Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

কাঁচা নালাই মশার আঁতুড়,নেই নজর

মশা নিধন, শহরের পরিচ্ছন্নতা-সহ মিশন নির্মল বাংলার মতো একাধিক সরকারি কর্মসূচি ঘটা করে পালন হয় ঘাটালে। কিন্তু শহরের ভোল বদলায়নি এতটুকু। চলতি বছর সিংহপুরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫।

শহরের ভিতরেই নালায় জমে আছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

শহরের ভিতরেই নালায় জমে আছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

নালায় জমে যায় নোংরা, তাই নিয়ম করে আসেন সাফাই কর্মীরা। কাদা-মাটি, প্লাস্টিকের প্যাকেট, থার্মোকলের থালা ইত্যাদি নালা থেকে তুলে তাঁরা ‘সযত্নে’ রেখে যান নালার পাশে, রাস্তার উপর। তারপর সে সব নোংরা বৃষ্টির জলে ধুয়ে ধুয়ে ফের চলে যায় নালায়। মাঝখান থেকে রাস্তা নোংরা হয়ে থাকে। বৃষ্টি পড়ে পিছল হয়ে থাকে রাস্তা।

পুরকর্মীরা জানিয়েছেন, জলে ভেজা আবর্জনা বা পাঁক তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো গাড়ি তাদের নেই। তাই তাঁরা চেষ্টা করেন পাঁক শুকিয়ে গেলে তুলে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার পাশে জমে থাকা আবর্জনায় মশার উপদ্রব বা়ড়ছে। নদর্মা থেকে দুর্গন্ধও ছড়ায়।

মশা নিধন, শহরের পরিচ্ছন্নতা-সহ মিশন নির্মল বাংলার মতো একাধিক সরকারি কর্মসূচি ঘটা করে পালন হয় ঘাটালে। কিন্তু শহরের ভোল বদলায়নি এতটুকু। চলতি বছর সিংহপুরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫। ক্রমশ মশার দাপাদাপি বেড়েই চলছে। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছেন ঘাটালবাসী। গত বছর এই ঘাটাল পুর-এলাকাতেই ম্যালোরিয়ায় ও ডেঙ্গির আক্রমণে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। ম্যালোরিয়ায় ১০ আক্রান্ত হয়েছিলেন। ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল ২০ জনের।

স্থানীয় রুইদাস পল্লির বাসিন্দা উর্মিলা দাস, গড়প্রতাপনগরের মিলন পাল অভিযোগ করেন, নালাগুলি থেকে নোংরা তুলে দিয়েই দায় এড়াচ্ছে পুরসভা। ব্লিচিং পাউডার বা মশানাশক তেল স্প্রে করা হয়নি। কামান তো চোখেই দেখিনি।

অথচ, নবান্নের নির্দেশে মশা মারতে মাস তিনেক আগেই আসরে নেমেছিল ঘাটাল পুরসভা। পুরসভার দাবি, ধারাবাহিক ভাবেই ঘাটালের প্রতিটি মহল্লায় ঝোপ-জঙ্গল কেটে সাফ করা হচ্ছে। ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোও হচ্ছে নিয়ম করে। মশানাশক তেল স্প্রেও হচ্ছে। কেনা হয়েছে একটি কামানও। বাসিন্দারা অবশ্য পুর-কর্তৃপক্ষের সচেতনতার অভাব দেখছেন। শহরের দিকে তাকালে সে ছবি চোখেও পড়ে। ডাবের খোলাও পড়ে যেখানে সেখানে, জল জমছে বৃষ্টি হলেই। ফলে মশার দাপট কমেনি। এতে অবশ্য নগরবাসীর সদ্‌ইচ্ছার অভাবও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষও সে কথাই বলেছেন। তাঁর সাফ কথা, “মশা মারতে পুরসভা যথেষ্ট উদ্যোগী। শহরকে আবজর্না মুক্ত করতে আমরা তৎপর। কিন্তু মানুষকেও তো সচেতন হতে হবে।’’

পুরসভায় মোট ১৭টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ন’হাজার পরিবারের বাস। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বস্তি এলাকাগুলোয় সাফাই কর্মীই যান না। ফলে সে সব এলাকায় মশার উৎপাত বাড়ছেই। সংস্কার হওয়ার পরেও নালা, খাল, নয়ানজুলি পানা আর আবর্জনায় ভরে থাকছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ নদর্মাই কাঁচা। সেখানে সারাদিনই মশা উড়ে বেড়ায়। শহরের শুকচন্দ্রপুর, আড়গোড়া, গম্ভীরনগর, চাউলি, সিংহপুর, কৃষ্ণনগর, জয়নগর, সুদামবাটি, গড়প্রতাপনগর, নিশ্চিন্দিপুর এলাকার মানুষও মশার দাপটে জেরবার। শিলাবতীর অন্য পাড়ে কুশপাতা, কোন্নগর, গোবিন্দপুরের অবস্থাও এখই রকম। ভাল করে নালার দিকে তাকালেই দেখা যায় কিলবিল করছে মশার লার্ভা। ফলে এক প্রকার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE