবার ব্লিচিং ছড়িয়েই দায় সারা হয়।”

রেল এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। তবে পুর এলাকাতেও সমস্যা কম-বেশি একই। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসুদেব বরাটের অভিযোগ, “পুরসভা ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে যে সমীক্ষা চলছে তাতে শুধুমাত্র একটি কার্ডে সই করিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। কেউ ব্লিচিং পাউডার বা মশানাশক তেল ছড়াচ্ছেন না। এটাই না কি সমীক্ষা।”

শনিবার খড়্গপুর রেল হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা মশা বাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন তিনি। ডেঙ্গি প্রতিরোধে শহরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি যথাযথ ভাবে পালন হচ্ছে না জানিয়ে এ দিন বিজেপি রেল কর্তৃপক্ষ ও পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবুও বলছেন, “কেন সমীক্ষায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে তা নিয়ে ২৭ জুন পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করব।”

গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সমীক্ষার কাজ যথাযথ ভাবেই চলছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ব্লিচিং পাউডার ও মশানাশক তেল ছড়ানো হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রেল এলাকায় রেলের স্বাস্থ্য দফতর কাজ করছে না। আর আমাদেরও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই রেল এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur Dengue খড়্গপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE