ভিটেহারা। ছবি:কৌশিক সাঁতরা
কোথাও শিকড় উপড়ে পড়ে রয়েছে বিশাল গাছ। কোথাও ভেঙে পড়ে রয়েছে দোতলা বাড়ি। কোথাও রাস্তা উঠে গিয়েছে শূন্যে!
এই খণ্ডহর কোনও পুজোর থিম নয়। এ ছবি ঘাটালের প্রতাপপুরের। দু’মাস আগের বন্যার ক্ষত এখনও যেখানে দগদগে!
জলস্রোতে ভেসে গিয়েছিল ঘরবাড়িও। দুর্গতদের এখনও কেউ ত্রাণ শিবিরে, কেউ আত্মীয় বা পড়শির বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন। ঘর মেলেনি তাঁদের। রাজ্যের অন্য এলাকার মানুষ যখন শারদোৎসবে মেতেছেন, তখন বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন প্রতাপপুরের বাসিন্দারা। পুজো এখানে হচ্ছে ঠিকই। তবে নমো নমো করে। উচ্ছ্বাস নেই গ্রামবাসীদের মনে।
অনুরূপা চৌধুরী নামে এক দুর্গতের কথায়, ‘‘লোকের ঘরে আছি। নতুন জামাকাপড় দূর, দু’বেলা খেতে পেলেই বর্তে যাচ্ছি।’’ সুষমা ঘোড়ুই নামে আর এক মহিলা বলেন, “নতুন কিছু কেনার সামর্থ্য আর নেই। কী ভাবে সংসার চালাব, সেটাই এখনও বুঝতে পারছি না।” প্রতাপপুরের পাঁচমাড়ো মোড়ে পুজো মণ্ডপ তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে উৎসাহ-উদ্দীপনা তেমন দেখা গেল না। উদ্যোক্তাদের পক্ষে পবিত্র হড় বলেন, “ফি-বছর গ্রামে ঘটা করে পুজো হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। এ বার শুধু পুজোটুকু হচ্ছে।”
টানা বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে গত ২৬ জুলাই রাতে শিলাবতীর নদীবাঁধের একাংশ ভেঙে পড়ে। তার পর থেকেই কখনও তাঁদের দিন কাটে সরকারি ত্রাণ শিবিরে, কখনও খোলা আকাশের নীচে। পুজোর মুখে অনেকেই গ্রামে ফিরেছেন ঠিকই। কিন্তু স্বস্তি ফেরেনি। আশ্রয়-শিবিরে থাকার সময়ে দুর্গতেরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি করে ‘রিলিফ কিট’ পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তার পরে এত দিন কেটে গেলেও আর কোনও সাহায্য আসেনি বলে অভিযোগ।
প্রতাপপুরে বাঁধ সংস্কার দেখতে এসে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিন্তাভাবনা করছেন। দেওয়া হবে ক্ষতিপূরণ।” ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যেই চাল-ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে।” ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই মানছেন, “প্রতাপপুরের পরিস্থিতি এখনও খুব খারাপ।” নিত্যদিন শুধু অপেক্ষা। কবে মিলবে ক্ষতিপূরণ, কবে হবে ঘর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy