বানভাসি এলাকা থেকে জল নেমেছে। আর তারপরই পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় চোখ রাঙাচ্ছে ডায়েরিয়া। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে জলবাহী এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। দূষিত জল থেকেই মূলত ডায়েরিয়া ছড়াচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, এখনই উদ্বেগের কিছু নেই। নলকূপ শোধন করে জল নেওয়া, জল ফুটিয়ে পানের জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে।
অতিবৃষ্টি এবং জলাধারের ছাড়া জলে বাঁধ ভেঙে ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনা, কেশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা এ বার প্লাবিত হয়েছিল। এখনও বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। জল নামতে শুরু করতেই বিভিন্ন এলাকায় রোগ ছড়াতে শুরু করেছে। জলমগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ডুবে ছিল নলকূপ, কুয়োও। জল নামার পরে শোধনের আগেই বিভিন্ন নলকূপ থেকে পানীয় জল নিতে শুরু করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। ফলে বাড়়ছে ডায়েরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। নানা ধরনের জ্বরে আক্রান্ত আরও প্রায় আড়াই হাজার মানুষ।
জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ইতিমধ্যে জল শোধনের কাজ শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তাই নেওয়া হচ্ছে। যে সব এলাকা থেকে জ্বরের খবর আসছে, সেখানে মেডিক্যাল টিম যাচ্ছে। আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের সতর্কও করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, জলমগ্ন এলাকাগুলোয় এখনও মেডিক্যাল টিম, প্যারা-মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। জেলায় ৪০টিরও বেশি মেডিক্যাল টিম, প্যারা-মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর।
রোগের থাবা
ব্লক আক্রান্ত
ঘাটাল ৪৮৭
দাসপুর ১ ৩১
দাসপুর ২ ২৪৫
কেশপুর ৪০১
ডেবরা ৭০
খড়্গপুর ১ ২৬
চন্দ্রকোনা ১ ২২
চন্দ্রকোনা ২ ১৪
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও পর্যন্ত ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১,২৯৬ জন। অবশ্য বেসরকারি সূত্রে দাবি, সংখ্যাটা আরও বেশি। সব থেকে বেশি ডায়েরিয়া আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে ঘাটাল ব্লকে। এখানে ৪৮৭ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কেশপুরে সংখ্যাটা ৪০১। জেলা জুড়ে এখনও পর্যন্ত নানা ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৩২ জন। এ ক্ষেত্রেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ঘাটাল ব্লকে, ৮৫০ জন। কেশপুরে ৭০৯ জন, দাসপুর ২ ব্লকে ৩৪০জন জ্বরে ভুগছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওই সব এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ এভিএস, ওআরএস, ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন প্রভৃতি পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকার জলাধারগুলো দ্রুত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় মেডিক্যাল টিমও পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ, জলমগ্ন এলাকার নলকূপ বা কুয়োর জল ফুটিয়ে ব্যবহার করা উচিত। নলকূপ বা কুয়োর থেকে সংগৃহীত জলে হ্যালোজেন বড়ি বা ক্লোরিন দ্রবণ মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত। প্রতি লিটার জলে একটি হ্যালোজেন বড়ি দিয়ে আধ ঘণ্টা পরে ব্যবহার করা উচিত। শুধু খাওয়ার জল নয়, বাসনপত্র ধোয়া বা রান্নার কাজেও দূষণ মুক্ত জল ব্যবহার করা উচিত। কেশপুরের সাহসপুরের বাসিন্দা নবকুমার ঘোষ বলছিলেন, “এলাকায় কয়েকজনের জ্বর হয়েছিল। জ্বরে আক্রান্তরা মেডিক্যাল ক্যাম্পে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছে। ক্যাম্প থেকেই ওষুধপত্র পেয়েছে।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলছেন, “জল দূষণের ফলে ডায়েরিয়া-সহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। সচেতনতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy