খড়্গপুরে তৃণমূলের সাংবাদিক বৈঠক রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে তৃণমূলের বিপুল জয়। অথচ রেলশহরে কাঁটা বিঁধেছে ঘাসফুলে।
খড়্গপুর সদরে জিতেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জেতার পর থেকে তৃণমূলকেই নিশানা করেছেন দিলীপবাবু। জেলায় এসে দরকারে তৃণমূল কর্মীদের হাড়গোড় ভেঙে বস্তায় ভরার হুমকি দিয়ে গিয়েছেন তিনি।
তারই প্রতিবাদে রবিবার খড়্গপুর শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কমিটির কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেন খড়্গপুর সদরের দলীয় প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারি। তিনি বলেন, “আমরা শাসকদলে থেকেও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের পরেও এই শহরে অশান্তি হয়নি। কিন্তু দিলীপ ঘোষ যে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন, তাতে আমরা আতঙ্কিত। দিলীপবাবু এ সব না বলে উন্নয়নে নজর দিন।” সাংবাদিক বৈঠকে হাজির খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারেরও বক্তব্য, “দিলীপবাবুকে অনুরোধ, তিনি মারধরের হুমকি না দিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে রেলবস্তির উন্নয়ন করুন। পুরসভা সহযোগিতা করবে।”
বিজেপি অবশ্য পাল্টা বিঁধছে তৃণমূলকেই। বিজেপি-র খড়্গপুর শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরা ব্লকে ব্লকে তৃণমূলের হাতেই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই ক্ষোভ থেকেই এমন মন্তব্য করেছেন আমাদের রাজ্য সভাপতি।’’
হারের কাঁটার পাশাপাশি রেলশহরে শাসক শিবিরে বিঁধছে গোষ্ঠী কোন্দলের কাঁটাও। এ বার ভোটে খড়্গপুরে তৃতীয় স্থান পেয়েছে তৃণমূল। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, ‘তৃণমূল নেত্রী না এলে এটুকু ভোট পাওয়াও সম্ভব ছিল না’। এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন না দেবাশিস। তবে তাঁর ওই মন্তব্যের সূত্র টেনে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদবাবু বলেন, ‘দিদির কারণে যদি শুধুমাত্র এটুকু ভোট পেয়ে থাকি তার অর্থ এটা দলের শহর সভাপতির সাংগঠনিক দুর্বলতা। শহর সভাপতি এমন মন্তব্য করে থাকলে এখনই ওঁর পদত্যাগ করা উচিৎ।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “সঙ্ঘবদ্ধভাবে না হলেও দলের কিছু ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছে এটা মানছি। তবে দল তদন্ত করে নিশ্চয়ই আসল কারণ খুঁজে বের করবে।”
এই শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল বহু দিনের। দলের জেলা নেতা জহরলাল পালের সঙ্গে শহর সভাপতি দেবাশিসের গোষ্ঠীর বিরোধ রয়েছে এখানে। এ বার নির্বাচনে ‘বহিরাগত’ রমাপ্রসাদকে প্রার্থী করায় বিক্ষোভও দেখান দেবাশিস অনুগামীরা। পরে দেবাশিসকে প্রচারে দেখা গেলেও তৃণমূলে ফল ভাল হয়নি। তিনটি ওয়ার্ড বাদে বাকি ৩২টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে। এর জন্য তৃণমূলের অন্তর্ঘাত দায়ী বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
দেবাশিস এ দিনও বলেছেন, “আমি আবারও বলছি দিদি না আসলে আমরা এটুকু ভোটও পেতাম না। কেউ যদি এটা স্বীকার না করে তবে দিদিকে অসম্মান করা হবে। সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে বলেই ২০১০-এর পুরভোটের তুলনায় এ বার দল বেশি ভোট পেয়েছে।” সাংবাদিক বৈঠকের কথা তাঁকে জানানো হয়নি বলেও অনুযোগ করেন দেবাশিসবাবু। তৃণমূলের জেলা নেতা জহরলাল পাল সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy