Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঝাড়গ্রামে সভা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র, জানেন না অনেকে

সালটা ১৯৪০। তখনও সুভাষচন্দ্র বসু ‘নেতাজি’ হননি। ওই বছরের ১২ মে ঝাড়গ্রামে এক জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। নাড়াজোলের কুমার দেবেন্দ্রলাল খানের আয়োজনে অবিভক্ত মেদিনীপুরে সেটিই ছিল সুভাষচন্দ্রের শেষ জনসভা। ওই সভায় সুভাষচন্দ্র ঘোষণা করেছিলেন, ‘আপস নয়, সংগ্রাম ও ত্যাগের পথেই স্বরাজ আসবে’।

ভরসা ফলকেই। নিজস্ব চিত্র।

ভরসা ফলকেই। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৪
Share: Save:

সালটা ১৯৪০। তখনও সুভাষচন্দ্র বসু ‘নেতাজি’ হননি। ওই বছরের ১২ মে ঝাড়গ্রামে এক জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। নাড়াজোলের কুমার দেবেন্দ্রলাল খানের আয়োজনে অবিভক্ত মেদিনীপুরে সেটিই ছিল সুভাষচন্দ্রের শেষ জনসভা। ওই সভায় সুভাষচন্দ্র ঘোষণা করেছিলেন, ‘আপস নয়, সংগ্রাম ও ত্যাগের পথেই স্বরাজ আসবে’।

অথচ সুভাষচন্দ্রের ঝাড়গ্রামে পদার্পণের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি স্মরণীয় করে রাখার কোনও প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি। এই অরণ্যশহরে সুভাষচন্দ্র যে জনসভা করেছিলেন, সেই তথ্য অনেকেরই অজানা।

এখন যেটা অরণ্যশহরের দুর্গা ময়দান, ৭৬ বছর আগে সেটার নাম ছিল লালগড় মাঠ। সে দিন সকালে মেদিনীপুর থেকে গাড়িতে ধেড়ুয়া হয়ে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন সুভাষচন্দ্র। ঝাড়গ্রাম আসার পথে দহিজুড়িতে বিশাল তোরণ বানিয়ে সুভাষচন্দ্রকে অর্ভ্যথনা জানানো হয়েছিল। ঝাড়গ্রামে এসে ব্যবসায়ী নলিনবিহারী মল্লিকের আতিথ্য গ্রহণ করে একটি টালির বাড়িতে (এটি এখন উড়ালপুলের কাছে বাছুরডোবা পেট্রোল পাম্পের অফিস ঘর) কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছিলেন। আরও কিছু কর্মসূচি সেরে ঝাড়গ্রাম কোর্টে বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীদের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকের পর বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছেছিলেন সুভাষচন্দ্র। তার আগে ঝাড়গ্রামের শান্তিনিকেতন হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন। সভা সেরে ওই রাতেই ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে হাওড়ার ট্রেন ধরেছিলেন সুভাষচন্দ্র। ঝাড়গ্রাম স্টেশনের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে খানিকক্ষণ বসেছিলেন।

শহরের ঐতিহ্যবাহী সেই দুর্গা ময়দানে স্থায়ী দুর্গামন্দির তৈরি হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সুভাষচন্দ্রের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বেসরকারি ভাবে দুর্গা ময়দান রক্ষা কমিটির উদ্যোগে মাঠের একপাশে একটি স্মারকস্তম্ভ তৈরি করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভের ফলকটিতে অবশ্য ভুল তথ্য লেখা রয়েছে। ফলকে লেখা আছে, পরাধীন ভারতবর্ষে সুভাষচন্দ্রের শেষ জনসভাটি দুর্গা ময়দানে হয়েছিল। এটি ঠিক নয়। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় সেটি ছিল সুভাষচন্দ্রের শেষ জনসভা ছিল। ঐতিহ্যবাহী মাঠে এখন লরি থেকে পণ্যসামগ্রী খালাসের কাজ হয়। দুর্গা ময়দান ক্লাবেব কর্মকর্তা রাকেশ রিংসিয়া জানান, স্মারকস্তম্ভটি সংস্কার করে নতুন ফলক বসানোর জন্য ব্যবস্থা হবে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবসের সকালে স্মরণ করা হয় তাঁকে। শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মিষ্টি।

এই মাঠটি ছাড়া ঝাড়গ্রাম শহরে সুভাষচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাগুলি সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নে প্রশাসনিক ভাবে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “পুরনো নথি খতিয়ে দেখে সুভাষচন্দ্রের ঝাড়গ্রাম সফর স্মরণীয় করে রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Netaji
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE