Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উমার স্বপ্নপূরণে বাধা অনটন

ছোট থেকেই মেধাবী উমা। শুধু মেধা নয়, উমার গানের গলায় মুগ্ধ খাজরার জঙ্গল ঘেঁষা পাঠানমারী গ্রাম। ঝুমুর গান গেয়ে এলাকায় বেশ নাম করেছে উমা এই বয়সেই। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে এ বারের মাধ্যমিকে উমার ফল। হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যম সন্তান উমা মাহাতো মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৪২।

উমা মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।

উমা মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০০:৫২
Share: Save:

ছোট থেকেই মেধাবী উমা। শুধু মেধা নয়, উমার গানের গলায় মুগ্ধ খাজরার জঙ্গল ঘেঁষা পাঠানমারী গ্রাম। ঝুমুর গান গেয়ে এলাকায় বেশ নাম করেছে উমা এই বয়সেই। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে এ বারের মাধ্যমিকে উমার ফল।

হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যম সন্তান উমা মাহাতো মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৪২। কেশিয়াড়ির খাজরা সতীশচন্দ্র মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রথম স্থান তারই দখলে। ঝন্টু মাহাতো ও জ্যোৎস্না মাহাতোর অভাবের সংসারে উমা অবশ্য প্রথম নয়। তার দিদি রুমাও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। আর ছোট ছেলে সঞ্জয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

কিন্তু এই ফলে কি খুশি হবে উমা? তার চোখে স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু মায়ের পাতা কুড়ানোর রোজগারে পাঁচ জনের সংসার চলে। সেখানে স্বপ্ন দেখা যে বারণ। সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘শালপাতা কুড়িয়ে থাল সেলাই করি। এক হাজার থালা সেলাই করলে মেলে ১০০ টাকা। কী দিয়ে কী হবে?’’ উমার বাবা ঝন্টু মাহাতো দিন মজুরের কাজ করেন। কিন্তু প্রতিদিন কাজ জোটে কই? তাই মেয়েটার জীবন নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। তিনি বলেন, “আমি কোনও দিন পড়াশোনা শিখিনি। সবাই বলছে মেয়ে ভাল নম্বর পেয়েছে। আমি খুশি। কিন্তু এরপর কী ভাবে পড়াব ওকে?”

উমার সাফল্যে খুশি স্কুলের শিক্ষকরাও। প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র জানা বলেন, “উমা প্রথম থেকেই পড়াশুনোয় ভাল। এ বার ওর হাত ধরেই প্রথম আমাদের স্কুলের এত ভাল ফল। এমন অভাবেও এই সাফল্য আমাদের স্কুলের দৃষ্টান্ত হয়ে গেল।’’ শুধু পড়া নয় উমা গান গায় খুব ভাল। কিন্তু অর্থাভাবে চর্চা করার সুযোগ হয়নি। তবে স্কুলের এক শিক্ষিকার কাছে রবীন্দ্রসংগীতে তালিম নিয়েছে সে।

নিজের সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে শিক্ষকদের কথাই বলে উমা। এলাকার কোচিং সেন্টারে নিখরচায় পড়ার সুযোগ পেয়েছিল, তাই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ‘‘বারবার মনে পড়ছে আমাদের স্কুলের সৌমেন ঘোষ স্যারের কথা। স্যারের দেওয়া অভিধানটা আমার খুব কাজে লেগেছে’’, বলতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কিশোরী মুখ।

কিন্তু সে মুখই আবার ম্লান স্বপ্ন পূরণ না-হওয়ার বেদনায়, ‘‘একাদশে বিজ্ঞান নিয়েই পড়ব। চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মেডিক্যালে অনেক খরচ। তাই ভাবছি ইঞ্জিনিয়ারিং, তাও যদি না-হয় তবে নার্সিং পড়ব।’’ তবে পাশে আছেন মা। চোখে জল নিয়েই জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, ‘‘রক্ত জল করে যত পারি থালা বানাব। দরকার হলে লোকের কাছে সাহায্য চাইব। তবু মেয়েকে পড়াব।’’ সাহায্য করতে প্রস্তুত পড়শিরাও। স্থানীয় ভ্রমর দুয়া বলেন, “উমা আমাদের গর্ব। আমরা যতটা পারি সাহায্য করার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE