Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জল-বাগানে পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা

সবংয়ের তেমাথানি সংলগ্ন বিবেকনগরে নিজের বাড়ির সামনে গত কয়েক বছর ধরে এমনই জলবাগান গড়েছেন স্কুল শিক্ষক অরিজিৎ দাস অধিকারী।

সবুজ: দোরগোড়ায় বাগানে রকমারি গাছ। —নিজস্ব চিত্র।

সবুজ: দোরগোড়ায় বাগানে রকমারি গাছ। —নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ১৩:১৮
Share: Save:

প্রতি দিন একটু একটু করে কমে আসছে জলাভূমি। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাস্তুজমির প্রয়োজন বাড়ছে। ফলে কোপ পড়ছে জলাভূমিতে। সে জন্য বাস্তুজমির তৈরির সঙ্গেই জলা কী ভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, তা-ই ভাবছিলেন সবংয়ের এক স্কুল শিক্ষক। বাড়ির সঙ্গে পরিবেশবান্ধব জলবাগান তৈরি করেছেন তিনি। বাঁচানোর চেষ্টা করছেন পরিবেশের ভারসাম্য।

সবংয়ের তেমাথানি সংলগ্ন বিবেকনগরে নিজের বাড়ির সামনে গত কয়েক বছর ধরে এমনই জলবাগান গড়েছেন স্কুল শিক্ষক অরিজিৎ দাস অধিকারী। বছর পাঁচেক আগে সবংয়ে বাড়ি করেছেন অরিজিৎবাবু। আর বাড়ির সামনে ১ ডেসিমেল জমিতে তৈরি করেছেন জলবাগান। সেখানে স্ট্রবেরি থেকে কাগজফুলের গাছ লাগিয়েছেন আর সামনেই সিমেন্টের বাঁধানো ছোট্ট জলাধারে চলছে শিঙি, মাগুর, তেলাপিয়া, খলসে, তেরচোখা মাছ চাষ। ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম এবং বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শালুকের সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে জলাধারের পাঁকে। বাড়ির শোভাবর্ধন তো হয়েছেই, সাড়া পড়ে গিয়েছে গোটা ব্লকেও।

পরিবেশবান্ধব জলবাগানটিকে মডেল এ রকম আরও বাগান গড়ার উৎসাহ দিচ্ছেন অরিজিৎবাবু। তার মাধ্যমে দিচ্ছেন পরিবেশ রক্ষার বার্তা। গত কয়েক বছরে ফলও মিলেছে। ইতিমধ্যেই তাঁর বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন বহু মানুষ। সেই সঙ্গে এসেছে অন্যের বাড়িতে এমন বাগান তৈরি করে দেওয়ার আবদার। কেউ আবার পরামর্শ নিয়ে যাচ্ছেন। খুশিমনে সে সব কাজ করে চলেছেন তিনি। বছর তিনেক আগে সবংয়ে থাকাকালীন জলবাগানটি দেখেছিলেন হুগলির গোঘাট-২ ব্লকের বিডিও অরিজিৎ দাস। তিনি বলছেন, “সবংয়ে যুগ্ম বিডিও থাকাকালীন ওই শিক্ষকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। এমন প্রয়াস দেখে খুব ভাল লেগেছিল। কারণ পৃথিবীতে জল কমে আসছে। এই জলবাগানের কথা জানিয়েছি অন্যদের।” সবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমল পণ্ডাও কয়েক দিন আগে অরিজিৎবাবুর বাড়ি ঘুরে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, “খুব ভাল উদ্যোগ। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বাগান গড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। সবাই এ ভাবে ভাবলে অট্টালিকার সঙ্গে জল-সবুজ ঘেরা পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।” উৎসাহী অরিজিৎবাবু জানিয়েছেন, এত দিন তিনি অন্যের বাড়ি গিয়ে গাছ লাগিয়ে আসতেন। এখন মানুষ তাঁর বাড়ি এসে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

প্রথমে সিমেন্টের একটি চৌবাচ্চা তৈরি করেছেন। মাছের সঙ্গে ছেড়েছেন গেঁড়ি, জল পরিশুদ্ধ করতে। তিন ফুট গভীর জলাধারের সামনে বাগানে চলছে ফুল-ফলের চাষ। অরিজিৎবাবু জানান, ২০০১ সাল নাগাদ তমলুকের এক অধ্যাপকের বাড়ির বাগানে বিশেষ টবে শালুক ফুটতে দেখেই পরিকল্পনাটা মাথায় আসে। সবংয়ে নিজের বাড়ির তৈরির পরে পরিকল্পনাটিকে রূপ দিতেই এই প্রয়াস। তবে জলবাগানে মশার উপদ্রব হয় না? তাঁর কথায়, “জলাধারে যাতে মশার ডিম বাড়তে না-পারে সে জন্যই তো খলসে, তেরচোখ মাছ ছেড়েছি। আর জল পরিষ্কার রাখতে গেঁড়ি। বাগানের পরিচর্যা, মাছকে খাবার দেওয়ার কাজে সময় কেটে যায় শিক্ষকের। বাড়ির সৌন্দর্যও বাড়ছে। স্কুলশিক্ষক বলেন, “এ ভাবে যদি পরিবেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে সামিল হওয়া যায়। সেটাই আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

wetlands Gardens Environment Population
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE