Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খুঁড়ে রাখা নালায় বেহাল দিঘা

দিঘা হবে গোয়া। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে তো পাঁচ বছর আগের কথা। কিন্তু আদত দিঘার বদল হয়নি এক ইঞ্চিও— গোয়া বহুত দূর। বরং পরিকল্পনার অভাবে সামান্য নিকাশি সংস্কারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমসিম প্রশাসন।

হোটেলের সামনে খোলা নালা। নিউ দিঘায় সোহম গুহর তোলা ছবি।

হোটেলের সামনে খোলা নালা। নিউ দিঘায় সোহম গুহর তোলা ছবি।

সুব্রত গুহ
দিঘা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০০:৩১
Share: Save:

দিঘা হবে গোয়া।

স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে তো পাঁচ বছর আগের কথা। কিন্তু আদত দিঘার বদল হয়নি এক ইঞ্চিও— গোয়া বহুত দূর। বরং পরিকল্পনার অভাবে সামান্য নিকাশি সংস্কারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমসিম প্রশাসন। দু’বছর ধরে স্থগিত রয়েছে কাজ। ভুগছেন বাসিন্দারা। ভুগছে পর্যটন।

জানা গিয়েছে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্যে দিঘায় নিকাশি সংস্কারের কাজ হওয়ার কথা ছিল। সে কাজ শুরুও হয়েছিল ২০১৪ সালে। কিন্তু মাঝপথে ঠিকাদার সংস্থা কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছে। তাতে অসুবিধা হয়েছে দু’রকম। নিকাশি ব্যবস্থার কোনও উন্নতি তো হয়নি, উল্টে মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নালা তৈরির জন্য খুঁড়ে রেখে দেওয়া হয়েছে শহরের রাস্তাঘাট। যান চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে।

দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সুজন দত্ত জানিয়েছেন, বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্যে নিকাশি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দ অর্থের চেয়ে প্রকল্পের ব্যয় বেশি হয়ে যায়। সুজনবাবুর দাবি, ‘‘অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এর মধ্যে যতটুকু কাজ হয়েছিল তার টাকা না পেয়ে ঠিকাদার সংস্থা মাঝপথে কাজ বন্ধ করে দেয়। তার ফলেই সমস্যা।’’

শহর জুড়ে প্রতিদিন গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন হোটেল, লজ। বাড়ছে জনসংখ্যা। বসত বাড়ি বা হোটেলের নোংরা বর্জ্য জল গড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি নিকাশি নালাগুলি অবশ্য সবই আবর্জনায় ঠাসা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পালাবদলের পর সৈকত শহরের রংচঙে সৌন্দার্যায়নের নানা উদ্যোগ চোখে পড়েছে। কিন্তু সামান্য নিকাশি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে কোনও ব্যবস্থাই হয়নি। কিন্তু ঘটনা হল, একটি পর্যটন প্রধান শহরের এমন সমস্যায় যে শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা ভুগছেন তা তো নয়। বীতশ্রদ্ধ পর্যটকরাও। বেড়াতে এসেও প্রতিদিন নোংরা জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হন তাঁরা।

নিউ দিঘা প্লট হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অলোক মিশ্রর অভিযোগ, “গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলেছে। রাস্তার অবস্থা এখন শোচনীয়। যানবাহনের কথা তো ছেড়েই দিলাম। অন্ধকারে খানাখন্দে পড়ে গিয়ে পথচারীও আকছার জখম হচ্ছেন। আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে যে কোনও দিন।” অলোকবাবুর অভিযোগ, রাস্তা জুড়ে থাকা গর্তগুলি বন্ধ করার বিষয়ে সামান্যতম উদ্যোগী নয় দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের। বারবার জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।

শুধু তাই নয়। বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, ওই খানাখন্দে বর্ষার জল জমে মশার উপদ্রবও বাড়ছে এলাকায়। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নিউ দিঘার এন-টু সেক্টরের বাসিন্দারা। অভিযোগ, দু’বছর ধরে তাঁদের বাড়ির সামনে পড়ে রয়েছে নালার গর্ত। জল নিকাশি বা অন্য কোনও রকম উপকারেই লাগে না সেই নালা। বরং বর্ষার জল জমে পথ চলা দায়। কিন্তু হেলদোল নেই প্রশাসনের।

নিউ দিঘা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুব্রত সরকারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘নিউ দিঘার ইকোনমিক সেক্টরের হোটেলগুলির সামনে নালাগুলির অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। হোটেলের সামনে বড় বড় করে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। বাধ্য হয়ে নিজেরাই গাড়ি ঢোকা বেরনোর জন্য পাটাতন পেতে নিয়েছেন হোটেল মালিকরা। পর্যটকরাও সমস্যায় ।”

স্থানীয় পদিমা-১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মণীন্দ্র দত্ত অবশ্য বলছেন, “বিষয়টি পঞ্চায়েতের আওতাধীন নয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বারবার পঞ্চায়েতে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাই উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকেও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। পর্ষদ জানিয়েছে, সমাধানের চেষ্টা চলছে।” দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সুজন দত্তও আশ্বাস দিয়েছেন, প্রকল্পের অতিরিক্ত বরাদ্দ সম্প্রতি মঞ্জুর হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থাও ফের কাজ শুরু করতে চলেছে। খুব তাড়াতাড়ি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drainage waste Digha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE