চিকিৎসাধীন। ভীম মুর্মু।
একটা মাছ দাঁতে চেপে আর একটা মাছ ধরা দীর্ঘদিনের অভ্যাস ভীম মুর্মুর। সেটাই কাল হল। সোমবার দুপুরে একটা জ্যান্ত কই গলায় আটকে প্রাণ ওষ্ঠাগত তাঁর। শেষে ঝাড়খণ্ড থেকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটিতে এনে শ্বাসনালী থেকে বার করা হল কই মাছ। জটিল অস্ত্রোপচার সফল ভাবে সেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ইএনটি সার্জেন সেবানন্দ হালদার এবং অ্যানাস্থেটিস্ট অপূর্ব দাস।
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের চাকুলিয়া থানার বীরুডোবা গ্রামের বাসিন্দা ভীমের সংসারে শুধু স্ত্রী আর ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে। বছর পঁয়ত্রিশের যুবক সামান্য চাষবাস করেই সংসার চালান। তবে নেশা তাঁর মাছ ধরা। বন্ধুদের সঙ্গে পুকুরে নেমে খপাখপ মাছ ধরেন, হাত দিয়েই। সোমবারও গ্রামের কাছে চাষিয়াবেড়া পুকুরে মাছ ধরছিলেন।
ভীমের বন্ধু সাগরাম মুর্মুর কথায়, ‘‘বড়সড় একটা কই মাছ হাত দিয়ে ধরেছিল ভীম। আর একটা মাছ দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি হাতের কইটাকে মুখে কামড়ে ধরে ও। আগেও কতবার এমন করেছে। কিন্তু এ দিন আচমকা পাখনা ঝাপটে মাছটা ভীমের মুখে ঢুকে গেল।” যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন ভীম। ওই অবস্থাতেই ছুটে বাড়িতে যান। ভীমের স্ত্রী দিপালিদেবী বলেন, “উনি কথা বলতে পারছিলেন না। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। থরথর করে কাঁপছিলেন।”
গ্রাম থেকে চাকুলিয়া হাসপাতালও প্রায় ১০ কিলোমিটার। সাগরামই মোটর বাইকে চাপিয়ে বন্ধুকে সেখানে নিয়ে যান। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে ঝাড়গ্রামে রেফার করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টায় ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় ভীমকে।
মঙ্গলবার ইএনটি সার্জেন সেবানন্দ হালদার জানান, কই মাছটি ভীমের শ্বাসনালীর উপরে নেজোফ্যারেনজিয়াল স্পেস-এ আটকে ছিল। ফরসেপ (চিমটে) দিয়ে প্রথমে লেজ ধরে টেনে বের করার চেষ্টা করা হয়। লেজ ছিঁড়ে গেলেও মাছ বেরয়নি। ওই অবস্থাতেই জীবন্ত মাছটি গলার ভিতর ছটফট করতে থাকে। তাতে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। সেবানন্দবাবু বলেন, ‘‘রক্ত শ্বাসনালীতে জমে গেলে অঘটনের আশঙ্কা ছিল। তাই দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই।’’
তবে সে কাজও সহজ ছিল না। জরুরি বিভাগের ওটিতে ইএনটি অস্ত্রোপচারে উপযুক্ত আলো ছিল না। অথচ, সুপার স্পেশ্যালিটির ওটিতে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার মতো সময়ও ছিল না। তাই সাধারণ ওটির আলোতেই কাজ শুরু করে দিতে হয়। অ্যানাস্থেটিস্ট অপূর্ব দাস রোগীর মুখের ভিতর দিয়ে শ্বাসনালীতে এন্ডো ট্র্যাকিয়্যাল টিউব ঢুকিয়ে দেন। আর একটি এন্ডো ট্র্যাকিয়্যাল টিউব নাকের ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে মাছটিকে ঠেলা হয়। কিন্তু জ্যান্ত মাছ তাতেও কাবু হয়নি। শেষ পর্যন্ত মুখের ভিতর লম্বা আর্টারি ফরসেপ ঢুকিয়ে মাছের মাথাটিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পর বের করা হয় ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা মাছটিকে।
দেড় ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারের পর ভীমকে বিপন্মুক্ত বলে ঘোষণা করেন সেবানন্দবাবু। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার। পুরো কৃতিত্বই চিকিৎসকের। এটা আমাদের বড় সাফল্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy