Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাইবোনের জামা নিয়ে হাহাকার ফরিদের

রিদ জানালেন, বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে রাজীবের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়েছিল। ফরিদের কথায়, ‘‘ভাই তখন ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল। খেলা নিয়ে কত কথা হল। তারপর ওই রাতেই তো সব শেষ!’’

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

ভাই-বোনের জন্য নতুন জামা কিনেছিলেন দাদা। ক্রিকেট পাগল ভাইয়ের জন্য একটা ব্যাটও কিনেছিলেন। আর মাকে শাড়ি কিনে দেবেন বলে জমিয়েছিলেন টাকা। ভেবেছিলেন, ইদের আগে বন্ধুর হাতে সব গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন।

ইদের আগে বাড়িতে ফিরতে হল কাজি ফরিদকেই। তবে উপহারগুলো আর ভাই-বোনকে দেওয়া হল না। ভাই কাজি রাজীব আর বোন রেশমি খাতুন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে। আর মা ফতেমা বিবি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন হাসপাতালে।

ঘাটালের সুন্দরপুর গ্রামে এই ঘটনায় অভিযুক্ত ফরিদের সৎ কাকা কাজি ইসমাইল। শনিবার বাড়িতে ফিরে বছর বাইশের ফরিদ বলছিলেন, ‘‘কাকা যে এ রকম কাণ্ড ঘটাতে পারে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। আমি আর বাবা এ বার কাদের
নিয়ে বাঁচব।’’

ফরিদ জানালেন, বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে রাজীবের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়েছিল। ফরিদের কথায়, ‘‘ভাই তখন ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল। খেলা নিয়ে কত কথা হল। তারপর ওই রাতেই তো সব শেষ!’’

দুই ছেলেমেয়েকে হারিয়ে হাহাকার করছেন কাজি হাসেম আলিও। শনিবার ভোরে ফরিদ আর তিনি সুন্দরপুরের বাড়িতে ফিরেছেন। মুম্বইতে কাঠের মিস্ত্রির কাজ করা হাসেমের কাছেই থাকতেন বড় ছেলে ফরিদ। তিনি দর্জির কাজ করেন। এখন থাকেন বেঙ্গালুরুতে।

পোড়া ঘরে ফিরে বাবা-ছেলের চোখের জল আর বাঁধ মানছে না। পড়শি শেখ মুন্না বলছিলেন, “দু’টো রোজগারের জন্য বড় ছেলেকেও নিয়ে গিয়েছিলেন হাসেম। সংসারে সবে দু’টো পয়সা আসা শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেই সব ছারখার হয়ে গেল।”

বাড়িতে পেট্রল ঢেলে ভাইপো-ভাইঝিকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ইসমাইল এখনও পলাতক। তবে তাঁর মা কুলসুম বেগম ও বোন হামিদা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল শেখ ফরিউদ্দিন নামে তাঁদের আর এক আত্মীয়কে। ধৃত তিন জনেরই এ দিন তিন দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনায় আরও দু’জনকে আটক করা হয়েছে।

ফতেমা বিবির ঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার আগে দরজায় বাইরে থেকে তারা দিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। কয়েকজন প্রতিবেশীর ঘরেও দরজাও বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে, উদ্ধারকাজে দেরি হয়েছিল।

অথচ ইসমাইলের মা-বোনের ঘরের দরজা ছিল খোলা। তারপরেও তাঁরা ঘটনার সময় বাইরে না বেরনোয় গ্রামবাসী প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিনও সুন্দরপুর গ্রামে ছিল উত্তেজনা। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা এলাকা। পুলিশের উপস্থিতিতেই এ দিন নিহত দুই কিশোর-কিশোরীকে সমাহিত করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Fire Brother in Law ঘাটাল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE