তাণ্ডব: মুখে রুমাল বাঁধা যুবকের দল। রাস্তায় পড়ে বিক্ষোভকারী এক বৃদ্ধ। নিজস্ব চিত্র
বিক্ষোভ, অবরোধ চলছিল ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে। পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডে মঞ্চ বেঁধে সভা করছিল ‘মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’। সেই অবস্থান কর্মসূচিতে হঠাৎই হামলা চালাল একদল বহিরাগত। দু’পক্ষের সংঘর্ষে জখম হলেন বেশ কয়েকজন। বাদ পড়েনি সংবাদ মাধ্যমও। অভিযোগের তির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে।
এমনকী গোটা ঘটনায় বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এসইউসি প্রভাবিত সংগ্রাম কমিটি নেতৃত্ব। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে স্বতঃস্ফূর্ত বলে দাবি করেছে তৃণমূল। পুলিশ জানিয়েছে, কমিটির দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
দ্রুত মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের দাবিতে ঘাটাল ‘মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ১১টা নাগাদ শুরু হয় পথ অবরোধ। যানজটে রুদ্ধ হয়ে পড়ে ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়ক। পুলিশ গিয়ে কথা বলায় অবরোধ তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্মারকলিপি দিতে চান নেতৃত্ব। সেই অনুযায়ী কমিটির চার প্রতিনিধিকে নিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে রওনা দেয় পুলিশ। ততক্ষণে অবশ্য রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড।
ঠিক কী ঘটেছিল?
একটি সূত্রের দাবি, যানজটের সময় বাসের ধাক্কায় জখম হন ঘাটাল কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। পুলিশ তাঁকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করায়। ছাত্রীর মাথায় সামান্য আঘাত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঘাটাল কলেজের টিএমসিপি সমর্থকেরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ।
জোর করে অবরোধ তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালায় ওই বহিরাগতরা। অভিযোগ, ওই যুবকদের হাতে ছিল লাঠি। কারও কারও মুখ বাঁধা ছিল রুমালে। অভিযোগ, কমিটির সদস্যদের রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। বাদ যাননি মহিলা সদস্যরাও। ভেঙে দেওয়া হয় মঞ্চ, ভাঙচুর করা হয় ভাড়া করে আনা চেয়ার, টেবিল, মাইক। ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন সাংবাদিকরাও। প্রায় ২৪ জন কমিটি সদস্য জখম হয়েছেন বলে খবর।
যদিও পাল্টা প্রতিরোধ গড়েন কমিটির সদস্যরা। তাঁরাও ভাঙচুর চালিয়েছেন বেশ কয়েকটি বাসে। এমনকী বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন তিনি।
শঙ্করবাবুর বক্তব্য, এ দিন তিনি যানজটে আটকে পড়েছিলেন। তাই গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময়ই তাঁর গায়ে এসে পড়ে ইটের টুকরো। পা কেটে গিয়েছে তাঁর। পরে ঘাটাল থানার পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। ঘণ্টা খানেক পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশ পৌঁছতেই চম্পট দেয় যুব বাহিনী।
মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি-র যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, “গোটা ঘটনাটাই ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের মদতে হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে আমাদের সমর্থকদের উপর হামলা চালায় টিএমসিপি।” শঙ্করবাবু অবশ্য বলেন, “আমি কাউকেই মদত দিইনি। বরং গোলমালের মধ্যে পড়ে জখম হয়েছি। পুলিশ তদন্ত করুক।”
জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” আন্দোলনকারীদের মধ্যে চারজনকে দুপুরে আটক করা হলেও, বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযুক্ত লাঠিধারী যুব বাহিনীর কাউকে গ্রেফতার
করা হয়নি।
এ দিনের হামলার প্রতিবাদে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন ‘মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’ নেতৃত্ব।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য ঘটনার নিন্দা করেছেন। শহরের এক বাসিন্দা এ দিন বলেন, ‘‘রাস্তা অবরোধে সমস্যা হয় সাধারণের। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে ঘাটালের সার্বিক উন্নতির জন্যই এই আন্দোলনটা হচ্ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy