Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হঠাৎ চিৎকারে ঘুম ভাঙে রাতে

চিত্র এক: তখন রাত আড়াইটে হবে। হঠাৎ প্রচণ্ড চিৎকার। প্রথমে বিশেষ আমল দেননি খড়্গপুরের সুভাষপল্লির মহিষাপুকুর মোড়ের বাসিন্দা এক মহিলা। কিন্তু গোলমাল কিছুতেই না থামায় কি হয়েছে জানতে তিনি ঘরের জানালা খুলে দেখেন, কয়েকজন অপরিচিত যুবক নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজে কান পাতা দায়।

খড়্গপুুর শহরে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে গভীর রাত পর্যন্ত এ ভাবেই চলে আড্ডা। — রামপ্রসাদ সাউ।

খড়্গপুুর শহরে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে গভীর রাত পর্যন্ত এ ভাবেই চলে আড্ডা। — রামপ্রসাদ সাউ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০০:৩৪
Share: Save:

চিত্র এক: তখন রাত আড়াইটে হবে। হঠাৎ প্রচণ্ড চিৎকার। প্রথমে বিশেষ আমল দেননি খড়্গপুরের সুভাষপল্লির মহিষাপুকুর মোড়ের বাসিন্দা এক মহিলা। কিন্তু গোলমাল কিছুতেই না থামায় কি হয়েছে জানতে তিনি ঘরের জানালা খুলে দেখেন, কয়েকজন অপরিচিত যুবক নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। সঙ্গে অকথ্য গালিগালাজে কান পাতা দায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলা বলছেন, ‘‘প্রতিদিন গভীর রাতে অচেনা যুবকেরা এলাকায় এসে নিজেদের মধ্যেই কী সব আলোচনা করে! অশ্লীল ভাষায় কথা বলে। খুব ভয় লাগে। এই যন্ত্রণা থেকে কবে রক্ষা পাব
জানি না।’’

চিত্র দুই: দিন কুড়ি আগে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন ব্যবসায়ী শুভজিৎ কুণ্ডু। খড়্গপুরের রাজগ্রামে রবিনের বাগান বাড়ির কাছে কয়েকজন যুবক তাঁকে পাকড়াও করে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে যান পড়শি সুবীর সাঁতরা নামে আর এক ব্যবসায়ী। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘শুভজিৎ আমাকে ফোন করায় আমি ছুটে যাই। মধ্যস্থতা করতে যাওয়ায় ওরা আমাকে গুলি করে মারার হুমকি দেয়। কোনও মতে মীমাংসা করে ফিরে আসি। খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।’’

রাত বাড়লেই খড়্গপুর শহরের রাস্তায় রাস্তায় এ দু’টি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘বিপদে’র হাতছানিতে এখন অন্ধকারে রাস্তার বেরোতে ‘ভয়’ পাচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা।

অভিযোগ, কোথাও মাঠে আবার কোথাও রাস্তার ধারেই প্রকাশ্যে বসছে মদের আসর। শুধু মদ্যপানেই থেমে থাকছে না, নিজেদের মধ্যে মারপিটেও জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। ভয় দেখিয়ে বাড়ি-বাড়ি টাকা তোলার অভিযোগও উঠছে অনেক জায়গায়।

শহরের বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, দুষ্কৃতী রাজ থেকে মুক্তি পাওয়া দূরের কথা, উল্টে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ। শহরের নিরাপত্তার কঙ্কালসার দশা ঘুচবে কবে, সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে শহরের বাসিন্দাদের মনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘রাত বাড়লেই অপরিচিত যুবকদের পাড়ায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা মদ্যপ অবস্থায় থাকে। কখনও কখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা নিজেদের মধ্যে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে। ‘গ্যাং ওয়ার’-র দাপটে রাস্তায় বেরোতেও ভয় লাগে।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘প্রতিবাদ করা মানা। কিছু বললেই চোখ রাঙানি আর গালমন্দ। মারধরও জুটতে পারে।’’

শহরে গুলি, ছিনতাইয়ের ঘটনা আগেও ঘটেছে। খড়্গপুরের খরিদা, রাজগ্রাম, কুমোরপাড়া, ছত্তিসপাড়া, বিদ্যাসাগরপুর, বামুনপাড়া, সুভাষপল্লি, ঝুলি, গোপালনগর, আয়মা এলাকায় রাতে অপরিচিত যুবকদের ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বলে স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ। সম্প্রতি শহরের ঝুলি এলাকায় এক বৃদ্ধকে গুলি করার ঘটনা ঘটে। পরে এলাকার একটি বাড়ি থেকে পাঁচটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। বিহারের মুঙ্গেরের এক অস্ত্র সরবরাহকারী-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছিল, ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বেআইনি অস্ত্রের কারবার চালানো হত। বেশ কয়েক দিন ধরে কারবার চললেও পুলিশ টের পায়নি বলেও দাবি।

শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, আগে রাতেও শহরের গলিপথে পুলিশকে টহল দিতে দেখা যেত। এখন আর সে সবের বালাই নেই। প্রধান রাস্তায় পুলিশ টহল দেয়। তাই দুষ্কৃতীদের আড্ডার জায়গাও বড় রাস্তা থেকে গলিপথে সরে গিয়েছে। পুলিশের ভয় না থাকায় অসামাজিক কাজের আখড়ায় পরিণত হয়েছে শহরের কয়েকটি এলাকা।

এই সব দুষ্কৃতীদের দাপটে অতিষ্ট রাজগ্রাম এলাকার বাসিন্দারা সম্প্রতি স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৈঠক করেন। পরিস্থিতি বদল করা যায় কী ভাবে, তা নিয়ে তারা আলোচনা করেন। সমস্যা মেটাতে পুলিশের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা দেবশ্রী দাম বলেন, “আমরা আতঙ্কিত। গালিগালাজের ঠ্যালায় কান পাতা দায়। পুলিশ এখন আর এলাকায় টহল দেয় না। কাকে কী বলব। ”

সমস্যা আরও বেশি ইন্দার বিদ্যাসাগরপুর এলাকায়। প্রতি রাতে ওই এলাকায় রাস্তার ধারে মদ-জুয়ার আসর বসে বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা দীপান্বিতা রায়ের কথায়, “আগে পুলিশ মোটরবাইকে করে টহল দিত। এখন আর পুলিশের দেখা পাই না। সেই সুযোগে বাড়ির কাছে ফাঁকা জায়গায় চলে দেদার জুয়া খেলা। কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পাই না।’’

যদিও পুলিশের দাবি, পুলিশ মোটরবাইকে করে নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় টহল দেয়। তবে একটিই বাহিনী সারা শহরে টহল দেওয়ায় এক জায়গা থেকে অন্যত্র পৌঁছতে সময় লাগে। যদিও খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “রাতে নিয়মিত পুলিশ টহল দেয়। তবে প্রতিদিন শহরের সর্বত্র যাওয়া হয়তো সম্ভব হয় না। কেউ কোনও অভিযোগ জানালে নিশ্চয় খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে টহলদারি আরও বাড়ানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firing Goons Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE